কাল ২১ শে ফেব্রুয়ারী। শাড়ি-পাঞ্জাবী পরে সেজেগুজে উদযাপনের চেয়ে রাজপথে বিক্ষুব্ধ জনতার স্লোগান আর চিৎকারে কেঁপে উঠুক হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের পিসির গদি। কাল ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাঙালির রক্ত দেওয়ার দিন।
আনিশ তোমার জন্য
শঙ্খজিৎ
পশ্চিমবঙ্গের সরকারী দেরাজে বুদ্ধি বন্ধক রাখা বুদ্ধিজীবীবৃন্দের ধারাবাহিক নীরবতার আর একটা রাত্রি চলে গেল গতকাল। ডিনার টেবিলে মুড়গি চেবাতে চেবাতে কাটমানির টাকায় হওয়া মোচ্ছবগুলোতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামানো এইসব স্যাম্পেলগুলো আবারও যথারীতি সাইলেন্ট! যাক, সেসব কথা। তৃণমূল গত দশবছরে কিছু পারুক আর না পারুক চোখরাঙানি আর শাসানি দিয়ে 'মানুষের ক্ষতি করে দেব' এই মনোভাবের লাগাতার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়ে গেছে। আমরা অনেকেই দেখিনি জরুরী অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলো। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালের পর থেকে গোটা গ্রামীনবঙ্গ হাড়ে হাড়ে দেখছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা কি ধরণের আক্রমনাত্মক হয়ে উঠতে পারে! কি কি হতে পারে আধাফ্যাসিস্ট শাসনে। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি থেকে পাড়ার মোড়ে বিরোধী রাজনৈতিক মতের লোকেদের চা পান টুকু না করতে দেওয়া! শহরের ইডিয়েট বাবুরা এর যন্ত্রণা বুঝবেন না। আমরা যখন ভেবিয়াতে থাকি,বিশ্বাস করুন হাতে প্রাণটুকু নিয়ে বাঁচি। কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে গ্রামীন বঙ্গে তা ব্যখ্যা করা কঠিন। লজ্জা লাগে,আমাদের শিক্ষিত যুব-সমাজ বা অল্প শিক্ষিত যুব সমাজের একটা অংশের মাথায় এই রাজনৈতিক দলটি ঢুকিয়ে দিয়েছে মাদক নেশা আর সমস্ত ধরণের ক্রাইমের পোকা। মানুষ শান্তি এবং স্বস্তিতে কোনোমতেই নিঃশ্বাস ফেলতে পারেনা। মুক্তচিন্তা আর গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে তাদের বেশীরভাগের-ই গা ঢেকে শহরে এসে থাকতে হয়। আর না হলে গুমরে গুমরে মরতে হয়!
একটা রাজনৈতিক দল যে এত নৃশংস আর হিংস্র হতে পারে তা ভারতবর্ষের ইতিহাসে তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। এরই মধ্যে গোটা গ্রামীন বঙ্গে এই পিসির পার্টির প্রত্যক্ষ মদতে পরগাছার মতো গজিয়ে উঠেছে বিজেপি আর আর.এস.এস। ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো,সংখ্যালঘু দলিত সহ সর্বস্তরের খেটে খাওয়া মানুষের মনে ভয় ধরানো যাদের একমাত্র কাজ।
একটা ফুটফুটে ছেলে,আমাদের সমবয়সী বা সামান্য বড়, একটা মুক্ত-স্বাধীন-সকলের পেটে ভাত আর হাতে কাজ আর সুরক্ষিত নাগরিকত্বের দাবীতে স্বরব হয়ে প্রতিমুহূর্তে ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিল, তাকে থ্যাঁতলিয়ে খুন করেছে তৃণমূল আশ্রীত সমাজবিরোধীরা। লিবেড়াল দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আর স্বাধীন সমাজের দু একদল আছে যারা জটিল জটিল কথা লিখে খুনীদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করতে সর্বতোভাবেই উদ্যোগী। এসব সত্ত্বেও সারা পশ্চিমবঙ্গ কাল সারারাত,বারবার পুলিশকে দেওয়া কমরেড আনিশের বয়ান পড়েছে। পড়েছে,জেনেছে,বুঝতে পেরেছে আসল খুনি কারা,তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি!
কাল ২১ শে ফেব্রুয়ারী। শাড়ি-পাঞ্জাবী পরে সেজেগুজে উদযাপনের চেয়ে রাজপথে বিক্ষুব্ধ জনতার স্লোগান আর চিৎকারে কেঁপে উঠুক হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের পিসির গদি। কাল ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাঙালির রক্ত দেওয়ার দিন।
মনে পড়ছে ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯।ধর্মতলার ঐ ছাত্র সমাবেশে আনিশ খানও ছিল, আমাদের পাশেই কোথাও। আমরা তার চিন্তার পাশাপাশি থাকব আজীবন। আনিশ তুমি ঘুমিও না। আমাদের বুকের মধ্যে আগুন হয়ে জেগে থাকো...
_______________________
(লেখক একজন রাজনৈতিক কর্মী)
We hate spam as much as you do