নজিরবিহীন ভাবে গতকাল গোটা দেশে একফোঁটা ডিজেল ছিল না, ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল। এরফলে দেশের সমস্ত অফিস - কাছারি, স্কুল - কলেজ, কল - কারখানা সহ সমস্ত কিছুই নিশ্চল হয়ে যায়। প্রাইমারি, ম্যানুফ্যাকচারিং বা টাররসিয়ারি, কোনও সেক্টরই চালু ছিল না। প্রায় আড়াই কোটি জন্যসংখ্যার দেশটিতে আরও একটি মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা যায়। সরকারি হাসপাতালগুলি ইতিমধ্যেই ওষুধের সংকটে সার্জারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
গনবিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ কলম্বো, বেনজির অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলংকায়,
গত কয়েক সপ্তাহে শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক সংকট চরম সীমায় পৌঁছেছে। তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নামেন। রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষের আবাসনের কাছে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা এই সংকটে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করে জঙ্গি আন্দোলনে নেমে পড়ে ও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখানে জনগন ও পুলিশ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ - জনতার খন্ডযুদ্ধ চলাকালীন একটি পুলিশের বাসে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়া একটি পুলিশ জিপ, একটি জলকামানের ট্রাক ও ২টি মোটরবাইকও জ্বালিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। এক এএসপি সহ ৫ পুলিশ অফিসার গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্যারামিলিটারি পুলিশ ইউনিটকে নামানো হয়। নুগেগোড়ার মিরিহানায় এই ঘটনায় ৪৫ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সরকারের অবশ্য এই ঘটনার পিছনে একটি উগ্রপন্থী সংগঠনের হাত দেখছে। শ্রীলংকা সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে : "ঘটনার মূলচক্রিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। এর পিছনে একটি উগ্রপন্থী সংগঠনের হাত রয়েছে।" কিন্তু উগ্রপন্থী সংগঠনের উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়ে রাজাপক্ষ সরকার কীভাবে নিজেদের সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে? গত কয়েক সপ্তাহে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি, গ্যাস ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকট দেখা গিয়েছে। স্বাধীনতার পর এইরকম আর্থিক মন্দা শ্রীলংকায় দেখা যায়নি।
নজিরবিহীন ভাবে গতকাল গোটা দেশে একফোঁটা ডিজেল ছিল না, ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল। এরফলে দেশের সমস্ত অফিস - কাছারি, স্কুল - কলেজ, কল - কারখানা সহ সমস্ত কিছুই নিশ্চল হয়ে যায়। প্রাইমারি, ম্যানুফ্যাকচারিং বা টাররসিয়ারি, কোনও সেক্টরই চালু ছিল না। প্রায় আড়াই কোটি জন্যসংখ্যার দেশটিতে আরও একটি মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা যায়। সরকারি হাসপাতালগুলি ইতিমধ্যেই ওষুধের সংকটে সার্জারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
গতকাল বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় কোনও বিভাগে রোগীরা পরিষেবা পাননি। মোবাইল ফোনের বেস স্টেশনগুলিতেও এর প্রভাব পড়ে যার ফলে মানুষ ফোনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ টুকু করতে পারেনি। স্টক মার্কেটেও অবধারিত ভাবে এর প্রভাব পড়েছে।
পরিবারতন্ত্র একটি দেশকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তার সাক্ষী থাকল শ্রীলংকাবাসী। রাষ্ট্রপতির মেজদা মহিন্দ রাজাপক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বড়দা চমল রাজাপক্ষ কৃষিমন্ত্রী ও ছোটভাই বাসিল রাজাপক্ষ অর্থদপ্তরের দায়িত্বে। রাষ্ট্রপতির ভাইপো নমল রাজাপক্ষ আবার ক্রীড়াবিভাগের ক্যাবিনেট মন্ত্রী।
এই চরম সংকটে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনগণকে পুলিশ হটাতে গেলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। বোতল, ইঁট ইত্যাদি পুলিশের দিকে উড়ে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জল কামানের স্মরণাপন্ন হয়। অর্থনীতিবিদরা এই সংকটের জন্যে ২০২০ সালের মার্চে নেওয়া সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছেন। তখন শ্রীলংকার ৫১০০ কোটি ডলার দেনা। তার থেকে বেরিয়ে আসতে সমস্ত ধরণের আমদানি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা যায় ও অবধারিত ভাবে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি দেখা দেয়। এর থেকে বেরিয়ে আসতে এখন শ্রীলংকা আইএমএফের স্মরণাপন্ন হয়েছে। রাজাপক্ষ সরকার চীনের থেকে তো বটেই, ভারতের কাছেও লোন চাইছে।
We hate spam as much as you do