ওবামা বলছিলেন, ‘হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। আমার সঙ্গে যদি মোদীর কথা হতো তাহলে আমি বলতাম যে, আপনি যদি সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত না রাখতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে বিভাজন আরও বাড়বে। এটা ভারতের স্বার্থের বিপরীতেই যাবে।’
ভারতে বিপন্ন সংখ্যালঘু অধিকার প্রশ্নে ওবামার মন্তব্যে সীতারামণের বক্তব্য
২৭ জুন ২০২৩
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্যেই তার দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের উপস্থাপিকা ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা জানান, মোদীর সঙ্গে দেখা হলে তিনি কোন প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেন।
ওবামা বলছিলেন, ‘হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। আমার সঙ্গে যদি মোদীর কথা হতো তাহলে আমি বলতাম যে, আপনি যদি সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত না রাখতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে বিভাজন আরও বাড়বে। এটা ভারতের স্বার্থের বিপরীতেই যাবে।’
মোদী যখন রাষ্ট্রীয় অতিথির সম্মান পেয়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নানা চুক্তি চূড়ান্ত করছেন, সেই সময়েই ওবামার এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে।
কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনেৎ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ টুইট করে মন্তব্য করেছেন, ‘মোদীর বন্ধু বারাক ওবামা একটা বার্তা দিয়েছেন। মনে হচ্ছে তিনিও বোধহয় মোদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অন্তত ভক্তরা তো সেই দাবি করতেই পারে।’
অর্পিত মারওয়াহ নামে এক টুইট ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হচ্ছে, ওবামা জেনে শুনেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে পুরোপুরি ভরসা করা যায় না। তারা একই সঙ্গে দুটো পক্ষের (দক্ষিণপন্থী এবং বামপন্থী) মানুষদেরই খুশি করছে।’
সিনহা নামে আরেক টু্ইট ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বারাক হুসেইন ওবামার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্র লাখো মুসলমানকে হত্যা করিয়েছে, ডজনখানেক ইসলামী দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে.. সবই জ্বালানি তেলের প্রয়োজনে.. আর এখন তিনি ভারতের মুসলমানদের নিয়ে কথা বলার সাহস দেখাচ্ছেন।’
-----------------------
অপরদিকে বিজেপি নেত্রী এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামান রবিবার সাংবাদিকদের বলেন মি. ওবামার মন্তব্যে তিনি “হতবাক” হয়েছেন।
“মি. মোদী যখন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়ে পুরো ভারত রাষ্ট্র সম্পর্কে কথা বলছেন সেসময় সাবেক একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ভারতের মুসলিমদের নিয়ে কথা বলছেন।“
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামান বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক চায় কিন্তু “তারপরও ভারতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে আমাদের কথা শুনতে হয়।“
তিনি বলেন, মি. ওবামা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন সিরিয়া এবং ইয়েমেনের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আমেরিকা বোমা হামলা করেছে।
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর মুখ থেকে করা এই মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া মি. ওবামা নিজে বা মার্কিন সরকার দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে তার সফরে মি. মোদী আমেরিকার ব্যবসায়ী নেতৃত্ব এবং প্রবাসী ভারতীয়দের কাছ থেকে উষ্ণ সম্বর্ধনা পেয়েছেন, যাদের মধ্যে মধ্যে সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরাও ছিলেন।
কিন্তু একইসাথে মি. মোদীর সফরের সময় তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভও হয়েছে।
তার সফরকালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৭৫ জন নেতৃস্থানীয় রাজনীতিক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে লেখা এক চিঠিতে মি. মোদীর কাছে ভারতে মানবাধিকারের ইস্যু উত্থাপনের অনুরোধ করেন। কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য – যাদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ – কংগ্রেসে মি. মোদীর ভাষণ বর্জন করেন।
মি. বাইডেনের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতে মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে করা এক প্রশ্নের উত্তরে মি. মোদী বলেন, তার সরকারের আমলে ভারতে “বৈষম্যের কোনো স্থান নেই।“
যদিও নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ বা সংবাদমাধ্যম করছে, তা নয়। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মোদীর শাসনকালে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে হিংসার ঘটনাও রয়েছে।
We hate spam as much as you do