Tranding

04:47 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪, অন‍্য সংখ‍্যালঘু সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪, অন‍্য সংখ‍্যালঘু সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা

বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন যে এর পরে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। তার এই বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই উল্লেখ করেন বিলটি পাস হওয়ার পরপরই, আরএসএস মুখপত্র অর্গানাইজার ক্যাথলিক চার্চের সম্পত্তি সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। যদিও তারা অবিলম্বে প্রবন্ধটি পরে প্রত্যাহার করে নেয়,যদিও এই প্রবন্ধের বক্তব্য অত‍্যন্ত জোর এবং স্পষ্ট ছিল।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪, অন‍্য সংখ‍্যালঘু সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪, অন‍্য সংখ‍্যালঘু সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা


অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি 
 08 Apr 2025

অনুবাদ - চিরন্তন গাঙ্গুলী 

ভারতীয় সংসদ সম্প্রতি ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস করেছে এবং মূল আইনটির নাম পরিবর্তন করে 'ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট আইন'
Unified Waqf Management, Empowerment, Efficiency and Development Act, or UMEED Act.


বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন যে এর পরে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। তার এই বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই উল্লেখ করেন বিলটি পাস হওয়ার পরপরই, আরএসএস মুখপত্র অর্গানাইজার ক্যাথলিক চার্চের সম্পত্তি সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।  যদিও তারা অবিলম্বে প্রবন্ধটি পরে প্রত্যাহার করে নেয়,যদিও এই প্রবন্ধের বক্তব্য অত‍্যন্ত জোর এবং স্পষ্ট ছিল।


ঝাড়খণ্ডের একজন মন্ত্রী তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে একইভাবে আরএসএস-বিজেপি আদিবাসী সম্পত্তিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করবে। পরবর্তী কাদের হবে? বিলের বিতর্কের সময় নীতিশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু, চিরাগ পাসোয়ান এবং জয়ন্ত চৌধুরীর মতো অ-বিজেপি এনডিএ মিত্ররাও বিজেপির সাথে একমত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের  সাথে এই বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন । তাদের দলের বা ব‍্যাক্তিগতভাবে যদি বহুত্ববাদের কোনও নীতি থাকে তবে তারা বিলটি পাস হওয়া থেকে খুব সহজেই আটকাতে পারতেন। পাস্টর মার্টিন নিমোলারের classic anguish এ বলেছেন  ফ্যাসিস্টদের পদ্ধতি হল অন্যদের সাহায্যে একের পর এক গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং তারপর, ধীরে ধীরে, অন্যান্য সম্প্রদায়কে চূর্ণ করা। ক্যাথলিক বিশপদের ক্ষেত্রেও একই রকম: তারা উৎসাহের সাথে ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে সমর্থন করেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। তারা একটা আশ্চর্যজনক মনোভাবের, ইসলামোফোবিয়ায় গভীরভাবে আক্রান্ত এবং সেই ভাবনা থেকেই  অদূরদর্শী চিন্তার ফলেই, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের এই সাম্প্রদায়িক কৌশলগুলিকে সমর্থন করছে।


ওয়াকফ হলো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মুসলমানদের দ্বারা দান করা সম্পত্তি (এমনকি অন্যরাও দান করতে পারে)। ভারতে বিশাল সম্পত্তি রয়েছে যা এই বিধানের আওতায় আসে। যদিও দাবি করা হয় যে ওয়াকফ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সম্পত্তির মালিক, কিন্তু হিন্দু ট্রাস্ট এবং মন্দিরগুলির সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বেশি। ওয়াকফ আইনের বর্তমান সংশোধনীগুলি সম্পূর্ণরূপে হিন্দুত্ববাদের  এজেন্ডা দ্বারা নির্দেশিত, যাতে ওয়াকফ বোর্ডে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে ফেলা যায়।


হিন্দু মন্দির এবং ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়াভাবে যাদের হাতে তারা ধর্মে সবাই হিন্দু। কিন্তু এখন ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমরা থাকবেন এবং সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে জেলা কালেক্টরই প্রধান কর্তৃত্ব করবেন। হিন্দু ট্রাস্ট এবং ওয়াকফের মালিকানার মধ্যে এই নতুন তৈরি করা পার্থক্য সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট, এবং সরকার এই বিষয়ে একেবারে বলপূর্বক মুসলমান সম্প্রদায়ের অংশগ্রহন ও কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ন করতে চাইছে।


সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিলটি উপস্থাপনের সময় বলেন যে, বিলটি দরিদ্র মুসলিমদের অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। ওয়াকফ ধর্মীয় ও সামাজিক উদ্দেশ্যের বিষয় ছিল। কিন্তু  দারিদ্র্য দূরীকরণ সরকারের কাজ, অথচ এই সরকার এই দায়িত্ব থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে। মুসলিম হোক বা হিন্দু হোক বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের দরিদ্র, সমস্ত সরকারি নীতি বৃহৎ কর্পোরেটদের সেবা করার জন্য পরিচালিত।


দারিদ্র দূর করা যদি তার যুক্তি  হয়, তাহলে কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মানুষের দারিদ্র্য দিয়ে শুরু করা হবে না? আমাদের হিন্দু মন্দির এবং ট্রাস্টগুলিতে প্রচুর সম্পদ রয়েছে যা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে। হিন্দুত্ববাদের  আরএসএস এজেন্ডা দ্বারা পরিচালিত এই সরকার কেন মন্দির ট্রাস্টের সম্পত্তিগুলি দরিদ্র কৃষক, বেকার যুবক এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক শ্রেণীর সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা নিশ্চিত করার কাজটি গ্রহণ করছে না?


কিরেন রিজিজু দাবি করছিলেন যে অনেক দরিদ্র মুসলিম এই উদ্যোগের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন! হাজার হাজার মুসলিম সংগঠন এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে তাদের বক্তব্য  বিজেপি মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য দেশের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা একদমই ঠিক বক্তব্য নয় যে অনেক দরিদ্র মুসলিম ওয়াকফ সংশোধনী বাস্তবায়নের সমর্থক।


গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের কথা বলতে গেলে বিজেপি এ ব্যাপারে একেবারেই চিন্তিত নয়। ভারতের মুসলমানদের দুর্দশার জন্য তাদের দৃশ্যমান অশ্রু কুমিরদের লজ্জা দেবে। কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিমরাই। রাস্তায় নামাজ পড়ার জন্য, গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে, হিন্দু উৎসবে বয়কটের জন্য অথবা করোনা জিহাদের অজুহাতে বা থুতু ফেলার জিহাদের নামে তাদের মারধর করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের পাল্টা নির্দেশ সত্ত্বেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি মুসলিম সম্পত্তির বিরুদ্ধে বুলডোজার ব্যবহার করছে


প্রধানমন্ত্রী মোদী একবার শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সংবিধানকে কপালে তুলেছিলেন কারন ঐ সময় ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারসময়  "ইন্ডিয়া" জোট তাদের প্রচারকার্যের প্রধান প্রতীক হিসেবে দেশরক্ষায় সংবিধানকেই প্রধান বিষয় করে তুলেছিল । বিজেপির কাছে, সংবিধান কেবল একটি প্রদর্শনী। উত্তর প্রদেশে ওয়াকফ বিলের বিরোধিতাকারী যেকোনো সংস্থা বা দলকে ২ লক্ষ টাকার বন্ড দিতে হবে। এই শাসন আমলে আমাদের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার কি অবস্থা একবার ভাবুন।


ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি ভারতীয় সংবিধানের বক্তব্য  অক্ষরে অক্ষরে লঙ্ঘন করেছে । পি. চিদাম্বরম এর সারসংক্ষেপ সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, "...আদালত অমুসলিমদের দ্বারা তৈরি ওয়াকফকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এবং এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। অন‍্যদিকে বিদ্যমান আইন অনুসারে, ওয়াকফ হল, মূলত, স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত। একটি রাজ্যের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল ওয়াকফ বোর্ড যার সদস্যরা সকলেই মুসলিম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুসলিম হতে হবে। বোর্ডকে তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য "ওয়াকফের নির্দেশাবলী, ওয়াকফের উদ্দেশ্য এবং ওয়াকফের যেকোনো ব্যবহার বা রীতিনীতি মেনে কাজ করতে হবে। ওয়াকফ নিয়ম সম্পর্কে জুডিশিয়াল এখতিয়ার একমাত্র সংস্থা হল একটি ট্রাইব্যুনাল যা একজন জেলা বিচারকের সভাপতিত্বে একটি জুডিশিয়াল সংস্থা।"

বিজেপির প্রবর্তিত বিলটি তার মূল উদ্দেশ্যকে পুরোপুরি ভেঙে দেবে । বলা যেতে পারে এটি সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ভয় দেখানো এবং ক্ষমতাচ্যুত করার আরও একটি পদক্ষেপ। ওয়াকফের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রশ্নটি একটি গুরুতর বিষয়। জন লোকপালের জন্য আন্না-কেজরিওয়ালের প্রচারণা দেখিয়েছে যে এই ধরণের পদ্ধতিগুলি কাজ করে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক করে কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা যেতে পারে? এটি কেবল ওয়াকফের ক্ষেত্রেই নয়, সম্পদ ও জমি নিয়ন্ত্রণকারী বেশিরভাগ ধর্মীয় সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।


ক্যাথলিকদের সম্পত্তি বিষয় নিয়ে হঠাৎ করে হৈচৈ ফেলে দেওয়া যে প্রবন্ধ অর্গানাইজার লিখেছিল সেটাই কথা মনে করিয়ে দেয় যে তাদের উপরও খুব পড়বে, যতই তারা অন্য সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষে কথা বলুন তাতে তারা নিজেদের বাঁচাতে পারবেন না
 

মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিবাদ তীব্র হচ্ছে যারা গণতান্ত্রিক এবং বহুত্ববাদে মূল্যবোধে বিশ্বাসী তাদেরও দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে সামিল হওয়া উচিত। যারা তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষমতার জন‍্য এই অবস্থা সৃষ্টি করছে, সবাই তাদের চিনতে পারছে  এবং আশা করা যায় যে আসন্ন নির্বাচন এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রে দেশবাসী তাদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে ।

Newsclick এর প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ।

Your Opinion

We hate spam as much as you do