Tranding

06:02 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / বাম শাসিত কেরল স্বাধীন ভারতে প্রথম চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য, ঘোষনা ১লা নভেম্বর

বাম শাসিত কেরল স্বাধীন ভারতে প্রথম চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য, ঘোষনা ১লা নভেম্বর

রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত করতে পিনারাই বিজয়নের সরকার ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রজেক্ট’ (ইপিইপি) চালু করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুঃস্থ পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা করাই মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুঃস্থ পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করতে তৃণমূল স্তর থেকে সমীক্ষা শুরু করে রাজ্য সরকার। কেরলকে চরম দারিদ্রসীমামুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ করা হয়। ইপিইপি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, রাজ্যে কেউ যেন চরম দারিদ্রসীমার নীচে না থাকেন।

বাম শাসিত কেরল স্বাধীন ভারতে প্রথম চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য, ঘোষনা ১লা নভেম্বর

বাম শাসিত কেরল স্বাধীন ভারতে প্রথম চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য, ঘোষনা ১লা নভেম্বর

১৯ অক্টোবর ২০২৫ 


দেশের ৭৮ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম রাজ্য। বামশাসিত কেরলে চরম দারিদ্রসীমার নীচে থাকবেন না এক জনও। আগামী নভেম্বরে কেরলকে চরম দারিদ্রমুক্ত হিসাবে ঘোষণা করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী ১ নভেম্বর এই ঘোষণা করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী এম বি রাজেশ বলেন, ‘‘দেশের মধ্যে প্রথম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য হতে চলেছে কেরল। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’’

কেরলের দারিদ্রবিরোধী লড়াই

রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত করতে পিনারাই বিজয়নের সরকার ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রজেক্ট’ (ইপিইপি) চালু করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুঃস্থ পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা করাই মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুঃস্থ পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করতে তৃণমূল স্তর থেকে সমীক্ষা শুরু করে রাজ্য সরকার। কেরলকে চরম দারিদ্রসীমামুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ করা হয়। ইপিইপি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, রাজ্যে কেউ যেন চরম দারিদ্রসীমার নীচে না থাকেন।

রাজ্য জুড়ে জরিপ চালিয়ে ৬৪,০০৬টি পরিবারকে ‘অতিদরিদ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে মোট ১,০৩,০৯৯ জন নাগরিক এখন খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন।


রাজ্যের এলএসজিডি মন্ত্রী এম বি রাজেশ জানিয়েছেন, লেফ্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) সরকারের আমলে প্রথম এই লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। তখন স্থির হয় পাঁচ বছরের মধ্যে কেরলকে চরম দারিদ্রসীমামুক্ত হিসাবে ঘোষণা করা হবে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা ১০০ শতাংশ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি।’’


মন্ত্রী জানিয়েছেন, ৬৪ হাজার পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় চরম দরিদ্র হিসাবে চিহ্নিত করার পরই বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিবারগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবারগুলির সমস্ত রকম চাহিদার উপর জোর দেওয়া হয়। তৃণমূল স্তরে সমীক্ষা চালানোর সময় জানা যায়, ৩৫ শতাংশ পরিবারের কোনও উপার্জন নেই। ২৪ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। ২১ শতাংশ পরিবারের দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। ১৫ শতাংশের বাসস্থান নেই। এই সমস্যাগুলিকে চিহ্নিতকরণের পরই দারিদ্রমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রাজেশ।

রাজ্যের স্থানীয় স্বশাসন দফতর (LSGD) পরিচালিত এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল একটাই। যেন কেউই ‘চরম দারিদ্র’ সীমার নীচে না থাকে। খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় এবং বাসস্থান— এই পাঁচটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের দিকেই মূল নজর দেওয়া হয়।


 এম বি রাজেশ জানিয়েছেন, “এই প্রকল্প ছিল বর্তমান এলডিএফ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত। পাঁচ বছরে দারিদ্র নির্মূলের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। আমরা শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছি।”

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ ও প্রশাসনিক সমন্বয়

মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজেই এই প্রকল্পের ধারণা দেন এবং সব দফতরের কার্যক্রম একত্রিত করে অগ্রগতি তদারকি করেন। রাজেশ বলেন, “বিভিন্ন দফতরের উদ্যোগকে মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে একত্রিত করাই এই প্রকল্প সফল হওয়ার মূল কারণ।”

রাজ্যের নানা প্রান্তের যাযাবর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী— যাঁরা আগে সরকারি সাহায্যের কথা জানতেনই না তাঁদেরও আনা হয়েছে এই পরিকল্পনার আওতায়। প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে ‘মাইক্রোপ্ল্যান’। কাউকে চিকিৎসা, কাউকে খাদ্য, কারও ঘর, কারও আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

সংখ্যায় কেরলের সাফল্য

জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যের পাঁচটি প্রধান কারণ ছিল—

৩৫% পরিবারের আয়ের ঘাটতি

২৪% স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

২১% খাদ্যাভাব

১৫% আশ্রয়হীনতা


এই সমস্যাগুলিকে নির্ভরযোগ্যভাবে চিহ্নিত করে ধাপে ধাপে সমাধান করেছে রাজ্য সরকার। এখন পর্যন্ত ৭,০৮৩টি নিরাপদ বাড়ি নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে।

মানবিক সাফল্যের গল্প

ইদুক্কির মাম্কুকাম গ্রামের ৬৭ বছরের দাস রাজ জানিয়েছেন, “আগে টিনের ছাউনি দেওয়া কুঁড়েঘরে থাকতাম। এখন সরকারের সাহায্যে দুই ঘর-এক হল-এক রান্নাঘর-সহ পাকা বাড়ি পেয়েছি।”

আরেক দিকে, কুমারমঙ্গলমের দৃষ্টিহীন রাস্তার গায়ক শি ভার্ঘেস এখনও নতুন বাড়িতে উঠতে পারেননি, কারণ রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব। স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

মন্ত্রী রাজেশ স্বীকার করেছেন, “৬০ হাজারের বেশি পরিবারকে দারিদ্র থেকে মুক্ত করা গেলেও ভবিষ্যতে নতুন পরিবার এই শ্রেণিতে পড়তে পারে। তাই সরকার এখন এই কর্মসূচির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে নতুন প্রকল্প নিয়ে ভাবছে।”

কেরল ইতিমধ্যেই চিনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্যের দাবি করছে। ১ নভেম্বর, রাজ্য প্রতিষ্ঠা দিবসে, এই ঘোষণা হবে আনুষ্ঠানিকভাবে


দেশে শিক্ষার হারে এক সময় শীর্ষে ছিল কেরল। বর্তমানে তা মিজ়োরামের দখলে থাকলেও বড় রাজ্যগুলির মধ্যে এগিয়ে কেরলই।

Your Opinion

We hate spam as much as you do