Tranding

03:30 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / RSS প্রধান যা বলছেন তার অর্থ তিনি বোঝেন?

RSS প্রধান যা বলছেন তার অর্থ তিনি বোঝেন?

আমাদের মনে আছে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান ভবনে ভগবতের বক্তব্য শুনে অনেকেই বলেছিলেন বিশেষ করে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যে আরএসএস এর পরিবর্তন ঘটছে একজন আরএসএস অভ্যন্তরীণ কর্মী মন্তব্য করেছিলেন যে সংঘ ক্রমশ গ্লাস নষ্টের রাস্তায় যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম যে যত সময় গেছে তত আরএসএস তার মূল আগেন্ডার বিভেদমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করছে, যা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

RSS প্রধান যা বলছেন তার অর্থ তিনি বোঝেন?

RSS প্রধান যা বলছেন তার অর্থ তিনি বোঝেন?

অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি
14 Aug 2025

অনুবাদ চিরন্তন গাঙ্গুলী 

২রা অক্টোবর ২০২৫  থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবর্ষ শুরু হচ্ছে এই সময়কালে এই সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। যার মধ্যে তিনটি বক্তৃতামালা আছে যা আগামী ২৬-২৭- ২৮ এ আগস্ট দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে । একইভাবে মুম্বাই , ব্যাঙ্গালোর এবং কলকাতাতেও এই বক্তৃতা মালা অনুষ্ঠিত হবে

আগে ২০১৮ তে আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে তিনটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন এ বছর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এটা চারটে মূল শহরে হবে ।

এর মধ্যে তৃতীয় বক্তৃতা মালায় একটা প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন আছে যেখানে আরএসএস-এর সাথে যুক্ত নয় এমন বহু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে । এরমধ্যে বারো ধরনের আমন্ত্রক আছেন । যার ভিতরে বিদেশি দূতাবাসের কর্মী ,বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও রয়েছে । বিদেশের দূতাবাস ব্যক্তির মধ্যে পাকিস্তান , বাংলাদেশ এবং তুর্কি যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে

 

এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির ছাড়া অন্যান্য দলগুলো যারা নরেন্দ্র মোদি সরকার নিয়ে কিছুটা সমালোচনা করেছে। এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্র্মসূচী  নেওয়া হয়েছে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে হিন্দু সম্মেলন ইত্যাদি রয়েছে।

আমাদের মনে আছে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান ভবনে ভগবতের বক্তব্য শুনে অনেকেই বলেছিলেন , বিশেষ করে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যে আরএসএস এর পরিবর্তন  হচ্ছে । একজন আরএসএস অভ্যন্তরীণ কর্মী মন্তব্য করেছিলেন যে সংঘ ক্রমশ গ্লাসনন্সতের  রাস্তায় যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম যে যত সময় গেছে তত আরএসএস তার মূল আজেন্ডার  বিভেদমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করছে, যা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক কি রকম হবে ? এই বিষয়ে ভগবত বেশ জোরের সাথেই বলেছেন যে  'একজন ব্যক্তি সে হিন্দু নয়, যদি সে বলে ভারতবর্ষে মুসলিমরা থাকতে পারবে না। যারা এই ধরনের গণপিটুনি র সাথে যুক্ত তারা হিন্দুত্ব বিরোধী  । ' সেটা বলার পর কি গরিব মুসলিমদের গণপিটুনি করা বিভিন্ন ঘটনা বন্ধ হয়েছে ? না এটা চলছে ?  ২০২০ তে উত্তরপ্রদেশের শাহরুখ সাইফি থেকে হরিয়ানার লুকমান এর ঘটনা তার প্রমাণ এর সাথে যুক্ত করা যেতে পারে । মুসলিমদের জনবসতির উপর বুলডোজার চালানোর ঘটনা ।

 

আরএসএস সঙ্গীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো এই মুসলিম বিরোধী বিভিন্ন কাজ এবং তাদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করা । যখন সারাদেশে - কভিদ.২০১৯ এ ছড়িয়ে পড়েছে আমরা দেখলাম দিল্লি তবলীগী জমায়েত বন্ধ করবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে  ।

 

মোহন ভগবত  বিবৃতি দিয়েছেন যারা ভারতবর্ষে মুসলিমদের থাকতে দিতে রাজি নয়  , তারা আসলে হিন্দু নয় অথচ যে বিশাল এবং অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি পদ্ধতি NPR ( ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রি, ) যা CAA র পর নেয়া হয়েছে। এবং যা মুসলিম ছাড়া ভারতের আর সব সম্প্রদায়ের লোকদের অন্য পথ দিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া ।
এর প্রতিক্রিয়ায় সাহসী মুসলিম মহিলারা শাহীনবাগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন । দুঃখজনক যে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিজেপির কপিল মিশ্র খোলাখুলি হুমকি দিয়েছিল যে পুলিশ যদি এদের তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা না করে তাহলে মিশ্র এবং তার দলবল এই কাজ করবে  । তারপর দিল্লি হিংসা সংগঠিত হয়েছে এবং একান্নটা নিরপরাধ মানুষের প্রাণ গেছে যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই মুসলিম।

 

এই পথেই আরএসএস সঙ্গীরা ভগবতের নেতৃত্বে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো বিষয়ে এবং তাদের ক্রমশ কোণঠাসা করে দেওয়ার পদক্ষেপ  সমর্থন করেছে  । ২০১৮ যে বক্তৃতা তার লক্ষ্য কি ছিল  , এটা মোটেই GLASNOST  ছিল না অথবা আরএসএসের পরিবর্তিত হওয়ার কোন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না।

 

পরিষ্কারভাবে আরএসএস হিন্দু জাতীয়তাবাদ দেশে প্রতিষ্ঠা করবার কাজ করে চলছে। এরা হয়তো বক্তব্যের মধ্যে এমএস গোলয়ালকরের বক্তব্যকে খানিকটা অস্বীকার করছে , যে হিন্দু জাতির তিনটে আভ্যন্তরীণ হুমকি মুসলিম , খৃষ্টান এবং কমিউনিস্ট ।

 

গত কয়েক দশক পর এই সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র  ভয় এবং প্রান্তিক মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে । এমনকি শুভেন্দু কুলকার্নি খুব জোরের সাথে ঘোষণা করেছেন যে আরএসএস পরিবর্তিত হচ্ছে। আবার একইসঙ্গে
মুসলিমদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে  হাজার হাজার কোটি টাকার মুসলিম সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে অথবা হারিয়েছে, যেগুলোর জন্য সঠিক এফআইআর পর্যন্ত করা হয়নি।

 

সেইসঙ্গে, তিনি প্রশ্ন তোলেন ‘এখানে হিংসা সৃষ্টি , লুটপাট এবং ধর্ষণের বেশিরভাগ  অপরাধীরাই ছাড়া পেয়ে যায়’। অন‍্যদিকে, ‘প্রতিবাদ যেখানে সাংবিধানিক অধিকার সেখানে প্রতিবাদী মুসলমানদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়, পুলিশ গুলি করে মারে, গণগ্রেপ্তার করা হয় এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। ন্যায্যতা কোথায়?”, ।

খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রেও একই ,, তারাও নিম্ন-স্তরের দীর্ঘস্থায়ী হিংসার শিকার হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই  কম প্রভাবের এবং  ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পরিস্থিতি একটি যন্ত্রণাদায়ক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে,

২০২৩ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায়ের একজন নির্যাতিত খ্রিস্টান নেতা বলেছিলেন  "প্রতিদিন আমাদের গির্জা এবং যাজকদের উপর চার বা পাঁচটি আক্রমণ হয়, এবং প্রতি রবিবার এটি দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১০টা পর্যন্ত  পৌঁছে যায় - যা আমরা আগে কখনও দেখিনি",  তার মতে, ভারতে খ্রিস্টান নির্যাতনের প্রধান উৎস হল সংঘ পরিবার, হিন্দু চরমপন্থীদের একটি সংগঠন যার মধ্যে রয়েছে প্রভাবশালী আধাসামরিক এবং মদতদাতা গোষ্ঠী আরএসএস, প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপি এবং বজরং দল, একটি উগ্রবাদী যুব শাখা।

 

কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রে, সমস্ত মানবাধিকার কর্মীদের 'শহুরে নকশাল' হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের অনেকেই ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং এখন মহারাষ্ট্রে একটি নতুন "জনগণের সুরক্ষা বিল" আনা হচ্ছে। এই আইনের ক্ষমতা রাজ্যগুলোকে নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনগুলোকে ইনট‍্যালাকচুয়াল,  লজিস্টিক অথবা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা সংস্থাগুলির উপর নজরদারি, তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

 

আরএসএস তার শাখা (ড্রিল) এবং অনুমোদিত সংগঠনগুলিতে যা প্রচার করে তার ফলাফল হল এই সমস্ত সরকারের গৃহীত নীতি এবং রাস্তার ব‍্যাপক হিংসা।  তাহলে, ২০১৮ সালে এবং এখন ২০২৫ সালে কেন আরএসএস এর এই ধরণের বক্তৃতা?

নিশ্চিতভাবেই, আরএসএসের এজেন্ডা জলের মতো স্পষ্ট এবং গত কয়েক দশক ধরে তা তীব্রতর হয়েছে। এই বক্তৃতাগুলো আরএসএসের এজেন্ডার কুৎসিত দিকটা  আড়াল করার একটি কৌশল মাত্র। যেহেতু তারা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কাজ করছে, যদিও এটি একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা, তাই এটি দেখানো প্রয়োজন যে তাদের হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২০১৮ সালের বক্তৃতা সিরিজের সাথে তুলনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আরএসএস তার প্রধানের মাধ্যমে যা বলছে তা বাস্তবায়নের জন্য নয়, বরং কেবল সমালোচকদের সাথে ভালোভাবে  কৌতুক করার জন্য। আর কে জানে, অন্যান্য দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের আমন্ত্রণ জানানোর সাথে সাথে এটি কোনওভাবে 'অপারেশন লোটাস'-এর সূচনাও হতে পারে? আরএসএস হয়তো অন্যান্য দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের মন জয় করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আসুন অপেক্ষা করি এবং দেখি।।

Your Opinion

We hate spam as much as you do