নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে মঙ্গলে ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া একটা কঠিন কাজ। এর তুলনায় (MOXIE)-র মাধ্যমে মঙ্গলে অক্সিজেন তৈরি করা অনেক সাশ্র্য়ী ও বাস্তবসম্মত। এমনিতে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ৯৬ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে। (MOXIE) কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে অক্সিজেন অনু আলাদা করে। বাকি কার্বন মনোক্সাইড বজ্য হিসাবে মঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে।
NASAর যন্ত্র মঙ্গলগ্রহে অক্সিজেন তৈরি করবে নাসার পারসিভেয়ারেন্স রোভার মঙ্গল থেকে অক্সিজন বানাবে
মহাকাশ গবেষণার ধারা কি বদলে গেল? এবার থেকে অক্সিজেন তৈরি করা যাবে । মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজনে বের করল পারসিভেরেন্স রোভার।
নাসা মঙ্গলগ্রহে পারসিভেয়ারেন্স রোভার বলে যে মহাকাশযান পাঠিয়েছে, সেটির একটি ছোট্ট যন্ত্র মঙ্গলের কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে তা থেকে অক্সিজেন তৈরি করেছে।
এতদিন অক্সিজেনের অভাবে মঙ্গলে অনেকদিন থাকা সমস্যা হত। পৃথিবী থেকে টানাটানি পড়ত এই জীবনদায়ী গ্যাসের। বহু বছর ধরেই মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকেই অক্সিজেন তৈরির কথা ভাবছিল নাসা।সম্প্রতি সেই কাজ সম্পন্ন করেছে পারসিভেরেন্স রোভার। সাফল্যের বিষয়ে প্রেস বিবৃতি দিয়েছে খোদ নাসা।
যে যন্ত্রটি দিয়ে মঙ্গলগ্রহে অক্সিজেন তৈরি করা হয়েছে, সেটি আকারে একটা পাউরুটি সেঁকার টোস্টারের সমান। এটির নাম Mars Oxygen In-Situ Resource Utilization Experiment (MOXIE)' বা সংক্ষেপে মোক্সি।বাতাস ছেঁকে অক্সিজেন বের করতে সক্ষম হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল এই পরীক্ষা করা হয়েছে। মঙ্গলের দিনের হিসাবে লালগ্রহে পা দেওয়ার ৬০তম মার্সিয়ান ডে-তে এই কাজে করতে সক্ষম হয়েছে যন্ত্র
এই যন্ত্রটি পাঁচ গ্রাম গ্যাস তৈরি করেছে- যা দিয়ে মঙ্গলগ্রহে একজন নভোচারী বড়জোর দশ মিনিট শ্বাস নিতে পারবেন।
নাসার বক্তব্য মঙ্গল থেকেই অক্সিজেন বানাতে পারলে আদতে উপকৃত হবেন মহাকাশচারীরা। এর মাধ্যমে রকেটকে জ্বালানি জোগানো যাবে। একটা সময় এই অক্সিজেনের মাধ্যমেই মহাকাশচারীরা স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস নিতে পারবেন। নাসা-র এই সাফল্যের বিষয়ে Nasa State Tecnology Mission Directorate (STMD) অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম রয়টারস জানান, মঙ্গল পৃষ্ঠে কার্বনডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন বের করা একটা জটিল কাজ। সেই প্রথম পদক্ষেপটা (MOXIE)করতে পেরেছে।এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। যেদিকে গবেষণা এগোচ্ছে, তাতে আগামী দিনে মঙ্গলে মানুষ ঘুরে বেড়াবে।
অনেকেই মনে করেন, মহাকাশে কেবল মানুষেরই শ্বাস নিতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাদের জানা উচিত রকেটেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। রকেটের চালিকা শক্তি হিসাবে (প্রপেলেন্ট) বা অক্সিজেন লাগে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন পাওয়ায় সেই ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। এ প্রসঙ্গে (MOXIE)-র প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর মাইকেল হেক্ট বলেন , রকেট বা মহাকাশচারী সবার জন্যই অক্সিজেন আবশ্যিক। মঙ্গলপৃষ্ঠে ৪জন মহাকাশচারীকে ছাড়তে কোনও রকেটের ১৫ হাজার পাউন্ড (৭ মেট্রিক টন) জ্বালানি প্রযোজন হয়। এছাড়াও ৫৫ হাজার পাউন্ড অক্সিজেন লাগে। যার সিকিভাগ অক্সিজেন লাগে না মহাকাশচারীদের।মঙ্গলে একজন মহাকাশচারীর এক বছর থাকতে ১ মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে মঙ্গলে ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া একটা কঠিন কাজ। এর তুলনায় (MOXIE)-র মাধ্যমে মঙ্গলে অক্সিজেন তৈরি করা অনেক সাশ্র্য়ী ও বাস্তবসম্মত। এমনিতে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ৯৬ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে। (MOXIE) কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে অক্সিজেন অনু আলাদা করে। বাকি কার্বন মনোক্সাইড বজ্য হিসাবে মঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। এই 'কনভারশন প্রসেসে' ১৪৭০ ডিগ্রি ফারনহাইট উত্তাপ প্রয়োজন হয়। সেই তাপ থেকে রক্ষা পেতে (MOXIE) যন্ত্রটিকে প্রথম থেকেই তাপ সহনশীল উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নাসা জানিয়েছে, প্রথমবার ৫ গ্রাম অক্সিজেন বের করতে সক্ষম হয়েছে (MOXIE)। এর মাধ্যমে কোনও মহাকাশচারী ১০ মিনিট অক্সিজেন পেতে পারেন। তবে ১ ঘণ্টায় ১০ গ্রাম অক্সিজেন বের করার ক্ষমতা ধরে এই যন্ত্র।
মহাকাশে যেতে যে রকেট ব্যবহৃত হয়, সেই রকেট চালানোর জন্যও অক্সিজেন লাগে। অক্সিডাইজারের উপস্থিতিতে জ্বালানি পুড়িয়ে রকেট সামনে অগ্রসর হওয়ার গতি অর্জন করে। এই অক্সিডাইজার হিসেবে সাধারণ অক্সিজেনও ব্যবহার করা যায়।
We hate spam as much as you do