Tranding

02:15 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / মহামারী দুনিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশুকে শ্রমিকে পরিনত করেছে

মহামারী দুনিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশুকে শ্রমিকে পরিনত করেছে

দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে আমরা নতুনভাবে দেখতে চাই বলে আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে, শিশু ও তাদের পরিবারগুলো ভবিষ্যতে একই ধরনের ধাক্কা সামলে নিতে বিকল্প পথ খুঁজে পায়। মানসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সেবাসহ আরও ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ ইতিবাচক এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।”

মহামারী দুনিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশুকে  শ্রমিকে পরিনত করেছে

মহামারী দুনিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশুকে  শ্রমিকে পরিনত করেছে


লাখ লাখ শিশুকে শ্রমিকে পরিনত করেছে কোভিড-১৯: আইএলও ও ইউনিসেফ এর সমীক্ষা 
শিশু শ্রম যা ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৪০ লাখ কমিয়ে আনা হয়েছে, তা আবারও হুমকির মুখে


আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ এক নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী , কোভিড-১৯ সংকটের ফলশ্রুতিতে লাখ লাখ শিশুকে শিশু শ্রমে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা গত ২০ বছরের অগ্রগতির পর প্রথম শিশু শ্রম বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

 

‘কোভিড-১৯ ও শিশু শ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত শিশু শ্রম ৯ কোটি ৪০ লাখ কমেছে, কিন্তু এই অগ্রগতি এখন প্রশ্নের মুখে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন মধ্যে শ্রমিক  থাকা শিশুদের হয়ত আরও বেশি ঘন্টা  কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বা তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে । তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।

 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর ম্যানেজিং ডিরেক্টর  গাই রাইডার বলেন, “মহামারী পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নিয়ে আসায় কোনো সহায়তা না পেয়ে অনেকেই শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হবে।

 

“সংকটের সময়ে সামাজিক সুরক্ষা অপরিহার্য, যেহেতু তা সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনগোষ্ঠীর সাহায্যে কাজে লাগে । শিশু শ্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রশমনে শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, শ্রমবাজার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সমন্বিতভাবে বৃহত্তর পরিসরে নীতিমালা প্রণয়ন বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়ে শিশু শ্রম বাড়াবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য পরিবারগুলো সম্ভাব্য সকল্ভাবে চেষ্টা করবে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ‍নির্দিষ্ট কিছু দেশে দারিদ্র্য ১ % পয়েন্ট বৃদ্ধিতে শিশু শ্রম তার মধ্যে  অন্তত ০.৭℅ শতাংশ বাড়বে।

 

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “সংকটের সময় অনেক পরিবারই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শিশু শ্রমকে বেছে নেয়।”

 

“দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে আমরা নতুনভাবে দেখতে চাই বলে আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে, শিশু ও তাদের পরিবারগুলো ভবিষ্যতে একই ধরনের ধাক্কা সামলে নিতে বিকল্প পথ খুঁজে পায়। মানসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সেবাসহ আরও ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ ইতিবাচক এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।”

অর্থনৈতিক মন্দায় অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত ও অভিবাসী শ্রমিকদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, জীবনমানের পতন, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতিসহ অন্যান্য চাপ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, “বর্তমান সংকটের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু শ্রম হ্রাসে দারুন কাজ করে আসছিল।

“চলমান মহামারীর কারণে এই অর্জন যেন নস্যাৎ না হয় তা নিশ্চিত করতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের আরও বেশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সময়োচিত এই প্রতিবেদনটি কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাবের ওপর নজর রেখেছে এবং আইএলও, সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সামনে বর্তমান সংকট মোকাবেলার সর্বোত্তম পথ খুঁজে পেতে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছে।”

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, “সবচেয়ে অসহায় শিশুদের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের ওপর কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

“গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকে তাদের আবার স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা ততটাই কমে যায়। আমাদের এখন শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং মহামারীর পুরো সময়জুড়েই তা অব্যাহত রাখা উচিত,” তিনি উল্লেখ করেন।

মহামারীর এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ ধারাবাহিকভাবে আসছে। বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি যখন পুনরায় ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়ত তাদের সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে না।

ফলশ্রুতিতে আরও অনেক শিশু বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিতে বাধ্য হবে। লিঙ্গ বৈষম্য আরও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের কৃষি ও গৃহকর্মে বঞ্চনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে শিশু শ্রম বৃদ্ধির ঝুঁকি মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অধিকতর সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা, দরিদ্র পরিবারের জন্য সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ, বড়দের মানসম্মত কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, স্কুলের বেতন বাতিলসহ শিশুদের স্কুলে ফেরা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, শ্রম পরিদর্শন ও আইন প্রয়োগে সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোও রয়েছে।

একমাত্র ত্রিপক্ষীয় জাতিসংঘ সংস্থা আইএলও ১৯১৯ সাল থেকে ১৮৭টি সদস্য দেশের সরকার, নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের একত্রিত করে শ্রম মান নির্ধারণ, নীতি প্রণয়ন এবং সব নারী ও পুরুষের জন্য মানসম্মত কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে সাহাজ্য করছে ।

Your Opinion

We hate spam as much as you do