২৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের এক নম্বর সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়। তাকে ভর্তি থাকতে হয়নি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেশ কয়েকটা দিন বাড়িতেই নিজেকে বন্দি রেখেছিলেন তিনি। কালীঘাট থেকেই প্রশাসন ও দলের কাজ সামলেছেন।
পিজি হাসপাতালে 'ভুল চিকিৎসা'র অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
পশ্চিমবঙ্গের এক নম্বর সরকারি হাসপাতালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর 'ভুল চিকিৎসা'! এ কথা কবুল করলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
এসএসকেএম হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
বিদেশ সফর সেরে পায়ের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই চিকিৎসার জেরে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয় বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
ওর পায়ে পুরনো একটি চোট ছিল। স্পেন সফরে সেখানেই নতুন করে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। ২৩ সেপ্টেম্বর স্পেন ও দুবাই সফর সেরে কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। পায়ে সমস্যা থাকায় দ্রুত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন।
২৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের এক নম্বর সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়। তাকে ভর্তি থাকতে হয়নি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেশ কয়েকটা দিন বাড়িতেই নিজেকে বন্দি রেখেছিলেন তিনি। কালীঘাট থেকেই প্রশাসন ও দলের কাজ সামলেছেন।
এবার তিনি অসংখ্য দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেছেন বাড়ি থেকেই, বাইরে বেরোননি। দীর্ঘ বিরতির পর ২৭ অক্টোবর তিনি রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে উপস্থিত হয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসা বা বিশ্রাম নিয়ে কোনো চর্চা ছিল না। কিন্তু বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে নিজেই বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, তার পায়ের আঘাতে 'ভুল চিকিৎসা' হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘১০-১২ দিন আমার ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন চলেছে। ভুল চিকিৎসার জন্য আমার সংক্রমণ সেপটিকের মতো হয়ে গিয়েছিল। যেভাবে স্যালাইন দেয়া হয়, সেভাবে আমার হাতে সাত দিন চ্যানেল করা ছিল। তার মাধ্যমে আইভি দেয়া হয়েছে। বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।''
মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। ‘ভুল চিকিৎসা'র বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার যদি ভুল চিকিৎসা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে, এই প্রশ্ন তুলে রাজ্যকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা।
অতীতে একাধিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত মন্ত্রী ও নেতারা অসুস্থতার কারণে এসএসকেএমএ ভর্তি হয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, তদন্তকারীদের নাগাল এড়াতে এই কৌশল নিয়েছে শাসক দল। হাতিয়ার করা হচ্ছে চিকিৎসা পরিকাঠামোকে। দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে 'কালীঘাটের কাকু' এখন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালের অবস্থাকে হাতিয়ার করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি কেন সে কথা বলে না।
যদিও তৃণমূলের বিধায়ক ও এসএসকেএমের রোগীকল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মদন মিত্র বলেন, "এসএসকেএমকে নিয়ে এক সময় গর্ব করতাম। এমন কোনো উন্নত যন্ত্র নেই যা এই হাসপাতালে পাবেন না। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভুল চিকিৎসা হয়েছে দেখে অবাক লাগছে।"
সিপিআইএম নেতা, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নিজের পরিচালনাধীন চিকিৎসা পরিষেবায় সমস্যায় পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কি নিজের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবেন? মুখ্যমন্ত্রীর যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে?"
ভুল চিকিৎসার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক,. সজল বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যখন অভিযোগ তুলেছেন, তখন তদন্ত হওয়া উচিত। তাতে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার হালহকিকত বেরিয়ে আসবে। তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।"
যদিও সাংবাদিক বৈঠকে ভুল চিকিৎসার দাবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, "বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্যানেল বলতে পারে চিকিৎসায় ভুলভ্রান্তি হয়েছে কি না। তবে এই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসছে, এটা দেখে বেশ অবাক লাগছে।"
খোদ মুখ্যমন্ত্রী 'ভুল চিকিৎসা'র অভিযোগ তোলায় চিকিৎসকদের একাংশ কিছুটা আতঙ্কিত। তাদের শঙ্কা, এবার এ ধরনের অভিযোগ আরো ব্যাপক হারে উঠতে থাকলে তারা আক্রান্ত হবেন না তো!
চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলছেন, “যে হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে আমাদের গর্বের সীমা নেই, সেই হাসপাতালকে নিয়ে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর যদি এই প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে বলতে হয় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপজ্জনক খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল সম্পর্কে অনাস্থ প্রকাশ করে মানুষের কাছে বার্তা দিয়ে বলতে চাইছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা একদম ধসে গিয়েছে। আপনারা সরকারি হাসপাতালে আসবেন না।”
We hate spam as much as you do