আরও কাছে গিয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে অনিন্দ্য লক্ষ করে সরু তার দিয়ে গলা পেঁচানো । অর্থাৎ সরু তার দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছে কৌস্তবকে , তারপর গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শৌভিক । ফিরে আসে ওরা রিসর্টে
ধারাবাহিক গোয়েন্দা গল্প
সিক্স স্ট্রিংস
শঙ্কর ভট্টাচার্য
( দ্বিতীয় পর্ব )
রবিবার (২৮/১১/২১) প্রকাশের পর --------------------------------------
(৪)
পরদিন সকালে অনিন্দ্যর ঘুম ভাঙে প্রায় সাতটা নাগাদ । একটা সিগারেট ধরিয়ে আর এক কাপ চা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় সে । এখানকার সকালটাও যেন মনোরম । হঠাৎ চোখ যায় জঙ্গলের দিকে । ঐ তিনটে ছেলের মধ্যে দুটো ছেলে খুব হন্তদন্ত হয়ে দৌড়তে দৌড়তে রিসর্টের দিকে আসছে । গেটের কাছে এসে একটি ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়ে । আর একটি ছেলে ওর নাম শৌভিক , চিৎকার করে বলতে থাকে ব আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে । অনেকেই বেরিয়ে আসে ঘর থেকে , দ্রুত পায়ে নেমে আসে অনিন্দ্য ।
ওর কাছ থেকে জানা যায় আজ ভোররাতে ওরা তিনজন জঙ্গলে গিয়েছিল । জঙ্গলে বেশ গভীরে কোনও এক মিষ্টি পাখির দাক শুনে ওদের বন্ধু কৌস্তব সেই দিকে যায় । ওরা অনেকক্ষণ কৌস্তবএর জন্য অপেক্ষা করে ।
ইতিমধ্যে ভোরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লেও জঙ্গলের গভীরে ভীষণ অন্ধকার । কৌস্তবের নাম ধরে বহুবার ডাকাডাকি করবার পরেও ওর কোনও সাড়া পাওয়া যায়না তখন ওরা ভয় পেয়ে যায় এবং ফিরে আসে রিসর্টে ।
রিসর্টে তৎক্ষণাৎ অনিন্দ্য শৌভিকের কাঁধে হাত দিয়ে বলে – “তোমার বন্ধু এখানেই থাক , তুমি নিয়ে চল আমাকে , যেখান থেকে তোমার বন্ধু কৌস্তব নিখোঁজ হয়েছে । কুইক ! শৌভিক হাতে সময় খুব কম ।“
ওরা জঙ্গলের গভীরে যায় । আরও গভীরে, আরও গভীরে । হঠাৎ লক্ষ করে চারিদিক থেকে বেশ কয়েকটা হনুমান একটা নির্দিষ্ট যায়গায় জড়ো হচ্ছে । সেই নির্দিষ্ট স্থানটা লক্ষ করে ওরা এগোতে থাকে । সেখানে পোঁছবার পর ওদের হাড় হিম হয়ে যায় । একটা গাছের ডালে ঝুলছে কৌস্তবের লাশ । আরও কাছে গিয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে অনিন্দ্য লক্ষ করে সরু তার দিয়ে গলা পেঁচানো ।
অর্থাৎ সরু তার দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছে কৌস্তবকে , তারপর গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শৌভিক । ফিরে আসে ওরা রিসর্টে । ফিরতেই দেখে জয় আর মধুমিতা দুজনে গাড়িতে উঠেছে ফিরে যাবে বলে । জয়ের সামনে গিয়ে অনিন্দ্য বলে “ মাফ করবেন ডঃ জয় ! আপনাদের ফেরা হবেনা । চারদিন এই – থেকে সকলের ঢোকা ও বেরনো বন্ধ । “ এই কথা বলে তিনি তার ID Card টা দেখান । কাছেই ছিল ঋত্বিক । তাকে বলে – “সবাইকে বলে দিন ঋত্বিকবাবু এটা আমার নির্দেশ । হ্যাঁ আর সবাইকে জানাই এই রিসর্টে একজন বোর্ডার অর্থাৎ কৌস্তবকে
জঙ্গলের ভিতরে খুন করা হয়েছে” , জয় বলে –“ কিন্তু আমার তো এমারজেন্সি কল এসেছে হসপিটাল থেকে, দরকার পড়লে আপনি হসপিটালে খবর নিয়ে দেখতে পারেন । আমি সব ডিটেইলস আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি । “
অনিন্দ্য ওকে আড়ালে নিয়ে কিছু কথা বলে তারপর জয়ের গাড়ি স্টার্ট দেয় ।
ইতিমধ্যে আর একবার পুলিশকে ঘটনা স্থলে নিয়ে যায় শৌভিক ।
অনিন্দ্য সবাইকে বলে – “আপনারা ভেতরে যান, আরও কোনও বড় বিপদ ঘটার আগেই আমাদের সাবধান হতে হবে ।“
রাতে খবর আসে পরিবারে সাথে ঘুরতে আসা সুন্দরী যুবতী তৃধা নিখোঁজ । ভোরে ওর পরিবার গাড়িতে করে ডুয়ার্সে ঘুরতে বেরিয়েছিল । একটা ঝর্ণা লক্ষ্য করে পাহাড়ের অনেকটা নীচে নেমেছিল তৃধা , আর ফিরে আসেনি । অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয় । ওখানকার স্থানীয় পুলিসকেও খবর দেওয়া হয় । সব বৃথা । তৃধা নিখোঁজ ।
( ৫)
কোলাহল মুখর এই – আজ সারাদিন নিস্তব্ধ ।
মাঝে একটু ব্যাক্তিগত বিবাদের আওয়াজ পাওয়া গেছে ইমন আর দেবলীনার মাঝে । সেই বিবাদের ফয়সালা করেছে চন্দ্রিল আর ঋত্বিক ।
ইমন মাঝে একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল , চিৎকার করে চন্দ্রিল কে বলেছিল “ খুন করে ফেলব শালা “
আসলে এইরকমই চণ্ডালী রাগ ইমনের । রেগে গেলে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে । তাও মিটে গেছে ।
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য সবাইকে একসাথে ডাইনিং হলে আসার নির্দেশ ছিল অনিন্দ্যর । সকলেই এসেছে শুধু বন্ধু হারানো ঐ ছেলেদুটি আর তৃধার বাবা মা বাদে । কেউ জোর করেনি ওদের ।
সারাদিন যে অনিন্দ্য যে কোথায় ছিল তার খবর কেউ রাখেনা । তবে ঘরে ছিলনা বটে ।
যথাসময়ে খাবার ঘরে এসে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে ও বলে “ আমি দুঃখিত সকলের বিড়ম্বনার জন্য । একটু সহযোগিতার আবেদন করছি । সকলেই নিশ্চয় চাইবেন প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ুক । শুধু এইটুকু বলতে পারি কাজ এগোচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন দক্ষতার সাথে সহযোগিতা করছেন “
হঠাতই বিদ্রোহ করে ওঠে বরাহ নগর থেকে প্রায় একমাসের ছুটি নিয়ে জল, হাওয়া , বদলাতে আসা শেখর সেন । চীৎকার করে বলে “ কচু এগোচ্ছে । আমাদের আটকে রেখে ফাজলামি হচ্ছে । প্রতিদিন আমি নিয়ম করে চার কিলোমিটার জঙ্গলে হাঁটি । এই বদমায়েশির জন্য সব বন্ধ । সকলকে এখানে আটকে রেখে ছেনালি হচ্ছে ?”
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে অনিন্দ্যর । আরও উঁচু গলায় বলে “শুনুন আমি অনিন্দ্য ব্যানারজি বলছি । লাল বাজারের সিনিয়র স্পেসাল অফিসার ক্রাইম । অযথা স্মার্ট হবার চেষ্টা করবেন না । চার কিলোমিটার হেঁটে আপনি কোথায় যান সব খবর আমার নখদর্পণে । সময় হলেই হাটে হাঁড়ি ভাঙব ।“
চুপসে যায় শেখর । সকলেই ওর দিকে তাকায় ।
হঠাতই সদর গেটের কাছ থেকে একটা কোলাহল ভেসে আসে । একটু সময় অপেক্ষা না করে অনিন্দ্য ছোটে সে দিকে ।গিয়ে দেখে লোকাল থানা থেকে যে পুলিশ পোস্টিং করা হয়েছে তাদের সাথে আর ঋত্বিকের সাথে এক সুরেশ ভদ্রলোকের বেশ উঁচু গলায় তর্ক চলছে । ব্যাপারটা বোঝে আগে অনিন্দ্য । এই ভদ্রলোক থাকার জন্য ভিতরে আসতে চাইছে আর ওরাও ওকে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর । ভদ্রলোকের নাম সম্রাট ।
অনিন্দ্যর নির্দেশে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয় এবং থাকতেও দেওয়া হয় ।
অনিন্দ্য তাকে এই রিসর্টে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বিবৃত করে ।
(৬)
রাত গভীর হয়েছে । সকলেই যে যার নিজের ঘরে । চোখে ঘুম নেই অনিন্দ্যর । রিসর্টের গেটের সামনে ঘাপটি মেরে বসে আছে একা । সঙ্গী শুধু কোমরে গোঁজা রিভলবার ।
হঠাতই চোখে পড়ে ইমনের ঘরের ভিতরের দিকের ব্যালকনির দরজা খুলে বেরিয়ে এল এক মুখোশ পরা ব্যাক্তি । সজোরে চন্দ্রিল এর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সশব্দে । তারপরেই বেরিয়ে এল ইমন , সে অর্ধ উলঙ্গ । চীৎকার করছে “ শালা পালাবে কোথায় ? চিনে ফেলেছি তোকে আমি । আজ তোকে খুন হতেই হবে ।“
পুরো রিসর্ট জেগে গেছে ততক্ষণে । অনিন্দ্য দৌড়য় সেই দিকে । সোজা চন্দ্রিল এর ঘর । কড়া নাড়ার শব্দ শুনে ঘুমন্ত গলায় বলে – “কে?” । দরজা খুলুন চন্দ্রিল বাবু ! যেন বজ্র হুঙ্কার ।
ততক্ষণে সেখানে হাজির ইমন । হাতে ভাঙা মদের বোতল ।“ ওকে আজ আমি খুন করবই “
ওকে সামলাচ্ছে সম্রাট । ফুঁসছে ও । যুযুৎসুর এক প্যাঁচে ওকে করে হাত থেকে ভাঙা বোতল কেড়ে নেয় সম্রাট । অনিন্দ্য তারিফ করে বলে “ সাবাস সম্রাট বাবূ । ( চলবে )
আগামী শুক্রবার ৩ রা ডিসেম্বর২০২১ সমাপ্য --------------------
We hate spam as much as you do