এবারে যাঁকে ভোটে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে ৷ কিন্তু বহু অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও তাঁকে ফের আনা হল । কারণ এছাড়া তৃণমূলের কোনও বিকল্প নেই । বিজেপির কর্মকাণ্ডে সন্দেশখালি গরিব মানুষ প্রথমে ভেবেছিলেন সত্যি সত্যি তাদের আন্দোলনকে মর্যাদা দিচ্ছে । অল্পদিনের মধ্যেই মানুষের সেই ভুল ভেঙেছে । রেখা পাত্রকে জিতিয়ে সংসদে লড়াই করবে বলে দাঁড় করানো হয়েছে নাকি তাকে দাঁড় করিয়ে সেই ইস্যুকে নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করবে কোনটা? মানুষের মনে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ।
লড়াকু নেতা নিরাপদর হাত ধরে লাল ঝান্ডার জয়ের আশায় বসিরহাট
7 এপ্রিল 2024
সিপিএম ভরসা রাখল ক্ষেতমজুর আন্দোলনের নেতা নিরাপদ সর্দারের উপর ৷ এক সময় সন্দেশখালির বিধায়ক ছিলেন তিনি ৷ সাম্প্রতিক সময়ে বারেবারে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে সন্দেশখালি ৷ স্থানীয় মহিলাদের উপর তৃণমূল নেতা, কর্মীদের নির্যাতন থেকে জল, জঙ্গল, জমির অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছে আমজনতা, যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য ৷ এই প্রেক্ষাপটেই একদা বামেদের খাসতালুকে হারানো জমি ফেরানোর লড়াই শুরু করেছে সিপিএম। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার ও তাঁর উপর মিথ্যা মামলার অভিযোগ সিপিএমকে রসদ জুগিয়েছে । একে হাতিয়ার করেই ফের সন্দেশখালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় লাল ঝান্ডা ওড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম।সন্দেশখালি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে ৷ এই আসন সিপিআইয়ের ৷ তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বামফ্রন্টের আলোচনার নিরিখে এই আসন এখন সিপিএমের হাতে এসেছে । আর তাই হারানো জমি পুনরুদ্ধারের কাণ্ডারি নিরাপদ সর্দারকেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করল সিপিএম নেতৃত্ব ।
নিরাপদ সর্দার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন "তৃণমূলের সময়কালে মানুষ এত অত্যাচারিত হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিল না । শুধু সন্দেশখালির একটা ঘটনা গোটা রাজ্যকে শুধু নাড়িয়ে দেয়নি, বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে এই ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । আমি যখন জেলে যাচ্ছি, আমায় যখন বসিরহাট থানায় নিয়ে গিয়েছে, লাল ঝান্ডার মানুষের ভিড়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল । এত পরিমাণ লালদের সমর্থক ছিল কিন্তু তারা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছিল না । আমার জেলে যাওয়া লাল ঝান্ডার মানুষকে অক্সিজেন দিল। সন্দেশখালির মানুষ বিভাজন আগেও চাইত না এখনো চায় না । সেই বিভাজনের প্রচার করছে বিজেপি । বসিরহাট সাব ডিভিশনের বিজেপি ফ্যাক্টর হবে না "
প্রশ্ন হচ্ছে বসিরহাটে কি তৃণমূল বনাম সিপিএমের লড়াই হচ্ছে। নিরাপদ সর্দার তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন তৃণমূল দেখছেন ৷ তৃণমূলের হাল কী দেখুন, যিনি জিতেছিলেন তিনি তারপর কোনও দিন এখানে আসেননি। তিনি তাঁর পেশায় কাজে ব্যস্ত ছিলেন । ভোটে জেতার পর হাওয়া হয়ে গিয়েছিল সাংসদ ৷ এবারে যাঁকে ভোটে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে ৷ কিন্তু বহু অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও তাঁকে ফের আনা হল । কারণ এছাড়া তৃণমূলের কোনও বিকল্প নেই । বিজেপির কর্মকাণ্ডে সন্দেশখালি গরিব মানুষ প্রথমে ভেবেছিলেন সত্যি সত্যি তাদের আন্দোলনকে মর্যাদা দিচ্ছে । অল্পদিনের মধ্যেই মানুষের সেই ভুল ভেঙেছে । রেখা পাত্রকে জিতিয়ে সংসদে লড়াই করবে বলে দাঁড় করানো হয়েছে নাকি তাকে দাঁড় করিয়ে সেই ইস্যুকে নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করবে কোনটা? মানুষের মনে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ।
নিরাপদ সর্দার উল্লেখ করেন " আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের মতো বলি না 5 লক্ষ ভোটে জিতব । আমরা বাস্তব অবস্থা মেনে চলি । আমার জেলে যাওয়া, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা ক্ষেতমজুর আন্দোলন সব মিলিয়ে লাল ঝান্ডা পক্ষে একটা হাওয়া উঠেছে । এবারে মানুষ সব উপেক্ষা করে লাল ঝান্ডা পক্ষে থাকবেন । কারণ তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত, বিজেপি মানুষদের ভাগ করতে চায়। বসিরহাটের মানুষ বিভাজন চায় না, দুর্নীতি চায় না। তাই হাওয়া বইছে বামপন্থার দিকে । নিশ্চই আত্মবিশ্বাস আছে বসিরহাটের মানুষের উপর ৷ যখন লাল ঝান্ডা দুর্বল হয়েছে তারা বারেবারে আমাদের জিতিয়েছে ৷ আমার বিশ্বাস মানুষ এবারেও লাল ঝান্ডাকে জিতিয়ে সংসদে পাঠাবে ৷"
উল্লেখ্য, 2011 সালে নিরাপদ সর্দার সন্দেশখালি বিধানসভা থেকে সিপিএম প্রার্থী হিসেবেই জয়লাভ করেন । এবার তাঁকে দল লোকসভায় প্রার্থী করল । এই কেন্দ্রে 2009 জয়লাভ করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম । এরপরে 2014 সালে ইদ্রিশ আলি ও তারপর নুসরত জাহান জয়লাভ করেন 2019 সালে । এর আগে এই কেন্দ্রে টানা ন'বার লোকসভা ভোটে জয়লাভ করে সিপিআই। ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত থেকে অজয় চক্রবর্তী মতো মানুষ সিপিআই থেকে জিতে এই কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গিয়েছেন।
We hate spam as much as you do