জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন জেলা থেকে কলকাতায় রেফার হওয়া রোগী এবং তার পরিবার। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া শুনে চোখ কপালে সকলের । ২২০০ টাকার ভাড়া এখন ৩৫০০ টাকা। মৃণালের কথায়, কী করে সাধারণ মানুষের পক্ষে এত ভাড়া দিয়ে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব! এব্যাপারে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কথা, “আগে রোগী নিয়ে ২০০০ টাকাতেও কলকাতায় গেছি। কিন্তু বর্তমানে যা অবস্থা তাতে ভাড়া বেশি না নিলে উপায় নেই। ডিজেলেই সব টাকা চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ড্রাইভারের ভাড়া। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই”।
রাজ্যে ৩০এর ডিজেল ১০০ মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস চাল থেকে সবজী সবেতেই আগুন
রাজ্যে ‘সেঞ্চুরি’ ডিজেলের, দু’সপ্তাহে ১০ টাকা বাড়ল জ্বালানির দাম! আর তাতেই মাথায় হাত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স চালকের। গত দু সপ্তাহে কলকাতায় পেট্রলের দাম বেড়েছে ১০.৪৫ টাকা। ডিজেলের দাম বেড়েছে ১০.০৪ টাকা। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, সবজির দাম আগুন। খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ১৫ দিনে ১৪ বার বাড়ল জ্বালানির দাম। লাগাতার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। তার মধ্যে পেট্রোপণ্যে কর কমানো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দায় ঠেলাঠেলি অব্যাহত। মধ্যবিত্তের সুরাহা হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। স্বভাবতই দাম বেড়েছে জ্বালানির। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত বাঙালির। চাল ডাল আনাজ থেকে শুরু করে সবজী সবেতেই যেন আগুন লেগেছে। বাজারমুখো হতে ভয় পাচ্ছেন মধ্যবিত্ত মানুষজন।
সাধারণ মানুষের কথায় “এভাবে রোজ পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ায় প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্তের হেঁসেলে। আগে ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে পরিবারের তিন জনের বাজার করে আনা যেত অনায়াসেই কিন্তু এখন সেই খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। সরষের তেল ১৭০ টাকা, মুরগীর মাংস ২৩০ টাকা প্রতি কেজি। বেগুন, ঢেঁড়স ৫০ টাকা প্রতি কেজি। সেই সঙ্গে মাছের দামও চড়েছে। ভেটকি ৬০০ টাকা, পাবদা, চিংড়ি ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। মানুষের খাবারের জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটেছে। অন্যান্য বিলাসিতা তো দূরের কথা। আগে মাসে তিন বার খাসির মাংস রান্না হত। এখন সেটা একবারে নেমে এসেছে। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন এর পর হয়ত মাসে একবারও খাসির মাংস জুটবে না”।
এদিকে এভাবে জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন জেলা থেকে কলকাতায় রেফার হওয়া রোগী এবং তার পরিবার। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া শুনে চোখ কপালে সকলের । ২২০০ টাকার ভাড়া এখন ৩৫০০ টাকা। মৃণালের কথায়, কী করে সাধারণ মানুষের পক্ষে এত ভাড়া দিয়ে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব! এব্যাপারে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কথা, “আগে রোগী নিয়ে ২০০০ টাকাতেও কলকাতায় গেছি। কিন্তু বর্তমানে যা অবস্থা তাতে ভাড়া বেশি না নিলে উপায় নেই। ডিজেলেই সব টাকা চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ড্রাইভারের ভাড়া। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই”।
এদিকে স্কুল চালু হয়েছে পুরোদমে। মিটেছে পুলকার সমস্যাও। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন পুলকার চালকরা। এক পুলকার চালকদের বক্তব্য , “এমনিতেই এত দিন বেকার বসে ছিলাম। করোনার পর স্কুল চালু হতেই ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার। এখন ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি চালানো অথবা না চালানো দুটোই সমান।
জ্বালনির দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ফুল চাষীরাও। এক “ফুল চাষীর কথায়, ‘এমনিতেই ফুল চাষ করতে জলের প্রয়োজন হয় বেশি। জমিতে পাম্প চালাতে হয়। যেটা ডিজেলে চলে। আগের থেকে বর্তমানে ডিজেলের খরচ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। ফলে মালের দাম বাড়ছে”। সেই সঙ্গে ফলের দামও আকাশছোঁয়া’।
এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘এখন রামজান মাস চলছে। এমনিতেই জিনিস-পত্রের চাহিদা এবং দাম কিছুটা বেশি। এর মধ্যে হটাত করে গত ১৫ দিনে যেভাবে পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে কলকাতা থেকে আমাদের মাল আনার খরচ বেড়ে গেছে। আগে সপ্তাহে তিন দিন কলকাতায় যেতাম। এখন ট্রাকে করে মাল আনার খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে একদিন করেই যাচ্ছি’।
তবে জ্বালানির দাম বাড়লেও বিক্রিতে সেভাবে প্রভাব পড়েনি বলেই জানিয়েছেন এক পাম্প মালিক। তাঁর কথায়, মানুষকে পরিবহন খাতে খরচ বজায় রাখতেই হবে, অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করেও মানুষ পরিবহন খাতে খরচ একই রেখেছেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেছেন আগে যিনি ১০০ টাকার তেল কিনতেন এখন তিনি ১০০ টাকারই তেল কিনছেন তফাৎটা হচ্ছে শুধুমাত্র পরিমাণে।
We hate spam as much as you do