সম্প্রতি ভারতে গান্ধীর বিরোধিতা বেড়েছে। তাঁকে এখনো সরকারি স্তরে ‘জাতির পিতা’ বলে চিহ্নিত করে নানা সরকারি প্রকল্পের নামকরণ করা হলেও মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তরফে গান্ধীকে হত্যা করার ঘটনাটিকে সমর্থন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নাথুরাম গডসেকে একজন জাতীয় নায়ক বানানোর চেষ্টাও চলছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে নতুন হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রনায়কদের মানুষের সামনে নিয়ে আসতে। কিন্তু সে কাজে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, হিন্দুত্ববাদী নায়কদের অধিকাংশই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। এ অবস্থায়, এখন খোদ গান্ধীর হত্যাকারীকে একজন জাতীয় নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
গান্ধী হত্যার সমর্থনে ছবি.. ভারতে স্বীকৃতি পায় কি করে?
৩০ জানুয়ারি ইন্টারনেটে সিনেমা দেখার একটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মৃত্যু নিয়ে একটি ছবি। ছবিটির নাম ‘হোয়াই আই কিলড গান্ধী’ (কেন আমি গান্ধীকে হত্যা করেছি)। ছবিটি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গান্ধীর হত্যাকারী ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মী নাথুরাম গডসের বক্তব্যকে এ ছবিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গান্ধীকে হত্যা করার জন্য নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয়েছিল।
৩০ জানুয়ারি গান্ধীর মৃত্যুদিন। আর ওই দিনই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই ছবিতে গডসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) এমপি মহারাষ্ট্রের অমল কোহলে। মহারাষ্ট্রে এনসিপি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার চালাচ্ছে। আর সেই জোটেরই একজন নেতা গান্ধীর হত্যাকারীর চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস।
জোটের প্রধান শরিক শিবসেনার নেতা এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে লেখা চিঠিতে কংগ্রেসের মহারাষ্ট্রের নেতা নানা পাটোলে ছবিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুরোধ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘একদিকে গান্ধীজির মৃত্যুর দিনটিকে অহিংসা ও শান্তির দিন হিসেবে পালন করা হয়। আবার অন্যদিকে “কেন আমি গান্ধীকে হত্যা করেছিলাম” মুক্তি পেতে চলেছে। ফলে বৈষম্যকারী অনুভূতি উৎসাহ পাবে।’
সম্প্রতি ভারতে গান্ধীর বিরোধিতা বেড়েছে। তাঁকে এখনো সরকারি স্তরে ‘জাতির পিতা’ বলে চিহ্নিত করে নানা সরকারি প্রকল্পের নামকরণ করা হলেও মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তরফে গান্ধীকে হত্যা করার ঘটনাটিকে সমর্থন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নাথুরাম গডসেকে একজন জাতীয় নায়ক বানানোর চেষ্টাও চলছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে নতুন হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রনায়কদের মানুষের সামনে নিয়ে আসতে। কিন্তু সে কাজে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, হিন্দুত্ববাদী নায়কদের অধিকাংশই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। এ অবস্থায়, এখন খোদ গান্ধীর হত্যাকারীকে একজন জাতীয় নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের একটি সংগঠনও ছবিটির মুক্তির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে। সংগঠনটি চিঠিতে বলেছে, এ ছবিতে নাথুরাম গডসের ভূমিকায় যিনি অভিনয় করছেন, তিনি ভারতের লোকসভার এমপি। তিনি ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ নিয়েছেন। এমপি অভিনীত এ ছবি যদি মুক্তি পায়, তাহলে গোটা জাতি ভেঙে পড়বে।
মহারাষ্ট্রে তিন দলের জোট ক্ষমতায় রয়েছে। এই তিন দল হলো শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস। তাদের সম্পর্ক মাঝেমধ্যেই খারাপ হয় এবং মনে হয়, সরকার ভেঙে যাবে।
সরকার ভেঙে গেলে সুবিধা ভারতীয় জনতা পার্টির। কারণ, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সব দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল তারাই। কিন্তু তারা সরকার গঠন করতে পারেনি শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস জোটবদ্ধ হওয়ায়। এখন এনসিপি নেতার গান্ধী হত্যাকারীর ভূমিকায় অভিনয়ের জেরে যদি জোটের অন্যতম শরিক কংগ্রেস সরকার ছাড়তে বাধ্য হয়, তবে সরকার ভেঙে যাবে। সে ক্ষেত্রে আবার নির্বাচন হবে এবং তাতে লাভ বিজেপির। এ ঘটনা ঘটলে জাতীয় স্তরেও যে বিরোধী ঐক্য বড় ধাক্কা খাবে, তা বলাই বাহুল্য।
We hate spam as much as you do