সন্জীদা খাতুন আজীবন ছিলেন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দেশের সব ধরনের সংকটে সোচ্চার ছিলেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশে মুক্ত সংস্কৃতির মুখ রবীন্দ্র সঙ্গীতজ্ঞ সনজীদা খাতুন প্রয়াত
26th March 2025
বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সনজীদা খাতুন প্রয়াত। সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯১। তিনি বহুদিন ডায়াবেটিস ও কিডনির অসুখে ভুগছিলেন।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সনজীদা মৃত্যুকালে ছিলেন সেটির সভাপতি। পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন এই নারী।
রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চার উদ্দেশ্যে বিশ্বভারতীতে কাটিয়েছেন বহু বছর। বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম সম্মানে ভূষিত করে। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপক। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক এবং বাংলা অ্যাকাদেমি সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানায়। অসুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত দুই দেশের সেতু বন্ধনের কাজ করে গিয়েছেন।
সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট, উদীচী, চারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সন্জীদা খাতুনের বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সন্জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তাঁর বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। সন্জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি।
সন্জীদা খাতুন আজীবন ছিলেন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দেশের সব ধরনের সংকটে সোচ্চার ছিলেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সন্জীদা খাতুন ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁর প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি দীক্ষা নেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতির। প্রথমে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন প্রখ্যাত হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর তিনি শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের কাছ থেকে তালিম নেন।
We hate spam as much as you do