বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার দাবি করেছেন, ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামমোহন।
‘রামমোহন ব্রিটিশের দালাল’: বিজেপি মন্ত্রী ‘বাঙালি বিদ্বেষের' আর এক নজির
১৬ নভেম্বর ২০২৫
রাজা রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের এক মন্ত্রী। তা নিয়ে বাংলায় সরব হয়েছে তৃণমূল। রামমোহনকে নিয়ে এমন মন্তব্যে বিজেপিকে ‘বাংলাবিরোধী’ তকমা দিয়েছে তারা।
উল্টো দিকে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসকদল যে ভাবে ‘বাংলা এবং বাঙালি অস্মিতা’ অস্ত্রে শান দিয়ে ভোটের ভাষ্য তৈরি করার চেষ্টা করছে, সেই আবহে দাঁড়িয়ে এমন মন্তব্যে অস্বস্তিতেই পড়ার কথা বঙ্গ বিজেপির। প্রসঙ্গও এড়াচ্ছেন নেতারা। নেতৃত্বের কেউই এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এ বিষয়ে যা বলার মধ্যপ্রদেশের বিজেপিই বলুক।
মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্বও পারমারের মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। সে রাজ্যে দলের মুখপাত্র শিবম শুক্ল বলেন, ‘‘এটা মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মন্তব্য। যাঁরা এ দেশের জন্য কাজ করেছেন, তাঁদের সকলকেই সম্মান করে বিজেপি। ওঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করছে কংগ্রেস।’’
বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার দাবি করেছেন, ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামমোহন।
তাঁর মতে, ‘‘বাংলা এবং আশপাশের অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে সে সময় মানুষের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য একটি চক্র কাজ কাজ করছিল। ব্রিটিশেরা বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে ভুয়ো সমাজ সংস্কারক হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে এক জন, যিনি ব্রিটিশদের দালাল হিসাবে কাজ করতেন।’’
কেন তিনি এই কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘কেউ যদি তাঁদের (রামমোহন রায়) ধর্মান্তরণের চক্র বন্ধ করার সাহস করে থাকেন, তিনি হলেন বিরসা মুন্ডা। আদিবাসী সম্প্রদায়কে বাঁচিয়েছেন।’’
সমাজ এবং ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে বিশ্বজোড়া পরিচিতি রামমোহনের। বাঙালির উপর তো বটেই, গোটা দেশেই তাঁর প্রভাব অনস্বীকার্য। আধুনিক ভারতীয় নবজাগরণের জনক হিসাবে পরিচিত রামমোহন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের নেপথ্যে কান্ডারি ছিলেন তিনি। তাঁকে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে মন্তব্যের সমালোচনা করে এক্স হ্যান্ডলে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, ‘‘বাংলার মনীষীদের প্রতি বিজেপির ঘৃণার সীমা নেই। তবে এটাই প্রথম বার নয়। ওরা বাংলাকে আগেও অপমান করেছে। বাংলায় অমিত শাহের সমাবেশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। স্বামী বিবেকানন্দকে বিভ্রান্ত বামপন্থী বলে আক্রমণ করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। জেপি নড্ডা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে স্কুলের পাঠ্যবই থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
বিরোধীরা অভিযোগ করেন ‘‘যারা নিজেরা ব্রিটিশদের দালালি করেছে, তারা রামমোহন রায়কে দালাল বলছে। এই জন্যই বিজেপি বাংলাবিরোধী। বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন।’’
We hate spam as much as you do