Tranding

04:43 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / আম্বেদকরের কমিউনিস্ট ভাবনা : ফিরে দেখা

আম্বেদকরের কমিউনিস্ট ভাবনা : ফিরে দেখা

আমরা ধরে নিতেই পারি,বৌদ্ধদর্শনের পর যদি তাঁর আর কোনো দর্শনের প্রতি বিশ্বাস জন্মে থাকে সেটি কমিউনিজম। আজ তাই সময়ের দাবীতেই আম্বেদকরের ভাবনা রূপায়নে সর্বাগ্রগণ্য এদেশের কমিউনিস্ট পার্টিই।

আম্বেদকরের কমিউনিস্ট ভাবনা : ফিরে দেখা

আম্বেদকরের কমিউনিস্ট ভাবনা : ফিরে দেখা 


শঙ্খজিৎ  ১৪এপ্রিল ২০২৩


যোশেফ স্ট্যালিনের প্রতি তার বরাবর এক দুর্বলতা ছিল। ১৯২২ সালে যোশেফ স্ট্যালিন যখন সোভিয়েতের সর্বোচ্চ পদে বসলেন তখন তিনি যেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন ঠিক আবার স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর তিনি উপবাসও রেখেছিলেন। বাবাসাহেব বুঝেছিলেন, একজন চর্মকারের পুত্র কোন এক অদৃশ্য শক্তিবলে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারেন—এই অদৃশ্য শক্তির নাম কমিউনিজম। 


কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপের কথা বলেন,বাবাসাহেব বললেন—ঠিক যেমন বৌদ্ধরা ভিক্ষু সংঘে যোগ দেয় সমস্ত সম্পত্তির মোহ পরিত্যাগ করে। তিনি বুঝতেন,বৌদ্ধদের এবং কমিউনিস্টদের লক্ষ্য এক পথ আলাদা। বৌদ্ধ দর্শন হল অহিংসার মাধ্যমে ভালোবাসার স্পর্শে মানুষকে সমাজ পরিবর্তনের কাছে নিয়ে আসা। সেজন্যই তিনি এস.এ ডাঙ্গে কে চিঠিতে লিখছেন,"আমি মনে করি কমিউনিস্ট দর্শনের কাছাকাছি আমাদের দর্শন।" ১৯৩৮ সালে তিনি ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন কমিউনিস্ট-দের সাথে;তখন তার পার্টির নাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি। 


বাবাসাহেব বিশ্বাস করতেন,"কমিউনিস্টরা দ্রুত সাফল্য লাভ করতে পারে"। তার ভাবনা ছিল আটটি পর্ব সমন্বিত একটি পুস্তক রচনা করার। বইটির নাম হবে "ইন্ডিয়া এন্ড কমিউনিজম"। দুটি পর্ব লেখাও হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫২ সাল;সিডিউল কাস্ট ফেডারেশনের হয়ে লড়েছিলেন বাবাসাহেব। নির্বাচনে পরাস্ত হওয়ার পর বন্ধু দাদাসাহেব গাইকোয়ারকে তিনি চিঠিতে লেখেন," ভাবছি ফেডারেশন ছেড়ে দেব। শুধু তাই নয়,ভাবছি রাজনীতি থেকে অবসর নেব,কিন্তু সেটা সহজ নয়। তা হলেও আমার রাজনৈতিক দর্শন খুব তাড়াতাড়ি মানুষের কল্যাণ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা...আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছচ্ছি যে আমার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করা উচিত"... 

আমরা ধরে নিতেই পারি,বৌদ্ধদর্শনের পর যদি তাঁর আর কোনো দর্শনের প্রতি বিশ্বাস জন্মে থাকে সেটি কমিউনিজম। আজ তাই সময়ের দাবীতেই আম্বেদকরের ভাবনা রূপায়নে সর্বাগ্রগণ্য এদেশের কমিউনিস্ট পার্টিই। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার কৃত ভূমিসংস্কারের ফলে বিরাট অংশের দলিত,আদিবাসী তথা ভূমিজ মানুষ তার আবাদী জমি ফিরে পেয়েছেন। সামাজিক ক্ষমতায়ন ফিরে পেয়েছেন। একথা ভুললে চলবেনা। আর আজ আমাদের বাংলায় এই জাতপাতের বৈষম্যহীন একটা সমাজ গড়ে উঠছে (বাকি ভারতের তুলনায়) তার কারণই বামফ্রন্ট সরকারের নীতি,মানুষের মধ্যে ভেদরেখা মুছে দেওয়ার স্কুল শিক্ষার সিলেবাস। 

ড.আম্বেদকর বলতেন,"গণতান্ত্রিক নীতির অর্থনৈতিক রূপায়ন হল 'সমাজতন্ত্র' বা শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা —যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে না। পুঁজি খাটিয়ে একজন আর একজন কে শোষণ করতে পারবে না। দেশের সমস্ত সম্পদের উপর থাকবে সমস্ত মানুষের সামাজিক মালিকানা।" 

এ হেন আলোকবর্তিকা কে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম...

Your Opinion

We hate spam as much as you do