দলবদলের যাওয়া আসা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছেন না। এখানে চটকল এলাকার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে শাসকদলের প্রতি সমর্থন কমেছে। এখন সেই শাসকদলের লোকেরাই বিজেপি হওয়ায় শ্রমিক মধ্যবিত্ত মানুষ বিজেপির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন ।
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন '২১ জগদ্দল বিধানসভায় বাম প্রার্থী নিমাই সাহাকে নিয়ে উন্মাদনা চোখে পড়ার মত। তৃনমুলের নতুন প্রার্থী সোমনাথ শ্যাম।
নিমাই সাহা জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী হয়েছেন । বামফ্রন্ট, গারুলিয়া পৌরসভার পূর্বতন উপ পৌরপ্রধান এবং একমাত্র বাম কাউন্সিলর নিমাই সাহা জগদ্দল বিধানসভায় বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষনার পরই ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা যায়। নিমাই সাহা ওরফে 'সোনাদা' এই সময়ের সঙ্গে মানানসই একজন প্রার্থী।
জগদ্দল বিধানসভা বরাবর বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লকের জন্য সংরক্ষিত। এখানে প্রথমে প্রয়াত মন্ত্রী নীহার বসু জিততেন। তারপর হরিপদ বিশ্বাস বিধায়ক হন। রাজ্যের রাজনৈতিক ধারা অনুসারে গত ২০১১ সালের পর থেকে হরিপদবাবু দুবার তৃনমুলের প্রার্থী পরশ দত্তের কাছে পরাজিত হন। এ বছর পরশবাবু এবং হরিপদবাবু কেউই প্রার্থী নন। এর মধ্যে তৃনমুলের মধ্যে ব্যাপক ভাঙন লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নেতা অর্জুন সিং দল ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হয়েছেন। কার্যত তৃনমুল কংগ্রেস প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
তার মধ্যে যারা লড়াইতে টিকে আছে সেইরকম একজন সোমনাথ শ্যাম তৃণমূলের প্রার্থী ।
তা সত্ত্বেও তৃনমুল কর্মীদের একাংশের হতাশা আছে গত নির্বাচনে লড়াই করে যে দশ বছরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে জেতানোর চেষ্টা করলেন তিনিই ব্রিগেডের মঞ্চে অর্জুন সিং এর সাথে হাত মেলাচ্ছেন ।
গত পৌরসভা নির্বাচনে ওর ওয়ার্ড দখল নেওয়ার জন্য শাসকদল ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ। নিমাই সাহার জন্য জনগন ময়দানে নেমে পড়েন। নিমাইবাবু মার খান তবু বুথ ছাড়েন না। একটা বুথে ভোট বাতিল হয় , পরদিন আবার ভোট হয়। গননার শেষে নিমাই সাহা জিতে যান। বরাবরের সাহসী স্বভাবের নিমাই সাহার অতি সাধারণ জীবনযাপন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গত প্রায় কুড়ি বছর ধরে জনগনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে প্রকৃত জন প্রতিনিধির পরিচয় রেখেছেন। তিনি পাশ্ববর্তী গারুলিয়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৬ এর আগে গারুলিয়া পৌরসভা জগদ্দল বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সোনাদাকে পেয়ে জগদ্দলের বামকর্মীরা খুব খুশি । উৎসাহে চলছে চারিদিকে দেওয়াল লেখার কাজ। বাড়ি বাড়ি ঘোরা।
এই কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও বিজেপির প্রতি স্থানীয় আকর্ষণ কমছে। এতদঅঞ্চলে প্রচুর তৃনমুল কর্মী বিজেপিতে যোগ দেয় , আবার পুনরায় কদিন বাদে কেউ কেউ তৃনমুলে ফিরে আসে। এই বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে অনেকেই দাবীদার বলে শোনা যাচ্ছে । তবে সাংসদ অর্জুন সিং এর ভাইপো সৌরভ সিং এগিয়ে আছে বলে গেছে। তবে আরও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে ।
এই দলবদলের যাওয়া আসা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছেন না। এখানে চটকল এলাকার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে শাসকদলের প্রতি সমর্থন কমেছে। এখন সেই শাসকদলের লোকেরাই বিজেপি হওয়ায় শ্রমিক মধ্যবিত্ত মানুষ বিজেপির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন । বামপন্থীরা এই অবস্থায় তাদের পুরোনো জমি ফিরে পেতে চাইছেন। তাদের প্রচার শ্রমিকের ন্যুনতম বেতন , কারখানায় আন্দোলন, সব হাতে কাজের দাবী এইসব বেসিক জীবনের দাবী নিয়ে ।
২৬শে নভেম্বর সর্বভারতীয় ধর্মঘটে ভালো সাড়া লক্ষ করা গেছে। এছাড়া রান্নার গ্যাসের দাম থেকে কর্মসংস্থান সব কিছু মানুষকে প্রভাবিত করছে। তাই লোকসভা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত। বরং বাম প্রার্থী অনেক বেশি ভোট , মুলত গত কূড়ি বছরের বাম ভোট যার একটা বড় অংশ শুধু গত বছর কেটে গেছে, তা আবার এক যায়গায় হতে পারে। কারন এখন এই অঞ্চলের বিজেপি মুলত তৃনমুলেরই বিচ্ছিন্ন অংশ। বিজেপির কর্মীরা
দীর্ঘ সময় তৃনমুল করেছেন , এইসব কর্মী নেতাদের প্রতি অসন্তোষের কারনে বিজেপির প্রতি নির্ভর করার পর, বর্তমান অবস্থা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
We hate spam as much as you do