গ্রামে কাজের তীব্র হাহাকার।সি পি আই(এম)'র ঘনিষ্ঠ সমর্থক হওয়ার অপরাধে গ্রামে মেলে না একশো দিনের কাজও।গত বিধানসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রের আই এস এফ প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অন্ন দাস,দাদা সুকুমার দাস সহ অন্যান্য পার্টির কর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়। সাম্প্রতিককালে ঘরে ফেরে।সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী।এমতবস্থায় অন্নর স্ত্রী বাধ্য হয়ে বছর চোদ্দর পুত্র ও বছর এগারোর কন্যা সন্তানকে নিয়ে ন্যাজাটে বাপের বাড়িতে বসবাস করে।
সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গলের হামলায় মৎস শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু। আর্থিক অনুদানের দাবী
নিজস্ব সংবাদদাতা:বসিরহাট, ২০জুলাই-- সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে দক্ষিণ রায়ের হামলায় মৃত্যু হল ভূমিহীন এক মৎস্য শ্রমিকের।নাম অন্ন দাস।বয়স আনুমানিক৩৮। মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে সন্দেশখালি-১নং ব্লকের বয়ারমারি-১নং পঞ্চায়েতের খড়িয়াট গ্রামে।অন্যদিকে সন্দেশখালির ন্যাজাট গ্রামে মৃত্যুর খবর পেয়ে অনিশ্চিত জীবনের পথে মৃত মৎস শ্রমিকের স্ত্রী জয়ন্তী দাস, দশম শ্রেণীর ছাত্রী কন্যা অনন্যা দাস এবং সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র পুত্র অমিয় দাস।
গ্রামে কাজের তীব্র হাহাকার।সি পি আই(এম)'র ঘনিষ্ঠ সমর্থক হওয়ার অপরাধে গ্রামে মেলে না একশো দিনের কাজও।গত বিধানসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রের আই এস এফ প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অন্ন দাস,দাদা সুকুমার দাস সহ অন্যান্য পার্টির কর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়। সাম্প্রতিককালে ঘরে ফেরে।সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী।এমতবস্থায় অন্নর স্ত্রী বাধ্য হয়ে বছর চোদ্দর পুত্র ও বছর এগারোর কন্যা সন্তানকে নিয়ে ন্যাজাটে বাপের বাড়িতে বসবাস করে। এ হেন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অন্ন গ্রামে কাজ না পেয়ে জীবন বাজি রেখে সামান্য মজুরিতে মাছ কাঁকড়া ধরতে যায় সুন্দরবনে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোল্লাখালির বাসিন্দা নিকট এক আত্মীয় পাগল।যার বি এল সি তে অন্নরা ১০-১২হাজার টাকা মাসিক মজুরিতে প্রতি গণমুখে সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ধরতে যায়।তেমনি বুধবার রওনা দেয় খড়িয়াট গ্রাম থেকে।সাথে যায় গ্রামেরই আরও পাঁচজন মৎস শ্রমিক।
সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলেন পেশায় মৎস শ্রমিক অন্ন দাসরা। নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টে নাগাদ শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি।মাছ কাঁকড়া ধরার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় তারা দক্ষিণ ২৪পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবনের বাগনা ফরেস্ট এলাকায় জঙ্গল ঘেরা নদীর খাঁড়ির পাশে নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম নিচ্ছিল।
সেই সময় গভীর জঙ্গল থেকে দক্ষিণ রায় বেড়িয়ে আসে।অতর্কিতে হামলা চালায় নৌকায়। অন্ন দাসের ঘাড়ে মোক্ষম কামড় বসিয়ে বনের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সাথে সাথে তাঁর অন্য সঙ্গীরা নৌকায় থাকা বাঁশ ও নৌকার দাঁড় দিয়ে বাঘের গায়ে সজোরে আঘাত করলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ওই মৎস্যজীবীকে ফেলে বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। ততক্ষণে অন্ন দাস ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে তোলে নৌকায়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বন দফতরের কর্মীরা ও সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ কর্মীরা। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আলিপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই ঘটনার কথা দুটি গ্রামে পৌঁছাতেই শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা খড়িয়াহাট ও ন্যাজাট গ্রাম। কান্নায় ভেঙে পড়ে অন্নর পরিবার। অন্নর এই অকাল প্রয়ানে গোটা পরিবার অথৈ জলে।ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার অন্ন দাসের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাত।
অন্ন দাসের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার গভীর শোক প্রকাশ করে এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, সন্দেশখালিতে এই ধরনের মৃত্যু এই প্রথম।গ্রামে কাজ পেলে অন্নকে এভাবে বাঘের হাতে প্রাণ দিতে হতো না।অন্নর যে আত্মীয় অন্নকে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মাছ ধরার কাজে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে এই মৃত্যুর দায়ভার নিতে হবে।পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাঘের আক্রমণ মৃত্যু হলে যে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আইন আছে তা অবিলম্বে দিতে হবে।অন্ন দাসের স্ত্রী জয়ন্তী দাসকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি এবং সন্তানদের পড়াশুনার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।তা না হলে অভাবের তাড়নায় অন্নর পরিবারও একদিন হারিয়ে যাবে এই সমাজ থেকে। এছাড়া সাহসীকতার সাথে যে সমস্ত মৎস শ্রমিকরা অন্নকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে তাদেরও পুরস্কৃত করা উচিত সরকারের পক্ষ থেকে।
We hate spam as much as you do