চিনাদের বিয়েনকেইতিয়ান, জাপানের বেনজাইতেন, মায়ানমারের থিরাথুডি, তিব্বতের মঞ্জুশ্রী আর আমাদের সরস্বতী একই দেবীর নানা নাম।
ঋগ্বেদে সরস্বতীর উল্লেখ থাকলেও তিনি প্রথম থেকেই যে বিদ্যাদাত্রী বাগদেবী রূপে পূজিত হতেন এমনটা নয়। বরং ঋগ্বেদের দ্বিতীয় সুক্তে তাঁকে জলরাশির মধ্যে (মতান্তরে মায়েদের মধ্যে), নদী সমূহের মধ্যে এবং সকল দেবীকূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমা ( 'অম্বেতমা, নদীতমা, দেবীতমা') রূপে বন্দনা করা হয়েছে। প্রথম অবস্থায় সরস্বতী ছিলেন জলের দেবতা।
বেদ রচনার প্রথম পর্বে গঙ্গা নয়, যাযাবর আর্যজাতি ভারতে প্রবেশ করে উত্তর পশ্চিম ভারতে যে সিন্ধু অববাহিকায় বসতি স্থাপন করেছিল, সেই অঞ্চলে সিন্ধু ছাড়াও অন্যান্য অনেকগুলি নদী ছিল যার মধ্যে অন্যতম প্রধান নদীটির নাম ছিল সরস্বতী। সম্ভবত বহমান সেই নদীর গুরুত্ব সেকালে এতটাই গভীর ছিল যে এর নামকরণ করা হয়েছিল সুরসবতী, যা পরবর্তী সময়ে সরস্বতী হয়ে ওঠে। ঋগ্বেদ পরবর্তী বেদগুলিতে সরস্বতীকে ক্রমশঃ জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হয়ে উঠতে দেখা যায় এবং বেদ পরবর্তী ব্রাম্ভণগুলিতে জ্ঞানের দেবীর পাশাপাশি বাগদেবী এবং শিল্পকলার দেবী হিসাবে তাঁকে বিবর্তিত হতে দেখা যায়। তৈত্তিরীয় ব্রাম্ভণে সেই বিবর্তন সম্পূর্ণ হতে দেখি আমরা। মনে রাখা ভাল বৈদিক যুগে দেবী পূজার তেমন একটা প্রচলন ছিল না। ফলে আর পাঁচটা দেবীর সঙ্গে সরস্বতীর পূজাও শুরু হয় সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম শতক, কি বড়জোর খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের সূচনায়। তারপর মধ্যযুগে সরস্বতী জীবন দাত্রী বহতা জলের দেবী থেকে হয়ে ওঠে আজকের বাগদেবী। তবু এক সময় জলের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্কের মিসিং লিঙ্ক হিসাবেই যেন আজও তাঁর বাহন হয়ে থেকে গেছে জলচর হাঁস।
We hate spam as much as you do