তাঁদের বক্তব্য ছিল, জাতপাত বিভাজন ব্যবস্থার বিনাশ করতে হলে ব্রাহ্মণ্য-হিন্দুধর্মের শৃঙ্খল ভেঙে বেরোতে হবে কারণ হিন্দুত্ববাদের মূল ধারণা প্রোথিত আছে বর্ণাশ্রম অর্থাৎ জাত-বিভাজনের ধারণার মধ্যে। সামাজিক ন্যায় এবং সাম্য অর্জনের পথে ধর্ম এক বিরাট বাধা। পেরিয়ারের নেতৃত্বে আত্মমর্যাদা আন্দোলন প্রায় সারা তামিলনাডুতেই এক ব্যাপক সংগঠিত আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। বলা যায়, এদেশের বুকে তিনিই সর্বপ্রথম ‘হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ’কে একটি বৈষম্যবাদী সর্বগ্রাসী রক্ষণশীলতা এবং প্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
১৪৫তম জন্মদিবসে 'পেরিয়ার' দক্ষিন ভারতের যুক্তিবাদের পথ প্রদর্শক
17 Sep, 2023
একটি বৈষম্যযুক্ত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ‘Consciousness of Oppressed’ হল এমন এক অশান্ত চেতনাস্রোত যা থেকে থেকে জ্বলে ওঠে। অতীত থেকেই এই ভূখণ্ডে সামাজিক সম্পর্কগুলি শৃঙ্খলিত হয়ে আছে হায়রার্কিক্যাল অনুশাসন গ্রন্থ মনুসংহিতাকে ভিত্তি করে। ফলস্বরূপ এমন এক সমাজব্যবস্থা নির্মিত হয়েছে যার ভিত্তি যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য তেমনই সামাজিক বৈষম্য। অর্থাৎ ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিপীড়িত অংশকে জন্মগতভাবেই শূদ্র বা নীচুজাত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত, অসম্মানিত মানুষকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্ত করতে দক্ষিণ ভারতে যিনি এক নতুন জাগরণের সূচনা করেছিলেন তিনি ‘পেরিয়ার’ ই ভি রামাসামী (Erode Venkatappa Ramasamy)।
আজ ই ভি রামাসামীর ১৪৫তম জন্মদিবস। ১৮৭৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাডুর এরোড শহরে জন্ম হয় তাঁর। মাত্র ১২ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যুক্ত হন এবং ১৯২৪ সালে কেরলের ভাইকম মন্দির সংলগ্ন রাস্তায় এঝাবা অতিশূদ্র সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯২৫ সালে কংগ্রেস পরিচালিত শেরমাদেবী গুরুকুলম বিদ্যালয়ে ব্রাহ্মণ ছাত্রদের জন্য পৃথক আহারের ব্যবস্থা হলে ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হলে পেরিয়ারের কংগ্রেস সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়। ১৯২৫-এর নভেম্বরে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক হলে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
১৯২৫-এর ২ মে ই ভি রামাসামী প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক ‘কুদি-আরাসু’ বা ‘জনগণের রাজ’ পত্রিকা। যৌক্তিকতাবাদী দৃষ্টিতে সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে এই বছরই ই ভি রামাসামী শুরু করেন ‘আত্মমর্যাদা আন্দোলন’ (The Self Respect Movement)। এই লীগ পরিচালিত হতো একটি যৌক্তিক-নিরীশ্বরবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জাতপাত বিভাজন ব্যবস্থার বিনাশ করতে হলে ব্রাহ্মণ্য-হিন্দুধর্মের শৃঙ্খল ভেঙে বেরোতে হবে কারণ হিন্দুত্ববাদের মূল ধারণা প্রোথিত আছে বর্ণাশ্রম অর্থাৎ জাত-বিভাজনের ধারণার মধ্যে। সামাজিক ন্যায় এবং সাম্য অর্জনের পথে ধর্ম এক বিরাট বাধা। পেরিয়ারের নেতৃত্বে আত্মমর্যাদা আন্দোলন প্রায় সারা তামিলনাডুতেই এক ব্যাপক সংগঠিত আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। বলা যায়, এদেশের বুকে তিনিই সর্বপ্রথম ‘হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ’কে একটি বৈষম্যবাদী সর্বগ্রাসী রক্ষণশীলতা এবং প্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
তামিল সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় রয়েছে, একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রাচীন তামিল সাহিত্যের উদাহরণ সামনে এনে পেরিয়ার বলেছিলেন, সেখানে কোনওরূপ বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার ইঙ্গিত নেই, ব্রাহ্মণরাই দক্ষিণ ভারতে জাতপাতের বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে। এভাবে দক্ষিণ ভারতে মনুসংহিতা দহন, রামের ছবি পোড়ানো, গণেশের মূর্তি ভাঙা, মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ, দেবদাসী প্রথা নির্মূলীকরণ, সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন, কৃষকদের জমির আন্দোলন এবং সিপিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে রেলওয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। বিজ্ঞান এবং যৌক্তিকতাবাদী আন্দোলনের বিস্তারেও তাঁর ভূমিকা স্মরণযোগ্য। দক্ষিণ ভারতের নারী আন্দোলনের চিন্তাচেতনা নির্মাণে পেরিয়ারের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তখনকার নারীমুক্তির প্রশ্নে কমিউনিস্ট পার্টির চিন্তাভাবনাও এত প্রগতিশীল ছিল না। মন্দিরের দেবদাসীরাও তাঁর ভাবনায় আকৃষ্ট হয়ে নারী আত্মমর্যাদা আন্দোলনের নেতৃত্বে উঠে এসেছিলেন। ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ ভারতের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা একটি সম্মেলনে তাঁকে ‘পেরিয়ার’ বা ‘মহামানব’ বলে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। তখন থেকেই শব্দটি তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
১৯৩২ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভ্রমণে যান রামাসামী এবং সেখানকার সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। দেশে ফিরে তিনি একটি সমাজবাদী রাজনৈতিক দল ‘সমধর্ম-সমাজবাদী পার্টি’ গড়ে তুলে এক মারমুখী শ্রমিক আন্দোলনে সামিল হন এবং গ্রেফতার হন। এদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্ত হতে হলে রাশিয়ার মতো একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে- এই ছিল তাঁর অভিমত। পরবর্তীকালে হিন্দিভাষা আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এই সময় থেকেই পৃথক ‘দ্রাবিড়নাডু’ গঠনের বিষয়ে তামিলদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। ১৯৪৪-এ তিনি গড়ে তোলেন ‘দ্রাবিড় কাঝাগম’।
চিদাম্বরমের লেখা পেরিয়ার রামাস্বামীর জীবনীগ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৯০৪ সালে একদিন তিনি বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারপর গঙ্গা নদীর তীরে তীর্থস্থান কাশিতে পৌঁছোন। সেই সময় তার দারিদ্র্য এমন চরমে ছিল যে প্রায় অনাহারে তাকে দিন কাটাতে হচ্ছিল। একদিন বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয় এমন একটি ধর্মশালায় খেতে গেলেন। কিন্তু শুধুমাত্র শূদ্র আর আব্রাহ্মণ বলে তাকে খেতে দেওয়া হল না। এই সময়ে শুধু জাতিগত কারণে এবং দ্রাবিড় বলে নানা রকম লাঞ্ছনা তার মনে ব্রাহ্মণদের প্রতি অত্যন্ত অসহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। তিনি এর কারণ খুঁজতে থাকেন। কাশীর এই অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তী জীবনে চলার সঠিক দিশা দেখায়। তিনি এরোডে ফিরে আসেন এবং পারিবারিক ব্যবসার সমস্ত দায়িত্ব নেন। এই সময়েই এরোডের দুইজন যুক্তিবাদী ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ক গবেষক মারুথাইয়া পিরালাই এবং কৈবল্য সামিয়ার তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে ই ভি রামস্বামী কংগ্রেসের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯১৫-তে দ্রাবিড় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সি সংকরানের লেখা ‘অব্রাহ্মণের চিঠি’ নামে একটি বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে এই কাগজের কর্মীদের ওপর ব্রিটিশ সরকারের আক্রমণ নেমে আসার তীব্র প্রতিবাদ করেন ই ভি রামাস্বামী। ১৯১৭-তে মন্টেগু চেমসফোর্ড কমিটি যখন ভারতে সাংবিধানিক শাসন কাঠামো সংস্কার করার জন্য বিভিন্ন অংশের ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলেন তখন জাস্টিন পার্টির এই কমিটির কাছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অব্রাহ্মণদের জন্য সংরক্ষণ দাবি করে। ১৯১৭ সেপ্টেম্বর মাসে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কংগ্রেসের অব্রাহ্মণ দ্রাবিড় নেতারা ‘মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি অ্যাসোসিয়েশন’ তৈরি করলে তাতে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ই ভি রামাস্বামী। এরপর পর পর ঘটে যাওয়া রাওলাট আইন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড এসবের প্রতিবাদে এরোড পৌরসভার চেয়ারম্যানের পথ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে তিনি সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু নানান ঘটনায় তিনি এই উপলব্ধিতে পৌঁছোন, তখনকার কংগ্রেস মূলত উত্তর ভারতীয় উচ্চবর্ণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক দল। যারা কখনো জাতপাত বিলোপের বিষয়ে এবং শূদ্র এবং শুদ্রাতিশূদ্রদের উন্নয়নের ব্যাপারে কিছুমাত্র ভূমিকা নেবেনা। এরপরে রামাস্বামী রাজনৈতিক আন্দোলন ছেড়ে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতে থাকেন। এখানে রামাস্বামী চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে একটা একটা প্রশ্ন আমাদের মনে দানা বাঁধে। এতটা স্পষ্ট রাজনৈতিক চিন্তা এবং দূরদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও কোনো রাজনৈতিক বীক্ষা ছাড়া যে সমাজ সংস্কার আন্দোলন সফল হতে পারে না এটা কেন তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন না। তবে অতি দ্রুতই এই সীমাবদ্ধতা তিনি কাটিয়ে ওঠেন এবং ১৯২৫’র নভেম্বরে কংগ্রেস পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি সংগঠিত করেন তার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সমাজ সংস্কার আন্দোলন সুয়ামারিদাইকাম বা আত্মমর্যাদা আন্দোলন। এই আন্দোলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য তিনি প্রচার করতে থাকেন তার সম্পাদিত কুদি আরাসু পত্রিকায়।
রামাস্বামী সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে যুক্ত না হলেও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় তিনি কমিউনিস্টদের খুব কাছেই ছিলেন। দক্ষিণ ভারতের তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা এম সিঙ্গারাভ্যালু নিয়মিতভাবে আত্মমর্যাদা লীগের মুখপাত্র কুদি আরাসুতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতেন। এইসব নিবন্ধ পড়ে রামাস্বামী মার্কসের দ্বান্দিক বস্তুবাদ, বিজ্ঞান, কমিউনিস্টদের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী হন এবং এরপরেই সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক কাজকর্ম নিজের চোখে দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রামাস্বামীর সোভিয়েত সফর তার মনে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলে। এরপর তিনি বার্লিনে যান এবং সেখানে সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার এইসব কার্যক্রম থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে তিনি তার আগেকার যে সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সমাজ সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে আত্মমর্যাদা লিগকে সীমাবদ্ধ রাখার ধারণা থেকে সরে এসেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিপ্লব ছাড়া এবং সমাজের আমূল পরিবর্তন ছাড়া উপর উপর কিছু সংস্কার সাধনের মধ্যে দিয়ে জাতপাত ব্যবস্থার বিলোপ এবং শ্রমিক কৃষকের প্রকৃত শৃঙ্খল মুক্তি সম্ভব নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ বিশ্বভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর রামাস্বামী একটি নতুন প্রগতিশীল কর্মসূচি হাজির করলেন যা এরোড কর্মসূচি হিসেবে বিখ্যাত। এখানেই তিনি সমাজ সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন এবং আত্মমর্যাদা লীগের একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি হয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ব্রিটিশ শাসকরা ক্ষমতা থেকে সরলে তিনি ঘটনাটিকে ‘উচ্চবর্ণীয় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর’ বলে ‘মৌনদিবস’ পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনে বহুবার কারাবরণ করা এই মানুষটি স্বাধীন ভারতেও ছিলেন প্রথম রাজনৈতিক বন্দি। দিল্লির শাসনকে বিদেশীদের শাসন বলতেন তিনি। ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোন সমাজ ভারতরাষ্ট্রকে জাতপাত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, পরস্পর ঘৃণা মুক্ত করতে পারে এই প্রশ্নের উত্তর তিনি খুঁজেছিলেন তাঁর ‘নতুন বিশ্ব’ রচনায়। সেখানে তিনি এক সাম্যবাদী সমাজের রেখাচিত্র হাজির করেছিলেন।
বর্তমান সময়ে এই রাষ্ট্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তি ক্ষমতায় আরোহণের পর সবচেয়ে বেশি যার স্ট্যাচুর উপর আক্রমণ হয়েছে তিনি হলেন পেরিয়ার। কারণ তিনি সারা জীবন হিন্দু-ঐতিহ্যবাদী চিন্তা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। ভারত ভূখণ্ড অসংখ্য নিপীড়িত শ্রেণি, জাত ও জাতিসত্তার কারাগার। এখনও একজন দলিত নাবালক ছাত্রকে শিক্ষকের জলের কলসি ছোঁয়ার অপরাধে প্রাণ দিতে হচ্ছে। বর্তমানে কর্পোরেট পুঁজির সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারার যোগফলই এই কারাগারকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এই উগ্র জাতীয়তাবাদী আগ্রাসী আক্রমণের সময়ে পেরিয়ার রামাসামীর মতো এশিয়ার অন্যতম চিন্তাশীল সমাজ-সংস্কারক ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্বকে নিয়ে চর্চা ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৩ সালের ২০ ডিসেম্বর একটি মিটিং চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন আজীবন সংগ্রামী এই চিন্তাবিদ এবং ২৪ ডিসেম্বর ভেলোর হাসপাতালে জীবনাবসান হয় তাঁর। সমাজজীবন ও মানবজীবনে ধর্মের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এই মানুষটিই চিরকাল বলে গিয়েছিলেন, “Religion spoils our brain, it spoils our knowledge of nature, it endangers our prosperity, it stands as obstacle in the path of progress.”
We hate spam as much as you do