পৌরাণিক ও ধর্মীয় কাহিনী অনুসারে, হোলি উৎসব উদযাপনের কাহিনী দুষ্ট রাজা হিরণ্যকশ্যপের সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের পিতা। তিনি নিজেকে অত্যন্ত শক্তিশালী মনে করতেন এবং কঠোর তপস্যা করার পর তিনি ক্ষমতাবান হওয়ার বর পেয়েছিলেন আর ক্ষমতার অপব্যবহারও করেছেন। পুত্র প্রহ্লাদ এর স্বভাব পিতার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, তিনি ভগবান বিষ্ণুর ভক্তিতে মগ্ন থাকতেন। প্রহ্লাদের স্বভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে পিতা অবশেষে পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগুনের প্রতি বিশেষ বরপ্রাপ্ত হিরণ্যকশ্যপ তার বোন হোলিকার কোলে রেখে বিষ্ণুপ্রান প্রহ্লাদকে আগুনের সাহায্যে হত্যার কথা চিন্তা করে। ভগবানের মহিমায় তার বোন হোলিকার মৃত্যু ঘটে এবং বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদ এর প্রাণ থাকে। এই কারণেই এই উৎসব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মন্দের ওপর ভালোর জয় হয়ে আসছে। এইজন্যই হোলির আগের দিন ন্যাড়া পোড়ানো হয়।
হোলি উৎসবে আজ ঋতুরাজ বসন্ত
নমিতা বসু
২৬ মার্চ ২০২৪
হোলি উৎসব হলো একটি প্রাচীন হিন্দু উৎসব যার নিজস্ব সাংস্কৃতিক আচার- অনুষ্ঠান রয়েছে। হোলি ভারতের বসন্তের আগমন, শীতের সমাপ্তি এবং প্রেমের প্রস্ফুটিত উদযাপন করে। হোলির বর্ণনা অনেক প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থেও পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের 'রত্নাবলী' তে হোলির বর্ণনা আছে। এছাড়া জৈমিনির পূর্ব মীমাংসা সূত্র এবং নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ এবং বহু গ্রন্থে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। হোলি বা দোল উৎসবের মানে একই অর্থ হলেও হোলি সারা বিশ্বজুড়ে এবং দোল উৎসব বাঙালির মনে প্রাণে সঞ্চারিত।হোলি একটি প্রাচীন উৎসব যা হোলিকা, ফাগত্তয়ান ইত্যাদি নামে পরিচিত।
পৌরাণিক ও ধর্মীয় কাহিনী অনুসারে, হোলি উৎসব উদযাপনের কাহিনী দুষ্ট রাজা হিরণ্যকশ্যপের সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের পিতা। তিনি নিজেকে অত্যন্ত শক্তিশালী মনে করতেন এবং কঠোর তপস্যা করার পর তিনি ক্ষমতাবান হওয়ার বর পেয়েছিলেন আর ক্ষমতার অপব্যবহারও করেছেন। পুত্র প্রহ্লাদ এর স্বভাব পিতার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, তিনি ভগবান বিষ্ণুর ভক্তিতে মগ্ন থাকতেন। প্রহ্লাদের স্বভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে পিতা অবশেষে পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগুনের প্রতি বিশেষ বরপ্রাপ্ত হিরণ্যকশ্যপ তার বোন হোলিকার কোলে রেখে বিষ্ণুপ্রান প্রহ্লাদকে আগুনের সাহায্যে হত্যার কথা চিন্তা করে। ভগবানের মহিমায় তার বোন হোলিকার মৃত্যু ঘটে এবং বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদ এর প্রাণ থাকে। এই কারণেই এই উৎসব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মন্দের ওপর ভালোর জয় হয়ে আসছে। এইজন্যই হোলির আগের দিন ন্যাড়া পোড়ানো হয়।
হোলি উৎসব এমনই এক উৎসব যেখানে রাধা কৃষ্ণের অন্যান্য সাধারণ প্রেম কাহিনী কথা বর্ণিত। সাহিত্যে উল্লেখ আছে যে, একদিন নন্দগায়ের কানাইয়ালাল কৃষ্ণ তার মা যশোদাকে প্রশ্ন করলেন, মা রাধার গৌরবর্ণ অথচ আমি কেন কালো? মা তার সমস্যার বিহিদ হিসাবে বলেন, যাও না রায় কিশোরীকে নিজের মনের রঙে রাঙিয়ে দাও। মায়ের করা বিহিদ শুনে কৃষ্ণ আপ্লুত,ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে কানাই, রাধা ও অন্যান্য গোপীবালাদের গায়ে রং মাখিয়ে দেয়। এই ঘটনার তালে তাল মিলিয়ে বিকশিত হলো প্রেমের এক নতুন রং সর্বভারতীয় হোলি উৎসব। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। হোলিকা দগ্ধ হওয়ার দিন আর কৃষ্ণের প্রেমের রং খেলার এই দুটি ঘটনা সারা ভারতে হোলি উৎসবের সূচনা করে।
অপরদিকে এই সর্বমিলন পর্বে বাঙালিরাও উৎসবে মেতে ওঠে এই দোল যাত্রায়, যা হিন্দু বৈষ্ণবীয় উৎসব। নিষ্কাম রাধা কৃষ্ণের মধুময় প্রেমে সঞ্চারিত আর একটু ফিরে যাও বৈষ্ণবীয় ধারণা যে, পূর্ণিমা তিথিতে রাধা কৃষ্ণ তাদের প্রেমের রঙে সজ্জিত হয়। এই থেকেই হিন্দু বৈষ্ণবীয়রা এই দোলযাত্রায় মেতে ওঠে। এই বাংলার দোলযাত্রাকে উচ্চাসনে পৌঁছে দেয় শ্রী চৈতন্যদেব, যিনি ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে নদীয়ার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তাই তার সেই জন্মদিনে কৃষ্ণ প্রেমে আপ্লুত বৈষ্ণবরা এমনকি বাঙালির আবালবৃদ্ধবণিতা সর্বভারতীয় হোলি উৎসবে এক পা এগিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধায় এই উৎসবের সূচনা করে। সুতরাং বাঙালির দোল উৎসব মানে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের সাথে কৃষ্ণের অসাধারণ প্রেমের এক অপূর্ব মহামিলন উৎসব।
বাঙালির এই মহামিলন উৎসবকে রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন শ্রী চৈতন্য দেবের মত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি দোল উৎসবে ধর্মীয় অংশটি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক দিকটি বিকশিত ও ব্যঞ্জনাময় করে রং খেলার এক নতুন উৎসবের সূচনা করেছিলেন, তার নাম দিলেন বসন্ত উৎসব। বসন্ত উৎসব মানেই রং ও আবিরের সংমিশ্রণে অসাধারণ এক ঋতুরঙ্গ উৎসব।ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানানোর উৎসব। আমাদের মনের কোনে বেজে ওঠে রবি ঠাকুরের সেই চেনা গান —
' ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল।'
কবি রবি ঠাকুর বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছিলেন —
' আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। '
এইভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন কে কেন্দ্র করেই বসন্ত উৎসব প্রচলন করেন।
দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসবের রং গুলির স্পন্দন এমন কিছু যা আমাদের জীবনে অনেক ইতিবাচকতা নিয়ে আসে এবং হোলি রংয়ের উৎসব আসলেই আনন্দের একটি দিন। হোলি একটি বিখ্যাত উৎসব যা ভারতের প্রতিটি অংশে আনন্দ ত্ত উৎসাহ নিয়ে উদযাপন করা হয়। পলাশ ফুটলেই আমাদের মন উড়ে যায় বসন্তের আগমনে। প্রকৃতিও যেন সেজে ওঠে এক বর্ণিল সাজে। ভারতের বিভিন্ন তীর্থ স্থানে বিপুল মানুষের আগমন ঘটে, যা মথুরা বৃন্দাবনের বিশেষ আকর্ষণ। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী যেন কোকিলের পুলকিত সুর। এ এক যেন সর্বধর্মসমন্বয় মিলন উৎসব।
We hate spam as much as you do