এই আন্দোলন কৃষকদের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) সম্পর্কে সচেতন করেছে । আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে সরকার আমাদের ফসল কিনে কোনো দয়া করছেন না, বরং এটা আমাদের অধিকার। যদিও এর সুবিধা এখনও বহু কৃষক পাননা,
ভারতবর্ষের এই কৃষক আন্দোলন ও আন্দোলনের রাজনীতি
লেখক - তারিক আনোয়ার (Newsclik এ প্রকাশিত)
অনুবাদ - অনির্বাণ সরকার
_________________________
এই এক বছরের আন্দোলন কৃষকদের জীবনে কি পরিবর্তন আনল
________________________
কৃষি কাজের সংকটের মূল কারণ হিসেবে আগে যেটিকে অবশ্যম্ভাবী বলে ধরে নেওয়া হত
-- ফসল নষ্ট ও ক্রমবর্ধমান কৃষি ঋণ --
এখন উত্তর প্রদেশের কৃষকরা ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন যে একের পর এক সরকার পরিকল্পনামাফিক ধারাবাহিকভাবে কৃষি ব্যবস্থাকে অলাভজনক রেখে গেছে ।
_______________________
একটা উদাহরন দিয়ে শুরু করা যাক।
উত্তর প্রদেশের রামপুর জেলার বিলাসপুর ব্লকের মনিহার খেরা গ্রামে হরেন্দ্র সিংয়ের আড়াই একর জমি আছে । সমগ্র জমিতে তিনি ধান বুনেছেন। ফসল কাটার মাত্র তিন দিন আগে , অক্টোবর মাসের প্রবল বৃষ্টিতে তার ফসল সম্পর্ণূরূর্ণপে নষ্ট হয়ে যায়। ঐ জমিতে তি নি ৩০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
তিনি তাঁর ক্ষতির পরি মাণের হিসেব করে ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে , তাঁর এক একর জমি থেকে ২৫-৩০ কুইন্টাল
ফসল উৎপাদিত হয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ধরে যদি হিসেব কষা যায়, তাহলে মোট ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ১.২১ লাখ থেকে ১.৪৫ লাখ টাকার মধ্যে । (MSP ২০২১-২০২২ সালে র কৃষি বর্ষে সাধারণ প্রকারের জন্য ছিল ১৯৪০ টাকা)
সাধারণ বাজার দর অনযুায়ী (APMC বাজারের বাইরে সংগ্রহমূল্য প্রতি কুইন্টাল ১২০০-১৩০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে ), এই ক্ষতি ৭৫,০০০-৮১,২৫০ টাকার মধ্যে ।
তিনি বলেন, "মনে রাখতে হবে , এটা শুধুএকটা মোটামুটি হিসেব যেখানে শ্রমিকের মজুরি ব্যয়ের উপর সুদ এবং জমির ভাড়া ধরা হয়নি ।"
যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল যে এই প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে তাঁরা কৃষি অর্থনীতির এত খুটিঁনাটি বিষয় (বিনিয়োজিত মূলধনের উপর সুদ, মলূধনের আরোপিত খরচ, জমির ভাড়া, ইত্যাদি ) জানলেন কি করে । তাঁর দ্রুত উত্তর, "দীর্ঘ এক বছরের কৃষক আন্দোলন থেকে ।"
তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) -এর আইনগত প্রতিশ্রুতি র দাবীতে গত বছরের ২৬ শে ডিসেম্বর থেকে দিল্লীর কাছে চারটি জায়গায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন সারা দেশের কৃষকরা। গত বছর থেকে দিল্লীতে ঢোকার তিনটি প্রধান প্রবেশদ্বারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তাঁরা।
এই আন্দোলন সরকারকে বাধ্য করেছে তিনটি আইনকে প্রত্যাহার করতে । ১৯ শে নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন যে এই বিতর্কিত আইনগুলো সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে ।
কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে , নির্বাচনমুখী উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে Newsclick জানার চেষ্টা করেছে যে কৃষক আন্দোলন তাঁদের জীবনে কতটা সচেতনতা ও ঠিক কি কি পরিবর্তন এনেছে ।
ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) - কথাটা প্রতিটি ঘরেরই আজ পরিচিত
বেশিরভাগ কৃষকসহ, হরেন্দ্র নিজেও বলেন যে তাঁরা আগে জানতেন না যে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) তাঁদের অধিকার।
তিনি আরও বলেন, "এই আন্দোলন কৃষকদের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) সম্পর্কে সচেতন করেছে । আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে সরকার আমাদের ফসল কিনে কোনো দয়া করছেন না, বরং এটা আমাদের অধিকার। যদিও এর সুবিধা এখনও বহু কৃষক পাননা, তবে APMC তে অংশগ্রহণকারী কৃষকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে । মুখে সংগ্রহ
বাড়াতে হবে শুধু না বলে সরকারকে তার প্রতিশ্রুতি পালনে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে ।"
৩ রা অক্টোবরের লখিমপুর খেরিতে বিজেপি র এক মন্ত্রীর ছেলের গাড়ির কনভয় আন্দোলনরত কৃষকদের পিষে দিয়ে চলে গেলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা
নেতা তাজিন্দর সিং বার্ক গুরুতর আহত হন। তাঁর মতে উত্তরপ্রদেশের ধান সংগ্রহের চিত্র 'হতাশাজনক'।
এই সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে বলতে উত্তরাখণ্ডে র রুদ্রপুরে তাঁর বাড়িতে বসে তিনি অভিযোগ আনছেন, "কেনাকাটি শুরু হয়ে ছিল ১ লা অক্টোবর থেকে । ৭০ লক্ষ মেট্রি ক টন কেনার কথা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে সরকার কিনেছিল ৪.৯৮ মেট্রিক টন। লক্ষ পূরণ করতে ৪০০০ সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, রাজ্যে মাত্র ১৭১২ টি কেন্দ্র চালু আছে ।"
তিনি আরো বলেন যে দূর্নীতি র সাথে সাথে "কঠোর" ও "অবাস্তব" শর্তের কারণে কৃষকদের কাছে অত্যন্ত কম দামে ফসল বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এমএসপি ১৯৪০ টাকা প্রতি কুইন্টাল হওয়া সত্ত্বে ও তাঁরা ১২৫০-১৩৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল বিক্রি করতে বাধ্য হন।
তিনি অভিযোগ করেন যে কখনও ফসল আর্দ্র কখনও বা অন্যান্য মাপকাঠি যার উপর কৃষকদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সেই সমস্ত ব্যাপারে সামান্য কারিগরী খুটিঁনাটি বের করে কৃষকদের ফসল কিনতে অস্বীকার করা হয়। "৬,৪২,২২৪ জন নিবন্ধভুক্ত কৃষক হওয়া সত্ত্বেও, সরকার মাত্র ৭১,৩৫২ জন নিবন্ধভুক্ত কৃষকদের থেকে ধান কিনেছে ।"
২০ একর জমি র মালিক গুরজীত সিং মনে করেন, এই কৃষক আন্দোলন সরকারের বিদ্যমান বিভিন্ন নীতি সম্পর্কে কৃষকদের ওয়াকিবহাল করছে যাতে আখেরে তাঁদেরই ভালো হবে । তাঁরা এখন নিজেদের অধিকার আদায়ে আগের থেকে আরো বেশি করে সোচ্চার হচ্ছেন।
"এটা একটা চলতি ধারণা যে কৃষি কাজ একটি অলাভজনক ব্যাবসা। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেকে এটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে যে কৃষি কাজ মোটেও অলাভজনক নয়, বরং একের পর এক সরকারে র কৃষি -বিরোধী নীতি একে অলাভজনক করে রেখেছে ।" গুরজীত সিং এর নিজেরও তিনটি ফসল পর পর নষ্ট হয়েছে খারাপ আবহাওয়ার জন্য।
তিনি ৫ একর জমিতে মটর দানা বুনেছেন। বোনার আট দিন পর, বৃষ্টিতে তাঁর বোনা সমস্ত বীজ নষ্ট হয়ে যায়, যার দরুন, ওনার ৭৫,০০০ টাকার ক্ষতি হয়। তিনি আবারও বীজ বোনেন কিন্তু জমিতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ সে ভাবে হয়নি ।
মটর দানার পর উনি ২৫ একর জমিতে ধান চাষ করেন। দূর্ভাগ্যবশত, সেসময় ভয়াবহ বৃষ্টি সমগ্র উত্তর ভারতকে পর্যুদস্ত করে ।
মোট ফসলের শতকরা ৪০ ভাগ নষ্ট হয়ে তাঁর মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৭.৫ লাখ টাকার মতো।
সে তাঁর অবশিষ্ট ফসল কিষান মান্ডিতে (APMC) বিক্রি করতে পারেননি কারণ বন্যার জলে ভিজে গিয়ে ফসল ভিজে প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, "সরকার মারফত ফসল সংগ্রহের জন্য গুনমান বিচারের যে মাপকাঠি থাকে , আমার ফসল তা অর্জন করতে পারে নি । ফসলের আর্দ্রতা ও তাতে অত্যাধিক পরিমাণে পলিমাটি লেগে থাকায়, তার সোনালী রঙ হারিয়ে যায়। কিষান মান্ডির (APMC) বাইরে যে সর্বাধিক দাম আমি পাই, তা হল ৯০০-১০০০ টাকার মধ্যে এবং সেটাও গ্রাহককে অনেক বোঝানোর পর। এখনও আমার বাড়িতে রাখা ট্রলিতে ধান পড়ে আছে । কি করবো বুঝে উঠতে
পারছি না।"
উত্তরাখন্ডের থেকে উত্তর প্রদেশে ঢোকা সারদা নদী তার তীরবর্তী বহু গ্রামকে ভাসিয়ে দেয় কারণ ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে উত্তরাখণ্ডের সারদা বানবাসা ব্যারেজের জল ছাড়া হয়।
যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে প্রধানমন্ত্রীর 'এমএসপি থা, এমএসপি হ্যায় অউর এমএসপি রহেগা' ('এমএসপি ছিল, এমএসপি আছে আর এমএসপি থাকবে ) বক্তব্য সম্পর্কে তিনি কি ভাবছেন। তিনি বলেন এই বড় বড় দাবীর শূন্যতা সম্পূর্ণভাবে উন্মক্তু হয়ে গেছে , অন্তত উত্তর প্রদেশে তো বটেই।
কৃষক আন্দোলন চলাকালীন ৮ ই ফেব্রুয়ারি প্রধামন্ত্রী মোদী রাজ্যসভায় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
গুরজীত সিং পেয়ারা বাগান তৈরিতে বেশ বড় বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য গাছে আশানরূুপ ফল হলনা । এটা ছিল তাঁর ধারাবাহিক ক্ষতির তৃতীয় দিক । গুরজীতের প্রায় ২০ লাখ টাকার ধার আছে , যার অনেকটাই তাঁর বাবার রেখে যাওয়া। বিলাসপুরে তাঁর ফলের বাগানের কাছে কথা বলতে বলতে NewsClick কে তিনি বলেন "কৃষি কাজ হল জুয়া খেলা এবং কৃষক হল বড় জুয়াড়ি , যিনি হয় ব্যাংক নয়তো সুদের কারবারির থেকে টাকা ধার করে তাঁর জমিতে ফসল ফলাতে বিনিয়োগ করবেন বলে । যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাঁকে অতিরিক্ত টাকা ধার করতে হয় আগের করা ধারের সুদ পরিশোধের জন্য। যদি দ্বিতীয়বারেও ফসল নষ্ট হয়, যেটা সাধারণত হয়েই থাকে , তখন তাঁর কাছে দুটি পথ খোলা থাকে - কৃষি জমি বিক্রি করে চিরদিনের জন্য চাষবাস বন্ধ করা, নয়তো আত্মহত্যা করা। জমি বিক্রি একটি সামাজিক কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়; অতএব, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি আত্মহননই সঠিক বলে মনে করেন।"
রামপুর জেলার দেবপুর গ্রামের ৫২ বছর বয়সী আমির আহমদও একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে এই কৃষক আন্দোলন তাঁদের MSP সংক্রান্ত ছোট ছোট বিষয়গুলি পুঙ্খানপুঙ্খভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে । তাঁরা এও বুঝেছে যে কিভাবে কৃষি কাজকে "ধারাবাহিকভাবে " অলাভজনক করে রাখা হয়েছে "যাতে কৃষকদেরকে কর্পোরেটদের দক্ষ শ্রমিকে
পরিণত করা যায়।"
তিনি আরো বলেন, "ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য একের পর এক ক্ষতি , ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা দারিদ্রতাকে আমরা আমাদের ভাগ্যের দোষ হিসেবে ই মেনে নিয়েছি । কিন্তু কৃষক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে যে MSP কি এবং কিভাবে ধারাবাহিকভাবে কৃষিকাজকে অলাভজনক করে রাখা হয়েছে । এই আন্দোলন থেকে গ্রহণ করার মত অনেককিছু আছে । এই আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে যে মানসিক দৃঢ়তা, সহনশীলতা এবং পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার না করাই হল সাফল্যের চাবি ।"
তিনি বলেন যে সরকার সংগ্রহ মূল্য বাড়ানোর বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে , কিন্তু বাস্তবে কৃষকরা খোলা বাজারে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) -এর থেকেও কম দামে তাঁদের ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ।
তিনি ব্যাখা করে বলেন, "আমি ২ একর জমিতে ধান বুনেছিলাম, কিন্তু বৃষ্টি ৯০ শতাংশ ফসলই নষ্ট করে দিয়েছে । ৩৫ কুইন্টাল ফসলের জায়গায় উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ ছিল ৩.৫ কুইন্টাল। সরকার-নির্দিষ্ট কেন্দ্র যখন আমার ফসল কিনতে অস্বীকার করলো, আমাকে তখন একজন ব্যবসায়ীকে ঐ ফসল ১৫০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল বিক্রি করতে হল।"
MSP তে ফসল বিক্রি কি এত সোজা?
তিনি আরো বলেন যে APMC তে গিয়ে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ফসল বিক্রি করা, গেলাম আর ফসল বিক্রি করে এলাম জাতীয় এত সহজ কাজ নয়। প্রত্যেককে এক বিস্তর ও জটিল সরকারি পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সংগ্রহের ক্রিয়াকলাপ শুরু হওয়ার ২ মাস আগেই একজন কৃষককে তাঁর নিজস্ব তহসিলে গিয়ে নিবন্ধিত (registered) হতে হয়।
তারপর সেই আবেদনের পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়, যেটা করতেও অন্তত ২০ দিন সময় লাগে ।
এরপর আবেদনকারী কৃষককে একটি
রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। তহসিল অনযুায়ী রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রে যান, সেখান থেকে তাঁদের ক্রমিক নম্বর ও ফসল সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়।
এইখানেই সব শেষ হয়ে যায়না। আহমদ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ফসল নিয়ে কৃষক যখন নির্দিষ্ট দিনে সংগ্রহ কেন্দ্রে পৌঁছান, সেন্টার -ইন -চার্জ ফসলের গুণমান নিয়ে নানারকম আপত্তি তোলে , সম্ভবত, কৃষককে তিনি বাধ্য করতে চান বেসরকারি মান্ডিতে তাঁর ফসল বিক্রি করতে ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, "যাঁরা সরকারি কেন্দ্রে ফসল বিক্রি করতে সমর্থ হন , তাঁদেরকে ১০০ কিলোগ্রামে র বদলে ৯৫ কিলোগ্রামের দাম দেওয়া হয়। এটা মূলত দূর্নীতি যেখানে কৃষকদের তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থের থেকে বঞ্চিত করা হয় যদি তাঁরা তাঁদের ফসল ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) বিক্রি করতে চান।" তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "সুতরাং, কৃষকদের বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে ফসল বিক্রি করতে হবে , যাঁরা সাথে সাথে নগদে অর্থ প্রদান করে । যদিও তাঁদের ক্ষতি হয়, এতে তাঁদের পরিবহনের খরচ বেঁচে যায়। সরকারি সংগ্রহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয়। সেটি শেষ হয়ে গেলে , বাজারে ফসলের দাম হঠাৎ করে পড়ে যায়।"
তিনি আরো বলেন যে APMC তে গিয়ে ন্যুনতম সহায়ক মূল্যে (MSP) ফসল বিক্রি করা, গেলাম আর ফসল বিক্রি করে এলাম জাতীয় এত সহজ কাজ নয়। প্রত্যেককে এক বিস্তর ও জটিল সরকারি পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সংগ্রহের ক্রিয়াকলাপ শুরু হওয়ার ২ মাস আগেই একজন কৃষককে তাঁর নিজস্ব তহসিলে গিয়ে নিবন্ধিত (registered) হতে হয়।
তারপর সেই আবেদনের পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়, যেটা করতেও অন্তত ২০ দিন সময় লাগে ।
এরপর আবেদনকারী কৃষককে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। তহসিল অনযুায়ী রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রে যান, সেখান থেকে তাঁদের ক্রমিক নম্বর ও ফসল সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়।
এইখানেই সব শেষ হয়ে যায়না। আহমদ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ফসল নিয়ে কৃষক যখন নির্দিষ্ট দিনে সংগ্রহ কেন্দ্রে পৌঁছান, সেন্টার -ইন -চার্জ ফসলের গুণমান নিয়ে নানারকম আপত্তি তোলে , সম্ভবত, কৃষককে তিনি বাধ্য করতে চান ,বেসরকারি মান্ডিতে তাঁর ফসল বিক্রি করতে । তিনি অভিযোগ করে বলেন, "যাঁরা সরকারি কেন্দ্রে ফসল বিক্রি করতে সমর্থ হন , তাঁদেরকে ১০০ কিলোগ্রামে র বদলে ৯৫ কিলোগ্রামের দাম দেওয়া হয়। এটা মূলত দূর্নীতি যেখানে কৃষকদের তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থের থেকে বঞ্চিত করা হয় যদি তাঁরা তাঁদের ফসল ননূ্যতম সহায়ক মল্যে (MSP) বিক্রি করতে চান।" তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "সুতরাং, কৃষকদের বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে ফসল বিক্রি করতে হবে , যাঁরা সাথে সাথে নগদে অর্থ প্রদান করে । যদিও তাঁদের ক্ষতি হয়, এতে তাঁদের পরিবহনের খরচ বেঁচে যায়। সরকারি সংগ্রহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয়। সেটি শেষ হয়ে গেলে , বাজারে ফসলের দাম হঠাৎ করে পড়ে যায়।"
প্রত্যাবর্তন, সারের উপর ভর্তুকি বাড়ানো
২০২০ সালে র এপ্রিল মাসে কেন্দ্র নাইট্রোজেন ভিত্তিক সারের উপর কে জি প্রতি ১৮.৭৮ টাকা ও ফসফরাস ভিত্তিক সারের উপর কেজি প্রতি ১৪.৮৮ টাকা ভর্তুকি কমিয়ে দেয়। যদিও সারের দাম নিয়ে প্রতিবাদে র আঁচ পেয়ে , সরকার পরবর্তীতে শুধু তার আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তাই নয়, ডাই- অ্যামোনিয়াম ফসফেটে র (DAP) উপর ভর্তুকি ১৩৭ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ৫০ কে জি ব্যাগের মূল্য ৫১১.৫৫ টাকা থেকে ১২১১.৫৫ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এমনকি যদিও সার প্রস্তুতকারকরা তাঁদের খুচরো দাম বাড়ায়, কি ন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
কৃষি কাজে নতুন করে তরুণদে র নিয়োগ করা
ঠিকঠাক, স্থায়ী ও ভালো উপার্জনের উৎস হিসেবে না পেয়ে অনেক নবীন আজ কৃষি কাজের উপর উৎসাহ হারাচ্ছে । যার ফলে কৃষি ক্ষেত্রও বিপদের সম্মখুীন হচ্ছে । তাঁরা বড় শহরে বা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে কাজের আশায়।
বরেইলীর বাহেরীর বাসিন্দা তথ্য-প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর করা ২৭ বছর বয়সী যুবক মানবীর সিং দিল্লী-উত্তর প্রদেশের গাজীপুর বর্ডারে কৃষক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য আমেরিকা ভিত্তিক একটি কোম্পানির সিস্টেম অ্যানালিস্ট পদে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল। মাঝারি মাইনের ঐ চাকরি ছেড়ে সে কৃষি কাজে ফিরেছেন ।
এই নবীন, যিনি কৃষকের পুরোনো ছবিকে ভেঙে দিয়েছে , NewsClick কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "পড়াশুনা শেষ করে আমি একটা হোয়াইট কলার চাকরি চেয়েছিলাম এবং পেয়েও গেলাম। যেই না আমি চাকরিতে যোগ দিতে যাবো, আন্দোলন শুরু হয়ে গেলো আর আমি গাজীপুর ও সিংঘুবর্ডারে মাঝে মধ্যেই যাওয়া আসা শুরু করলাম। কৃষক নেতাদের কথা শোনার পর আমি কৃষি -অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম এবং বুঝতে পারলাম যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এটি অনেক লাভজনক হয়ে ওঠে । আমি এও বুঝলাম যে সরকার এই ক্ষেত্রটিকে ধ্বংস করে বড় কর্পোরেটদের সস্তায় শ্রমিক সরবরাহ করার জন্য এই নতুন আইন এনেছে । আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ঐ বড় কোম্পানি র কাজের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে কৃষিকাজের মধ্যে নেমে পড়ার ।
পিলভিটের পুরানপুরের বাসিন্দা কুলবিন্দার সিং কানাডায় চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন শুরু হলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। এই ৩২ বছর বয়সী ব্যক্তি র ৪০ একর জমি আছে , যে টি তাঁর পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট।
সে বলে, "অতিমারিতে কাজ হারিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি । আমাদের এত বেশি জনসংখ্যা যে আমরা বা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাজ পাওয়ার কোনো আশা নেই। আমাদের দেশে যেখানে ১.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মানষু ৩৫ বছরের নিচে , সেখানে একের পর এক সরকার কৃষিক্ষেত্রের বাইরে যথেষ্ট কাজের সংস্থান করতে ব্যর্থ হয়েছে । সুতরাং, কোথাও যাওয়ার থেকে জমিতে কাজ করা অনেক ভালো।"
We hate spam as much as you do