তিনি লিখেছিলেন "I am a socialist not because I think it is a perfect system, but half a loaf is better than no bread."
স্বামী বিবেকানন্দের সমাজ ভাবনা - নবজাগরণের সময়কালের ধর্মপ্রচার
-
---- ১২ জানুয়ারি ২০২৩
প্রত্যেক মহাপুরুষের বিচার করতে হলে তার সময় দেশ সমাজ বিচার করতে হয়। মনে রাখতে হবে বাংলায় তখন নবজাগরণের মধ্যগগন। সবকিছুকে নতুন দৃষ্টিতে দেখে প্রগতিশীল রূপে পরিণত করার প্রচেষ্টা চলছে। ব্রাহ্মণ্যবাদের জোয়াল থেকে বের করে হিন্দু ধর্মকে মুক্ত করার প্রয়াস চলছে। রানী রাসমণি জেলের বৌ , বিধবা মহিলা হয়ে মন্দির তৈরি করছেন। কোনো ব্রাহ্মণ পুজো করবে না বলছে , এগিয়ে আসছেন রামকৃষ্ণদেবের দাদা। পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ । তিনি সমস্ত পুজোর নিয়ম কানুন ভাঙছেন। দেবতাকে আত্মীয় করে তুলছেন। ধর্মকে সহিষ্ণু করে তুলতে চাইছেন। তারই হাতে বিবেকানন্দের নির্মাণ । জানিনা শ্রীরামকৃষ্ণ না থাকলে বিবেকানন্দ হতেন কিনা ! ধর্ম মানে নিয়মের বাঁধনে বেঁধে মানুষকে শোষণ করার যন্ত্র নয়। ধর্ম মানে মানবতার বিকাশ ঘটানো। স্বামীজী সেই সময়ের ধর্ম বিপ্লবী । অথবা বলা যায় ধর্ম সংস্কারক। মাত্র ৩৯ বয়সে চলে না গেলে আরো কি ঘটতে পারতো জানিনা। এই যে liberal Hindu ধর্মের রূপ আমরা বাংলায় দেখতে পাই তার অন্যতম উদ্গাতা স্বামীজী অবশ্যই শ্রীরামকৃষ্ণ, রানী রাসমণি, দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির ।
বিশিষ্ট মার্কসবাদী ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ লিখেছেন -------- " স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সেই বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক যিনি শুধু তাঁর চোখে দেখা ভারতীয় সমাজকে ব্যাখাই করেননি , তার পরিবর্তনও চেয়েছিলেন - এই পরিবর্তন বুদ্ধের স্বপ্নে দেখা প্রাচীন ট্রাইবাল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নয় বরং তিনি দেখেছিলেন একটি আধুনিক, বিজ্ঞান- কেন্দ্রীক , গনতান্ত্রিক ,ধর্মনিরপেক্ষ,
রাজনৈতিক ভারত গড়ে তুলতে। যে বেদান্ত দর্শনের ওপর ভিত্তি করে শঙ্করাচার্য জাত পাত ভিত্তিক সমাজকে সংহত করতে চেয়েছিলেন, তাকেই বিবেকানন্দ ব্যবহার করলেন জাত পাত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষকে সমবেত করতে। তিনি শূদ্র শাসনের তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন যা সর্বহারা শাসনের একটি হিন্দু রূপান্তর ----------
যারা নিজেদের বিবেকানন্দের অনুগামী বলে বর্ননা করেন , কিন্তু তার বিপ্লবী শিক্ষাকে ভুলে যান , আজ তাদের খন্ডন করতে হবে , স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃত তাৎপর্য ব্যাখা করে "
স্বামী বিবেকানন্দের সাথে মার্কসবাদের পরিচয় সেভাবে ঘটেনি। এখনকার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে হয়ত হত। কারন ১৮৪৮ এ কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশ হলেও তা সর্বত্র পৌঁছাতে পারে নি। কিন্তু সেই সময়কালে ইউরোপ জুড়ে শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে শ্রমিক আন্দোলন বাড়ছে। কিন্তু বিবেকানন্দ সেই সময়কালের সমাজতান্ত্রিক চিন্তনের খোঁজ রাখতেন। তিনি লিখেছিলেন
"I am a socialist not because I think it is a perfect system, but half a loaf is better than no bread."
তার মতো করে ভারতবর্ষের উত্থান সম্পর্কে বিবেকানন্দ লিখেছিলেন-----
"Let her arise — out of the peasants’ cottage, grasping the plough; out of the huts of the fisherman, the cobbler, and the sweeper. Let her spring from the grocer’s shop, from beside the oven of the fritter-seller. Let her emanate from the factory, from marts, and from markets. Let her emerge from groves and forests, from hills and mountains."
স্বামী বিবেকানন্দের সঠিক মূল্যায়ন করেই এগোতে হবে। কিন্তু এই বিশাল মাপের মহামানবকে ইতিহাসের চোখ দিয়েই দেখা দরকার । কারন ১৯০২ তে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বিবেকানন্দের প্রয়াণের পর ১৯১৭তে রাশিয়ায় পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পর দুনিয়া জুড়ে সমাজ ভাবনার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার ভাবনা আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতো।
রবীন্দ্রনাথের একটা গান স্বামীজী গাইতে ভালবাসতেন
" তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,
এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা। যেথা আমি যাই নাকো ,তুমি প্রকাশিত থাকো,
আকুল নয়নজলে ঢালো গো কিরণধারা "
We hate spam as much as you do