পরিস্থিতি যখন কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বসেছে, তার মধ্যে গঙ্গাসাগর মেলা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আর সেই মেলা করার স্বপক্ষে রাজ্যের যুক্তি নোনাজলে করোনা ছড়ায় না। এমন কথা অবশ্য ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
নোনা জলে করোনা ছড়ায় না - বললেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। ডাক্তারদের মত কি?
মানুষের লাগামছাড়া ভিড় করোনার বিস্তারে বিশেষ সহযোগী তা সকলেই জানে। তা সত্ত্বেও বারবার প্রশাসন কখনো কুম্ভমেলা, কখনো বড়দিনের ভিড় বা গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিচ্ছে। বিতর্কে কুযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
‘নোনা জলে করোনা ছড়ায় না’, আদালতে গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষে এমনই সওয়াল করেছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল।
এই সময়ে ঝড়ের গতিতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পিছনে নিউইয়ার্স থেকে বড়দিন অথবা কলকাতার ভোটের উচ্ছাস দায়ী কিনা তা পরীক্ষা সাপেক্ষ।
সাম্প্রতিক সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে সেই ভিড়ের অবদান কতটা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে, পরিস্থিতি যখন কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বসেছে, তার মধ্যে গঙ্গাসাগর মেলা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আর সেই মেলা করার স্বপক্ষে রাজ্যের যুক্তি নোনাজলে করোনা ছড়ায় না। এমন কথা অবশ্য ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
এই যুক্তি নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, স্যালাইন ওয়াটার বা নোনা জল আলাদা করে কোনও সুরক্ষা দেয় বলে তাঁর জানা নেই। তিনি জানান, এমনিতে জলের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না। তবে প্রশ্নটা জলের নয়, প্রশ্নটা যে জমায়েতের সে কথা উল্লেখ করেন তিনি।
চিকিৎসক ড. কুণাল সরকার বলেন, আমরা ২ বছরের বেশি সময় ধরে করোনা নিয়ে লড়াই করছি। এমন অনেক যুক্তি শুনেছি। কিন্তু কোনোটাই কাজে লাগেনি। ব্য়াপক হারে সংক্রমণ বেড়েছে। সমুদ্র উপকূলেও করোনা ছড়িয়েছে ভালোই। তাঁর মতে, জনসমাগম যেখানে হবে, সেখানে করোনা ছড়ানোই স্বাভাবিক। যেখানে বিভিন্ন প্রান্ত মানুষ যাবে, তারা কোভিড বহন করে নিয়ে যাবে বলেই দাবি তাঁর। আর তাঁরা কাছাকাছি এলে সংক্রমণ বাড়বে। সব যুক্তি বাদে এটাই সত্যি, বলেন কুনাল।
ড. অভিজিৎ সরকার মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজ্ঞান আর রাজনীতি সরলরেখায় হাঁটে না। তিনি বলেন, ‘আমরা খুশি হতাম যদি শাসক বিরোধী একসঙ্গে বলতে পারতেন, মেলা করব না। হাইকোর্টকেও অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে।’ রাজনীতিকরাই মেলার বিষয়টাকে ধর্মীয় অধিকারের ভাবনা দিয়ে বিচার করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর দাবি, এটা ধর্মীয় অধিকারের কথা ভাবার সময় নয়। এই ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে।
মেলার পক্ষে আর কী যুক্তি থাকছে রাজ্যের? রোটেশনের ভিত্তিতে স্নান ও দর্শনের কথা জানিয়েছে রাজ্য। তাতে সংক্রমণের ভয় কমবে বলেই মত রাজ্যের। ‘সৎকার ঘাটের তালিকাও এ দিয়েছে রাজ্য। এজি গোপাল মুখোরপাধ্য়ায়ের দাবি, তাঁরা গোটা এলাকাকেই কন্টেইনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করবেন খারাপ পরিস্থিতি হলে।
রাজ্যের আরও দাবি, গঙ্গাসাগর মেলার পাশের হাসপাতাল আপাতত ভালই কাজ করছে। সাগরে সবাইকে দ্বিতীয় ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য আশা করছে পাঁচ লক্ষ পূণ্যার্থীর বেশি আসবেন না। উল্লেখ্য, গত বছর কুম্ভমেলা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ব্যাপক হারে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিৎ ছিল বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
We hate spam as much as you do