স্টেটাস রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছে, ২৮ দিন ধরে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের গণছুটির কারণে পরিষেবা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই, এমনকি এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। কারণ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেসিডেন্ট ডাক্তারেরাই হলেন স্বাস্থ্য পরিষেবার মেরুদণ্ড। স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, লাগাতার কর্মবিরতির কারণে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। এই বিষয়ে একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছে রাজ্য। স্টেটাস রিপোর্টে উল্লেখ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ লাখেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগে পরিষেবা পাননি।
হাসপাতালে কর্মবিরতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, কী করবে চিকিৎসকরা ?
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আরজি করে খুন ও ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে তাঁদের। প্রধান বিচারপতি সোমবার শুনানি পর্বে এ-ও মন্তব্য করেছেন যে ওই ডাক্তারেরা কাজে যোগ না দিলে, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে শীর্ষ আদালত বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু কেন এই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট? শীর্ষ আদালতের নির্দেশনামায় তার কিছুটা আভাস রয়েছে।
নির্দেশনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, সোমবার আদালতে শুনানির সময় রাজ্য জানিয়েছে, বাংলায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে ২৮ দিন ধরে রেসিডেন্ট ডাক্তারেরা গণছুটিতে রয়েছেন। যে কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থা মারাত্মক ভাবে ভেঙে পড়তে বসেছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার একটি স্টেটাস রিপোর্টও জমা দিয়েছে শীর্ষ আদালতে। স্বাস্থ্য দফতরের জমা করা ওই স্টেটাস রিপোর্টে কী উল্লেখ ছিল, তার একটি অংশ নির্দেশনামায় তুলে ধরেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
স্টেটাস রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছে, ২৮ দিন ধরে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের গণছুটির কারণে পরিষেবা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই, এমনকি এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। কারণ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেসিডেন্ট ডাক্তারেরাই হলেন স্বাস্থ্য পরিষেবার মেরুদণ্ড। স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, লাগাতার কর্মবিরতির কারণে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। এই বিষয়ে একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছে রাজ্য। স্টেটাস রিপোর্টে উল্লেখ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ লাখেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগে পরিষেবা পাননি। বহির্বিভাগে সাধারণ দিনগুলিতে যেখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আসতেন, এখন তা প্রায় ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। যে কারণে কার্ডিওলজি, অঙ্কোলজি, নিউরোলজি-সহ মেডিক্যাল কলেজগুলির অন্যান্য বিভাগে গরীব মানুষদের পরিষেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে।
রাজ্য আরও জানিয়েছে, এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার সুযোগ (ইনডোর পরিষেবা) থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ। ৬ লাখ ৪২ হাজার মানুষ বিনামূল্যে ল্যাবরেটরি টেস্ট করাতে পারেননি। প্রায় দেড় হাজার রোগীর স্টেন্ট বসানো ও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি পিছিয়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এমনকি ক্যানসার আক্রান্তেরাও অনেক ক্ষেত্রে ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। স্টেটাস রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছে, চিকিৎসা না পেয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে তারা জানতে পেরেছে। যদিও সোমবার শুনানির সময় রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানিয়েছিলেন, মৃতের সংখ্যা ২৩।
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর শুনানি: শুরু থেকে শেষ কী কী হল, কে কী বললেন, কী কী নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে জমা দেওয়া স্টেটাস রিপোর্টে রাজ্যের বক্তব্য, এই প্রতিবাদের আবহে রাজ্য সরকার একাধিক বার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। বার বার তাঁদের অনুরোধ করেছে, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সব রকম পদক্ষেপ করবে, সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে। কোন কোন দিনে, কোন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে— সেই হিসাবও স্টেটাস রিপোর্টে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতেই হবে জুনিয়র ডাক্তারদের, নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ২১ অগস্ট স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকের কথা। সেই দিন আন্দোলনরত ডাক্তারদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব। ওই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে রাজ্য। মূলত চারটি দাবি ছিল সেখানে— অধ্যক্ষ, সুপার, বক্ষরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং ডিনকে বদল করতে হবে। সচিব নিজে আরজি করে গিয়ে আন্দোলনকারীদের জানিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রথম দিনের নির্দেশনামার পর, ২৩ অগস্ট পুনরায় স্বাস্থ্যসচিব চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছিলেন গরীব রোগীদের কথা বিবেচনা করে তাঁরা যেন কাজে ফেরেন। ২৪ অগস্ট মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টর আরজি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছিলেন। আশ্বস্ত করেছিলেন, তাঁদের ক্ষোভ ও অভিযোগের কথা শোনা হবে। সেই দিনেই জয়েন্ট ডক্টর’স ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব।
রাজ্যের দেওয়া স্টেটাস রিপোর্ট সোমবারই খতিয়ে দেখেছে শীর্ষ আদালত। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, “বাস্তব পরিস্থিতি কী চলেছে আমরা সবাই জানি। কিন্তু ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে।” যাঁরা কাজে যোগ দেবেন, তাঁদের বদলি বা অন্য কোনও কড়া পদক্ষেপ করা চলবে না, সে কথাও রাজ্যকে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এর পরই ডাক্তারদের উদ্দেশ তাঁর বার্তা, “চিকিৎসকদের প্রধান কাজ চিকিৎসা করা। তাঁদের নিরাপত্তার নির্দেশ আমরা দিয়েছি। তাঁরা কাজে যোগ না দিলে আমরা প্রত্যেককে নোটিস দেব।”
We hate spam as much as you do