ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে ১৯৩৭ সালে দীনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি। ব্রিটিশ সরকারকে ধোঁকা দিতে পরিকল্পিতভাবে হাতুড়ি শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের ভয়ে এক বছর ‘কাস্তে’ ছাপার মুখ দেখেনি। ১৯৩৮ সালে কবিবন্ধু অরুণ মিত্রের সৌজন্যে তা আনন্দবাজার শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়।
কাস্তে কবির ১০৯ তম জন্মদিনে
দেবনাথ চক্রবর্তী
দীনেশ দাস ছিলেন একজন আধুনিক বিপ্লবিয়ানার নতুন ঘরানার বাঙালি কবি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়বার সময়ে, বারো বছর বয়স থেকে দীনেশ দাস ছড়া লিখতে শুরু করেন। নবম শ্রেণিতে পড়বার সময়ে ১৫ বছর বয়সে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি ১৯৩০ সালে দীনেশ দাস ম্যাট্রিক ও ১৯৩২ সালে আইএ পাস করেন। এরপর ১৯৩৩-৩৪ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। যদিও বিপ্লবী সমিতির কাজ ও কাব্যসাহিত্য চর্চার চাপে বিএ পরীক্ষা দেওয়া হয় না যদিও পরে স্নাতক হন।
১৯৩৪ সালে দীনেশ দাসের প্রথম কবিতা ‘শ্রাবণে’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৫ সালে কার্শিয়াংয়ের খয়াবাড়ি চা বাগানে চাকরিতে যোগ দেন তারপর থেকেই তাঁর চিন্তা চেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে থাকে। কলকাতায় ফিরে ক্ষুরধার ভঙ্গিতে ‘প্রথমবৃষ্টির ফোঁটা’, ‘মৌমাছি’, ‘নখ’, ‘হাই’, ‘চায়ের কাপে’ সহ একে একে নানা কবিতা লিখতে থাকেন যা বৃটিশদের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু তখনও তার কোনো কবিতা সংকলন প্রকাশিত না হওয়া সত্ত্বেও। তাঁর মেধার বিকাশ দেখে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলন গ্রন্থে ‘মৌমাছি’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে ১৯৩৭ সালে দীনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি। ব্রিটিশ সরকারকে ধোঁকা দিতে পরিকল্পিতভাবে হাতুড়ি শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের ভয়ে এক বছর ‘কাস্তে’ ছাপার মুখ দেখেনি। ১৯৩৮ সালে কবিবন্ধু অরুণ মিত্রের সৌজন্যে তা আনন্দবাজার শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়। তারপর পুলিশ তাঁর বাসস্থানে তল্লাশি করে এবং তাঁকে লর্ড সিনহা রোডে আটকে রাখা হয়। ১৯৮২ সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন।
আজ বাংলার এই বরেণ্য কবির ১০৯তম জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।
We hate spam as much as you do