আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, দেইর আল-বালাহ শহরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক পরিবারের ৯ জন নিহত হন। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের পাশে একটি তাঁবুতে বোমা ফেলে আরও ৩ জনকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, ঘর কিংবা হাসপাতাল—কোনো জায়গাই আর নিরাপদ নয়। আনাদোলুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একই দিনে বিভিন্ন স্থানে ৫৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহতদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন এবং অনেকের কাছে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায় গাজায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৬০ নিহত ফিলিস্তিনি
০৮ এপ্রিল ২০২৫
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া তীব্র বোমাবর্ষণে আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষ নিখোঁজ। আন্তর্জাতিক নিন্দা, শান্তিচেষ্টা—সব কিছু উপেক্ষা করেই চলতে থাকা এই সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতিদিনই বয়ে আনছে নতুন বিপর্যয়।
সংবাদমাধ্যম আনাদোলু ও আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭৫২ জনে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৭ জন। এই সহিংসতা নতুন করে তীব্র হয়ে ওঠে ১৮ মার্চ থেকে, যখন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পুনরায় বিমান হামলা শুরু করে। এরপর থেকে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ৪ লাখের বেশি মানুষ।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, দেইর আল-বালাহ শহরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক পরিবারের ৯ জন নিহত হন। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের পাশে একটি তাঁবুতে বোমা ফেলে আরও ৩ জনকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, ঘর কিংবা হাসপাতাল—কোনো জায়গাই আর নিরাপদ নয়। আনাদোলুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একই দিনে বিভিন্ন স্থানে ৫৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহতদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন এবং অনেকের কাছে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ১৫ মাসের সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। সে সময় গাজায় কিছুটা শান্তি ফিরে এলেও মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে হামাসের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার ইস্যুতে মতানৈক্যের জেরে ইসরায়েল ফের বিমান হামলা শুরু করে। এই সিদ্ধান্ত আবারও পুরো গাজাকে রক্তাক্ত করে তুলেছে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন ধাপে ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ৩৯১ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪৩৪ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধের ফলে গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অঞ্চলটির প্রায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল—কোনো কিছুকেই ছাড় দিচ্ছে না ইসরায়েলি আগ্রাসন। বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই নতুন নতুন শোকের গল্প তৈরি করছে।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার সম্মুখীন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব পদক্ষেপের মাঝেও গাজায় রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না।
We hate spam as much as you do