বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে, ‘তোমার নাম আমার নাম, আনিস খান আনিস খান!’
আনিস খুনের তদন্তে সিটের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় আবার বিক্ষোভ
ছাত্রনেতা আনিস খানের খুনের তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়ে গঠিত হয়েছিল রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। নবান্নে দাঁড়িয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন সেই কথা। সময়সীমার ৪৮ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও তদন্ত শেষ করে উঠতে পারেনি সিট। এখনও গ্রেপ্তার হয়নি আনিস খানের খুনিরা। এই অবস্থায় ‘নো ওয়ান কিলড্ আনিস খান!’ স্লোগান তুলে কলকাতায় পথে নামলেন বাম ছাত্র-যুবরা। কলেজ স্ট্রিট থেকে মৌলালি অবধি বিক্ষোভ মিছিলে পা মেলালেন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে, ‘তোমার নাম আমার নাম, আনিস খান আনিস খান!’ তাঁরা সরাসরি অভিযোগ করেন, মইদুল ইসলাম মিদ্দ্যা, সুদীপ্ত গুপ্ত, সইফুদ্দিন মোল্লাদের তালিকায় নবতম সংযোজন আনিস খান।
সরকারের প্রতিবাদ করার জন্যই ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে মেধাবী এই যুবককে। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে বাঁদিকে ঘুরে, লেনিন সরণি বরাবর মৌলালির দিকে এগিয়ে চলেন বাম ছাত্র-যুবরা। মিছিল যত সামনের দিকে এগিয়েছে, ততই বৃদ্ধি পেয়েছে তার দৈর্ঘ্য। আশেপাশের সাধারণ মানুষ বহু জায়গায় এগিয়ে এসে নিজেদের ফোনে মিছিলের ছবি এবং ভিডিও তুলেছেন। চলার পথ বরাবর চাপা গুঞ্জনে উঠে এসেছে, ‘‘এভাবে একটা কমবয়সি ছেলেকে পুলিশ দিয়ে খুন করালো! এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ পাল্লা দিয়ে মিছিল থেকে ধেয়ে এসেছে পুলিশকে কটাক্ষ করে একের পর এক স্লোগান। একসময় প্রশস্ত লেনিন সরণির গোটাটাই চলে যায় ছাত্র-যুবদের দখলে। মৌলালী মোড়ে পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এবং ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে মাইক ব্যবহার হয়নি। ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দের ঘোষনা , মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ঢেউ তোলা হবে। রাজ্যের সমস্ত জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করা হবে। তৃণমূল সরকার সবরকম চেষ্টা করেও আনিস খানের খুনিদের বাঁচাতে পারবে না। আপাতত ১ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ এবং ৫০ হাজার পথসভা সংগঠিত হবে রাজ্যজুড়ে। বিপুল জনমত গড়ে তুলে মমতা ব্যানার্জির মুখোমুখি হবেন রাজ্যের ছাত্র-যুবসমাজ। এদিনের মিছিলে সৃজন ভট্টাচার্য, ময়ূখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, কলতান দাশগুপ্ত, নওফেল মহম্মদ সফিউল্লা সহ রাজ্যের শীর্ষ বাম ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে আমতার সারদা গ্রামের বাড়িতে রহস্যজনক অবস্থায় উদ্ধার হয় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনিস খানের দেহ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আমতা থানার পুলিশ বাড়ি ঢুকে আনিস খানকে খুন করেছে। এই অভিযোগ সামনে আসাতে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু করেন বাম ছাত্র-যুবরা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও শামিল হন প্রতিবাদে। আমতা থানার সামনে টানা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মীরা সহ সাধারণ মানুষ। জনরোষ চাপা দিতে তড়িঘড়ি সিট গঠনের কথা ঘোষণা করেন মমতা ব্যানার্জি। ২১ ফেব্রুয়ারি নবান্নে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনেই তিনি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই হিসেবে ৮ মার্চ ছিল সময়সীমা। কিন্তু ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে অগ্রগতির কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি সিটের তদন্তকারীরা। এখনও অধরা খুনীরা। রাজ্য পুলিশ প্রমাণ করেছে, সহকর্মী সহ শাসক দলের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপারগ তাঁরা। প্রাথমিকভাবে ২ পুলিশকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলেও তা সন্তোষজনক নয় বলে একাধিকবার অভিযোগ জানান আনিস খানের বাবা সেলিম খান। এখনও মূল অভিযুক্ত ৪ সিভিক পুলিশের নাগাল পাননি তদন্তকারীরা। অভিযোগ, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গা ঢাকা দিয়েছেন তৃণমূলের নামে এলাকায় তাণ্ডব চালানো ৪ পুলিশকর্মী। ঘটনায় নাম জড়ায় হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ সুপার সৌম্য রায় এবং আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত কুমার পালের। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর দপ্তরে অভিযান করতে গিয়ে পুলিশি তাণ্ডবের শিকার হন বামপন্থী ছাত্র-যুবরা। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সহ ১৬ ছাত্র-যুব কর্মীকে ১০দিন পুলিশ এবং জেল হেপাজতে আটক রাখা হয়। গণআন্দোলনের কর্মীদের নামে রুজু হয় খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর ধারা। মঙ্গলবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিনেও কলকাতার রাসবিহারী মোড়ে ছাত্রযুবদের উপর ফের একবার চড়াও হয় পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে আটক করা হয় ৫৫জনকে। ছাত্রযুবকর্মীরা জানান, মীনাক্ষী মুখার্জি সহ মুক্ত হওয়া বাকিদের বরণ করে নেওয়ার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁদের আটক করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
We hate spam as much as you do