Tranding

02:18 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ১৮ই এপ্রিল ডিরোজিওর জন্মদিন। স্বাধীন চিন্তা, দেশপ্রেম, যুক্তিবাদের পথ প্রদর্শক 

১৮ই এপ্রিল ডিরোজিওর জন্মদিন। স্বাধীন চিন্তা, দেশপ্রেম, যুক্তিবাদের পথ প্রদর্শক 

হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও, উনিশ শতকের একজন শিক্ষক। পাশ্চাত্যের নবজাগরণের ছোঁয়ায় এ দেশের তরুণদের মেধা ও মননকে জাগানোর পথ বের করে দিয়ে গেছেন

১৮ই এপ্রিল ডিরোজিওর জন্মদিন। স্বাধীন চিন্তা, দেশপ্রেম, যুক্তিবাদের পথ প্রদর্শক 

১৮ই এপ্রিল ডিরোজিওর জন্মদিন। স্বাধীন চিন্তা, দেশপ্রেম, যুক্তিবাদের পথ প্রদর্শক 

এখনকার প্রজন্মের কাছে ডিরোজিও চর্চা নেই বললেই চলে।
হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও, উনিশ শতকের একজন শিক্ষক। পাশ্চাত্যের নবজাগরণের ছোঁয়ায় এ দেশের তরুণদের মেধা ও মননকে জাগানোর পথ বের করে দিয়ে গেছেন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির  রের সময়টাই,কিছূ তরুণের দল ‘ডি রোজিওর শিষ্য’ বলে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলো। বহুদিনের আঁকড়ে থাকা সংস্কার, গোঁ ড়ামি, যাকে কিনা নিজেদের ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতি বলে জীবনযাপন করছিলেন ভারতবর্ষের বাসিন্দারা।

 নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর অর্থাত্ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশির যুদ্ধ জয়ের পর  বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এরপর কিছুদিন ইংরেজদের কাঠপুতুল হয়ে নবাবি করেছিলিন মীর কাশিম। তারপরেই ইংরেজদের প্রত্যক্ষ শাসনে চলে এলো বাঙালিরা, পরবর্তীতে  ভারতবাসীরা। আর ইংরেজরা প্রবেশ করতে লাগলো ভারতের সর্বক্ষেত্রে। যার ফলে ব্রিটিশরা সামাজিক  আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু যারা বাঙালির উন্নতিই চেয়েছিলেন এরই মধ্যে অন্যতম হলেন এই হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।
  
হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়ো ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল কলকাতার এন্টালি-পদ্মপুকুর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ফ্রান্সিস ডিরোজিয়ো, একজন খ্রিস্টান ইন্দো-পর্তুগিজ অফিস কর্মী, এবং তাঁর মাতা ছিলেন সোফিয়া জনসন ডিরোজিয়ো, একজন ইংরেজ মহিলা।তাঁর আসল পারিবারিক নাম ছিল 'ডি রোজারিয়ো'।
ডিরোজিয়ো ডেভিড ড্রুমন্ডের ধর্মতলা অ্যাকাডেমি স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ  করেছিলেন, সমাজের বিভিন্ন বর্গ থেকে আসা ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং ইউরোপীয় শিশুদের একসঙ্গে সহকর্মীর মতো ব্যবহার করে উদার পদ্ধতির বিশেষ পছন্দের শিক্ষাদানকে ডিরোজিয়ো পরবর্তীকালে প্রশংসা করেছিলেন। যিনি  নামে পরিচিত ছিলেন সেই ডেভিড ড্রুমন্ডের থেকে ডিরোজিয়ো পরবর্তীধর্মীয়
সংশয়বাদ পেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।

ডিরোজিয়ো একজন সফল মেধাবী  ছাত্র ছিলেন, ইন্ডিয়া গেজেট এবং ক্যালক্যাটা জার্নাল সংবাদপত্র তাঁর শিক্ষাগত উৎকৃষ্টতা  এবং ছাত্র নাটকে তাঁর সফল প্রদর্শনের সংবাদ প্রকাশ করেছিল।
উনিশ শতকের প্রথম ভাগে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও পরিচালিত নব্যবঙ্গ আন্দোলনের   অনুগামীদের নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল বলা হয় । স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদে বিশ্বাসী ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সততা, ন্যায়, সত্যানুসন্ধিত্সা, দেশপ্রেম ও পরহিতৈষণার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দিতেন । ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করতে বলতেন । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর এন্টালির বাসভবনে প্লেটোর 'ডেমট্রেজ' সভার আদলে 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন'  নামে একটি সমিতি গঠন

 করেছিলেন । এই সভায় বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা ও বিতর্ক হত । 'জ্ঞানান্বেষণ' 'পার্থেনন','দ্য এনকোয়ার'  ছিল এই সমিতির মুখপত্র । 
নতুনধারার সংস্কৃতি যা হিন্দুধর্ম ও সমাজকে "ধ্বংস" করাই যেন তাদের লক্ষ বলে অনেকে অভিমত পোষণ করতেন । আমূল সংস্কার আন্দোলন উগ্ররূপ ধারণ করায় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । 'ওরিয়েন্টাল ম্যাগাজিন' ও 'সমাচার চন্দ্রিকা' পত্রিকাতে ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের ঘোর বিরোধিতা করা হয় । অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন নি । এই পরিস্থিতির জন্য আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন নেতাগণ ডিরোজিওকে দায়ী করেন । অভিভাবকগণ তাঁদের পুত্রদের হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন । অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিরোজিওকে পদচ্যুত করেন । কিন্তু বাঙালি যুব সমাজের মনে স্বাধীন চিন্তা কারবার ক্ষমতা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা স্পৃহার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তাঁর মূল্য ছিল অপরিসীম ।
এই নবজাগরণের প্রবক্তার মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখের। বহিস্কৃত হবার পরে ডিরোজিও অর্থকষ্টে পড়েন। তখন তিনি ধর্মতলা অ্যাকাডেমিতে পড়াতে যান এবং কলেরায় আক্রান্ত হন। ১৮৩১ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। গির্জা ও খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে তাঁর অভিমতের কারণে পার্ক স্ট্রিটের গোরস্থানে তাকে সমাহিত করতে বাধা দেওয়া হয়। গোরস্থানের ঠিক বাইরে তাকে সমাহিত করা হয়।

Your Opinion

We hate spam as much as you do