Tranding

12:18 PM - 01 Dec 2025

Home / North 24 Parganas / আমফানে বিধ্বস্ত বৃদ্ধ মৎস্যজীবির দুরবস্থা, দুয়ারে সরকারে কিছু হল না

আমফানে বিধ্বস্ত বৃদ্ধ মৎস্যজীবির দুরবস্থা, দুয়ারে সরকারে কিছু হল না

একটি ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই সরকার দেয় নি।অশক্ত শরীর এখন আর আগের মতো দেয় না।বসিরহাটে এসে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে জিনিস ফেরী করি।কোন দিন৫০,বড় জোর৭০-৮০টাকা আয় হয়।বৃষ্টি বাদলা হলে পেটে খিল এঁটে ঘরে শুয়ে থাকি।

আমফানে বিধ্বস্ত বৃদ্ধ  মৎস্যজীবির দুরবস্থা, দুয়ারে সরকারে কিছু হল না

আমফানে ঘর হারিয়েছেন। ঠিকানা রেলস্টেশন। তার মাঝেও অসম লড়াই পাঁচ কুড়ি দুইয়ের ধ্রুবরঞ্জনের।

 

আমফানে বিধ্বস্ত বৃদ্ধ  মৎস্যজীবির দুরবস্থা, দুয়ারে সরকারে কিছু হল না

 

 বসিরহাট,১৭সেপ্টেম্বর-দুয়ারে সরকার এলেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অশীতিপর বৃদ্ধ ধ্রুবরঞ্জন মণ্ডলকে।শতবর্ষ পেরিয়েও বার্ধক্য ভাতা সহ কোন সরকারি সাহায্য আজও পান না তিনি।ঘরে নব্বই ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা স্ত্রী নমিতা মণ্ডল।তিনিও পান না বার্ধক্য ভাতা সহ কোন সরকারি সাহায্য। ধ্রুবরঞ্জন বাঁশের ঝুড়ি, কুলো,প্লাস্টিকের নানান জিনিস ফেরী করেন।কখনও বা ভিক্ষা বৃত্তিও তাকে করতে হয়। জুটলে খান,না জুটলে পেটে খিল এঁটে পড়ে থাকতে হয়।শুক্রবার বসিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে এমনই করুন উপাখ্যানের কাহিনী তুলে ধরলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
উত্তর২৪পরগনার হাসনাবাদ থানার ট্যাংরামারি গ্রাম।ডাসা নদীর কোলে ট্যাংরামারি বিধ্বস্ত হয়েছিল বিধ্বংসী আমফানের তান্ডবে।একবছর কাটতে না কাটতে ফের আছড়ে পড়েছিল ইয়াস ঘূর্ণিঝড়।ফি বছর ঝড়ের তান্ডবে নদীবাঁধ ধসে গ্রামকে গ্রাম চলে যায় ডাসার নোনা গ্রাসে।এই ট্যাংরামারি গ্রামে বাস করতেন মৎস্যজীবি ধ্রুবরঞ্জন মণ্ডল।যৌবনে নদীর সাথে পাঞ্জা কষে মাছ,কাঁকড়া ধরতেন।তাতেই সংসার চলে যেত মহানন্দে।অল্প কিছু জমি ছিল বটে।


ছোট মোল্লাখালি,ডান্ডারখালিতে দুই মেয়ের বিয়ে দিতেই জমি বেঁচতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন।দিনমজুরি করে দিন গুজরানো দুই ছেলে তার।লকডাউনে সবদিন কাজ মেলে না।সংসারের জোয়াল টানতে তারাই হিমসিম খাচ্ছে তো আমাদের কী খাওয়াবে?আক্ষেপ ঝরা গলায়১০২বছর বয়সী ধ্রুবরঞ্জন এদিন জানান আমফানে বিধ্বস্ত তার জীবন বৃত্তান্ত।উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে থাকা এই রাজ্যের গ্রামীণ জীবন যে কত অসহায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ধ্রুবরঞ্জন ও তার স্ত্রী নমিতা সহ ট্যাংরামারি গ্রামের শতশত বানভাসিরা।যাদের আজও জোটে নি আমফান,ইয়াসের ক্ষতিপূরণ।


স্পষ্ট দৃষ্টি, মেরুদন্ড সোজা।তথাপি স্পষ্ট অভাবের ছাপ পা থেকে মাথা পর্যন্ত।এ হেন ধ্রুবরঞ্জনের কথায়, আমফান সব কেড়ে নিয়েছে।প্লাস্টিক ছাওয়া দরমার বেড়া দেওয়া একচিলতে ঘর মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ডাসা নদীর নোনা জলের তোড়ে ঘরের যাবতীয় সব ভেসে গেছে।আধার কার্ড,রেশন কার্ড, ভোটের কার্ড কিছুই অবশিষ্ট নেই। 


একটি ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই সরকার দেয় নি।অশক্ত শরীর এখন আর আগের মতো দেয় না।বসিরহাটে এসে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে জিনিস ফেরী করি।কোন দিন৫০,বড় জোর৭০-৮০টাকা আয় হয়।বৃষ্টি বাদলা হলে পেটে খিল এঁটে ঘরে শুয়ে থাকি।


সবদিন খাওয়া হয় না।রেশনে এক মগ চাল পর্যন্ত পাই না।হাসনাবাদ রেল স্টেশন আমার বর্তমান ঠিকানা।কেউ খোঁজ নেয় না।রাজনগরে বাড়ি ছিল।এখন হাসনাবাদে দোতলা পেল্লাই বাড়ি রেশন ডিলার সঞ্জয় ঘোষ।তাকে কত বলেছি।আমার রেশন কার্ডটুকু আজও করে দিল না।দুয়ারে সরকার এলে সেখানে গিয়েছিলাম।ওরা বললো আধার কার্ড না হলে কিছুই হবে না।গ্রামের এক মাস্টার বলেছিল আমফানের কুড়ি হাজার টাকা তুমি পাবে।ভাঙা ঘরের ছবিও নে গেল।কোথায়?কিছুই পেলাম না।শুধু আমি না।আমাদের গ্রামে যান।দেখবেন আমার মতো ট্যাংরামারি গ্রামে দীপঙ্কর সাউ,সন্তোষ পাল,রামপ্রসাদ মণ্ডল, তাপস পরমান্য,সুনীল কুমার পাল আঙনাড়া গ্রামের স্বপনের মণ্ডল, হরিপদ মণ্ডল, রবিন মণ্ডল রাজনগরের কেনারাম ঘোষ, গোবিন্দ মণ্ডল।আরও কত মানুষ!কেউ ক্ষতিপূরণ পায় নি।

 

অভাব অনটনের শানিত ছুরি ধ্রুবরঞ্জন, রামপ্রসাদ,হরিপদ, কেনারামদের বাস্তবের খোলনলচে বুঝিয়ে দিয়েছে!হাজারো প্রশ্নের কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে তাদের জীবন!

Your Opinion

We hate spam as much as you do