Tranding

02:18 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ইমারজেন্সি! তখন ও এখন  (গনতন্ত্রের বিপদ বেড়েছে)

ইমারজেন্সি! তখন ও এখন  (গনতন্ত্রের বিপদ বেড়েছে)

১৯৭৫-এ শাসকদল পলিটিক্যাল সোসাইিটর একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ  কোরে গনতন্ত্রের ওপর আক্রমন নামিয়ে  এনেছিল । মোদির শাসনকালে একইসঙ্গে সিভিল ও পলিটিক্যাল সোসাইিটর  নিয়ন্ত্রণ কােরে আরএসএস-এর পরিকল্পনা মতো ভারতে একটি ‘ হিন্দুরাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠার সংগঠিত ও ধারাবািহক প্রচেষ্টা  চলছে । সরকারে থাকার সুবাদে আরএসএস-এর লােকেরা সেই উদ্দেশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান,  সব ধরেনর মিডিয়া ইত্যাদি  ‘কালচারাল অ্যপারেটাসগুলিকে ব্যবহার  করে ‘হিন্দুত্ববাদী’  মতাদশর্গত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

ইমারজেন্সি! তখন ও এখন  (গনতন্ত্রের বিপদ বেড়েছে)

ইমারজেন্সি! তখন এখন  (গনতন্ত্রের বিপদ বেড়েছে)

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ইন্দিরা গান্ধী যখন ইমারজেন্সি জারী করেলন, তখনও কী হতে যাচ্ছে তা আমার মোত এক কিশোরের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব ছিলনা । ২৬ জুন রাতের দিকেবাড়ির ভালভ সেট রেডিওর দৌলতে, বিবিসি-সর্ট-ওয়েভ-এর শেŀর কমা-বাড়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে, রেডিওতে কান পেতে, অনেক ধৈর্য ধরে শোনার পরে জানা গেল : জয়প্রকাশ নারায়না , মোরারজি দেশাই, অটলিবহারী বাজপেয়ী, জর্জ ফার্নান্ডেজ, জোতির্ময় বসু সহ আরওঅনেককে  গ্রেফতার  করা হয়েছে ।

 

 

তার আগে ১৯৭২ থেকেই পশ্চিমবঙ্গে শ‌ুরু হয়েছে কমিউনিস্ট বিরোধী আধা-ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস । যার বিস্তার ঘটল ইমারজেন্সিতে । ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস শুরু  হয় প্রথম কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে  তারপরে তা নেমে আসে সমাজের সব অংশের মানুষদের ওপর । তখন ঐ বয়েস বুঝতে পারিনি ‘আধা-ফ্যাসিস্ট কেন বলা হচ্ছে ? পরে ফ্যাসিবাদের চর্চা করতে গিয়ে জেনেছিলাম ফ্যাসিস্ট শাসন কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার । ১৯৭২ থেকেই শতাধিক সিপিআইএম কর্মী এলাকা ছাড়া হেয় শুধু আমাদের নৈহাটিতেই আশ্রয় নিয়েছন । কেউ কেউ আমাদের পাড়াতেও । সিপিআইএম নেতা গোপাল বসুও প্রাক্তন বিধায়ক  অজিত বসুর বাড়িতেই প্রায়  ২৫-৩০ জন । গোটা পার্টিটাই তখন একটি পরিবার বিশ্বাস  অর্জনে সক্ষম হয়েছিল । নাহলে ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট  ঐরকম সাফল্য পেল  কিভাবে ? 
ইমারজেন্সির সময় প্রেস সেন্সারিশেপর দাপটে সত্য জানার উপায় ছিলনা । সবই অ্যাকর্ডিং টু ম্যাডামস ডিসায়ার। আকাশবানীর খবর ১৫ মিনিটের মধ্যে  অন্তত ১০ মিনিটের ইন্দিরা-সঞ্জয়ের বানী । বিবিসি ও ভয়েস অফ আমেরিকা  থেকে রেডিয়ো মারফত্ কিছু খবর পাওয়া যেত । প্রেস সেন্সারিশেপর মধ্যেও তখনকার সান্ধ্য ‘গণশক্তি’, ‘সতযুগের’এর ভূমিকা চিরস্মরণীয় । বরুণ সেনগুপ্ত ও গৌরিকেশার ঘোষের গ্রেফতারের সংবাদ ‘গণশক্তি’ ছেপেছিল ‘আনন্দবাজার’ নয় । সারাদেশ ২০৮টি দৈনিক পত্রিকা  ও ১৮৩৪টি সাপ্তাহিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । মাকর্স-এঙ্গেলস-লেনিন থেকে গান্ধী-  রবীন্দ্রনাথ -  নেহরুর উদ্ধৃতি ছাপতে দেওয়া হয়নি । আকাশবাণীতে ১৭টি রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধ কােরে দেওয়া হয়েছিল ।
রেডিওতে কিশোরকুমারের গান বাজানো নিষিদ্ধ ছিল । কোনও কারণ না দেখিয়ে মিসা, ডি-আই-আর যথেচ্ছ প্রয়োগ করা হত ।

১৯৭৬ সালে জানুয়ারি মাসে লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখার সময় সিপিআই(এম) এমপি সোমনাথ চ্যাটার্জি  মহাশয় বলেছিলেন : ‘আমি সরকার পক্ষকে বলতে চাই যে, দেশপ্রেম  ব্যাপারটি আপনাদের একচেটিয়া কারবার নয় এদেশে আমরাও চাই দেশের উন্নতি হোক কিন্তু  কোন পথে দেশ এগবে , তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য ঘটলেই কী বিরোধীদের  ওপর  দেশদ্রোহীর - তকমা লাগিয়ে  দিতে হবে ?’ বাক্যগুলি এতটাই  প্রাসঙ্গিক  যে, ২০১৪ ২০১৯-এর পরে যেকোনো বিজেপি বিরোধী এমপি- এই কথাগুলি  বলতে পারেন কিন্তু এখন বিপদের ব্যাপ্তি গভীরতা অনেকগুন  বেশি

 

 


১৯৭৫- শাসকদল পলিটিক্যাল সোসাইিটর একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ  কোরে গনতন্ত্রের ওপর
আক্রমন নামিয়ে  এনেছিল মোদির শাসনকালে একইসঙ্গে সিভিল পলিটিক্যাল সোসাইিটর  নিয়ন্ত্রণ করে আরএসএস-এর পরিকল্পনা মতো ভারতে একটিহিন্দুরাষ্ট্র'প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠার সংগঠিত ধারাবাহিক প্রচেষ্টা  চলছে সরকারে
থাকার সুবাদে আরএসএস-এর  লোকেরা  সেই  উদ্যেশে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসব  ধরনের মিডিয়া ইত্যাদি  ‘কালচারাল অ্যপারেটাসগুলিকে ব্যবহার  করেহিন্দুত্ববাদী’ মতাদশর্গত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আরএসএস-এর শতাধিক শাখা সংগঠন সিভিল সোসাইিটর  বিভিন্ন বগর্ও স্তরে  বিগত কয়েক দশক ধরে, সরকারী প্রতিষ্টানগুলিকে বাদ দিয়ে, ‘হিন্দুত্ববাদী’ মতাদশর্গত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । তার ফলে সিভিল সোসাইটির থেকেও মােদি-সাহ-রা ভালোরকম সমথর্ন পাচ্ছেন । পাশাপাশি ২০১৪-র পর থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন  অরগ্যানগুলির মধ্যে  আরএসএস-এর অনপ্রবেশ লক্ষণীয়ভাবে ক্রমবর্ধমান।। সব ক্ষেত্রেই  যে সব বিষয় গণমাধ্যমগুলোর  সামনে আসছে না । সংঘের বৃহত্ পদক্ষেপগুলি শুধু জানা যাচ্ছে  । গভীর রাতে সিবিআই দখল; রামমিন্দর বিষয়ে
হিন্দুত্ববাদের পক্ষে রায়দানের কয়েক মাস পরেই সুপ্রিম  কোর্টের প্রাক্তন  প্রধান  বিচারপতিকে রাজ্যসভায় মনোনীত  করে নিয়ে আসা; নরেন্দ্র মোদির পছন্দের আমলাদের দিয়ে নথর্ব্লকসাউথ ব্লকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা  করা; বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা গুলিকে ব্যবহার  করে সংঘ
পরিবারের তথাকথিত  বিতর্কিত  সন্ত্রাসবাদী কাযর্কলাপের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তদের জামিন বা মুক্তির ব্যবস্থা  করাসরকার  বিরোধী  কথা বলা রাজনৈতিক  কর্মী, সমাজকর্মী, শিল্পীদের যথেচ্ছ এনআইএতে গ্রেফতার করা, ইত্যাদি   ঘটনাক্রম দেখিয় দিচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণের লক্ষ পদ্ধতি এখন অনেক তীব্র মারাত্মক আরএসএস-এর দীর্ঘদিনের  দাবী বাস্তবায়িত করে, বিজেপি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকেই  ধ্বংস করে, তাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে ভারতের সংবিধানের মৌলিক এসেন্সকে ধব্ংস করল । মোদি সরকারের পিছনে রয়েছে ভারতের বিগ বুর্জোয়াজী, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা , আন্তর্জাতিক  লগ্নি পুঁজির মালিকরা, ধনতান্ত্রিক
কৃষি অর্থনীতির নিয়ন্তারা । 


আরএসএস একটি ফ্যাসিস্টিক সংগঠন ও সেই কারণেই তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি
কোনও সাধারণ রাজনৈতিক  দল নয় । ১৯৩৫- জর্জি দিমিত্রভ লিখেছেন  : ‘ফ্যাসিসিমের ক্ষমতায়  আরোহণ  একটি বুর্জোয়া সরকারের বদলে আর একটি বুর্জোয়া সরকারের স্থান অধিকারের মতো সাধারণ ঘটনা নয় হল বুর্জোয়া শ্রেনীর আপন শ্রেনী আধিপত্য  বজায়
রাখার অন্য এক ধরণের রাষ্ট্ররূপ , বুর্জোয়া গনতন্ত্রের বদলে আর এক ধরনের রাষ্ট্ররূপ, প্রকাশ্য সন্ত্রাসবাদীদের  একনায়কত্ব স্থাপন এই পার্থক্য  উপেক্ষা  করাটা  গুরুতর ভুল হবে ’ কিন্তু  এই ভুল অনেকের ক্ষেত্রে যে হয়েছিল  তা স্বীকার করে দিমিত্রভ লিখেছেন : ‘আমাদের মধ্যেই  এমন অনেক লোক ছিলেন যাঁরা ফ্যাসিসিমের বিপদকে অসহনীয়ভাবে খাটাে  করে দেখেছেন । এই
 ঝোঁকটা আজও পযর্ন্ত সর্বত্র কাটিয়ে ওঠা যায়নি ।’ ১৯৭৫-এ ইমারজেনসির  সময়  ভারত গনতন্ত্রের ওপর যে আক্রমন নেমে এসেছিল, তার তুলনায় ১৯১৪-র পর যে আক্রমণের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে  আছি তার পার্থক্য  বোঝা খুব জরুরী । আজকের লড়াই  শুধু  গনতন্ত্রকে রক্ষার লড়াই নয়, সেইসঙ্গে
মতাদশর্গত-রাজনৈতিক-সাংগঠনিকভাবে হিন্দুত্বব্বাদকে পরাজিত করার
লড়াই, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্ররূপকে প্রতিষ্ঠা করার সব রকম প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার লড়াই ।
১৯৭৫-এর থেকে এই লড়াই অনেক অনেক গ‌ুণ কঠিন ।

 

Your Opinion

We hate spam as much as you do