দেশকে নতুন করে গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে পেত্রো দু'হাত আকাশে ছুড়ে যেন বলছেন, “এল পুয়েবলো ইউনিডো, জামাস সেরা ভেনসিডো।” অর্থাৎ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে, জয় হবেই হবে।
গেরিলা যোদ্ধা থেকে রাষ্ট্রপতি, কলম্বিয়ার কুর্সিতে বামপন্থী গুস্তাভো পেত্রো গনভোটের পর জনজোয়ার
21st june 2022
ইতিহাসে এই প্রথম, কলম্বিয়াতে নির্বাচিত বামপন্থী রাষ্ট্রপতি।বামপন্থী নির্বাচনী জোট প্যাক্টো হিস্টোরিকা (হিস্টোরিকাল প্যাক্ট)-র প্রার্থী গুস্তাভো পেত্রো পেয়েছেন ৫০.৪ শতাংশ। বিপরীতে, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণপন্থী হার্নান্ডেজের পক্ষে সমর্থনের হার ৪৭.৩ শতাংশ। অর্থাৎ গুস্তাভো পেত্রো হার্নান্ডেজকে হারিয়েছেন প্রায় সাত লক্ষ ভোটে।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী রবিবার গভীর রাতে উপচে পড়েছে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগাতোর এস্টাডিও নেমেসিও কামাচো স্টেডিয়াম। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে সদ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন বামপন্থীরা । বাম মনোভাবাপন্ন পার্টিগুলোর জোট প্যাক্টো হিস্টোরিকা (হিস্টোরিকাল প্যাক্ট) দখল করেছে কলম্বিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন গুস্তাভো পেত্রো (Gustavo Petro)। তারপর লক্ষ লক্ষ মানুষকে উদ্দেশ্য করে নয়া রাষ্ট্রপতির বার্তা, “আপনারা ইতিহাস লিখেছেন। আমি আপনাদের মর্যাদা রাখব। বড় লোক আর এই দেশে আরও বড় লোক হবে না। যে মানুষ অভাবে কাটাচ্ছেন, তাঁদের ঘরে জ্বলবে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরির রঙমশাল।”
কলম্বিয়া মানে লাতিন আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শক্ত ঘাঁটি। লাতিন আমেরিকায় ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত হলো কলম্বিয়ার সেনাবাহিনী। এর স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অপরিসীম। এক কলম্বিয়াতে রয়েছে সাত-সাতটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। এর সঙ্গেই পেন্টাগন নিয়মিত অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীকে। প্রতিবেশী দেশ ভেনেজুয়েলায় সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য নির্ভর করে কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর। ২০১৯, ভেনেজুয়েলার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে মার্কিন পদক্ষেপে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয় কলম্বিয়ার সেনাবাহিনী। সামরিক খাতে বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপি’র ১২ শতাংশ। রয়েছে ২ লক্ষ ৯৫ হাজারের শক্তিশালী সেনাবাহিনী। লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম।
গত তিন-সাড়ে তিন বছর ধরেই কলম্বিয়ার দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল ক্ষোভ। যা গণ আন্দোলনের রূপ নিয়ে মাঝে মাঝেই আছড়ে পড়ছিল দেশটির বুকে। মূলত ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হচ্ছিল কলম্বিয়া। এই সময়পর্বে অন্তত ৩১ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। সেই তীব্র সরকার বিরোধিতার ফসলই ঘরে তুলেছেন বামেরা।
১৯৬০ সালে কলম্বিয়ার কর্ডোবায় জন্ম পেত্রোর। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি গেরিলা গ্রুপের সদস্য হন। ১৯৯১ সালে তিনি একটি নির্বাচনে চেম্বার অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্য হন। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘদিন বিরোধী দলনেতা ও গেরিলা যুদ্ধের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেশ কিছু সময়ের জন্য তিনি বেগোটার মেয়র পদ সামলেছেন। তাঁর শাসনকালে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর ফলে খুব দ্রুত কলম্বিয়ায় হত্যার ঘটনা হ্রাস পায়।
আবার এখন তাঁর হাতে বিরাট দায়িত্ব। দেশকে নতুন করে গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে পেত্রো দু'হাত আকাশে ছুড়ে যেন বলছেন, “এল পুয়েবলো ইউনিডো, জামাস সেরা ভেনসিডো।” অর্থাৎ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে, জয় হবেই হবে।
We hate spam as much as you do