তাহলে কি সকলেই রাজাকার? যেমন প্রশ্ন করলেই দেশদ্রোহী অথবা মাওবাদী? উত্তর হল না। বাংলাদেশ অত সহজ না। অত সরলরেখায় চলে না। প্রথমত, আমার মনে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের -'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগানকে আমরা ভুল বুঝছি। তাদের অভিমানকে পড়তে পারছি না। কারণ এই স্লোগানের পরের লাইনটাই ছিল, 'কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।' শখ করে তারা নিজেদের রাজাকার বলেনি। দুঃখ করে বলেছে, 'চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।' আমাদের এটা জেনে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিৎ, বাংলাদেশের এই প্রজন্মের অধিকাংশ প্রগতিশীল ছেলেমেয়েই 'রাজাকার' শব্দটিকে ঘৃণার চোখেই দেখেন।
বাংলাদেশ : মুক্তি বনাম যুদ্ধ
আকাশ কর ( SFI নেতৃত্ব )
22 july 2024
'বুকের ভেতর দারুন ঝড় - বুক পেতেছি গুলি কর'..... মনের আঙিনা তোলপাড় করার জন্য এ স্লোগান যথেষ্ট। সারি সারি লাশ, ভারী বুটের বেপরোয়া তান্ডব, মৃতের তালিকায় নিষ্পাপ কিশোর-যুবকের মুখ, রক্তাত্ত ছাত্রীর ভীতু মুখ - বাংলাদেশ এখন মনখারাপের কারণ, রেগে ওঠার কারণ। কিন্তু তারপর? ......
গোটা পৃথিবীর ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই। খুন লুঠপাঠের মাঝেই সবাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান সেনার ৪ লক্ষ বাঙালী মহিলাকে ধর্ষণ করার নির্মম সত্য দেখে। একটা গোটা জাতকে মুছে দেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে নেমেছিল যারা, মাছে-ভাতে বাঙালী 'বঙ্গবন্ধু'র প্রেরণায় দেশছাড়া করেছিল তাদেরই। সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভারতের সরকার। সীমানা খুলে দিয়ে সাহস জুগিয়েছিল এপার বাংলা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন থেকে যুদ্ধের রসদ জোগানো - উজাড় করে দিয়েছিল বামপন্থীরা। সেই দেশে আজ প্রবল অসুখ।
১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার দাবিতে চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উদ্যোগে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের যৌথমঞ্চ। হাসিনা তখন চীনে। এর আগেও ২০০৮ সালে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এই কোটা সংস্কারের দাবীতে। খানিকটা বিরক্ত হয়েই নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে কোটা তুলে দিলেন হাসিনা। সংস্কার করলেন না। তুলে দিলেন। এ প্রশ্ন থাকেই, আদালতে টিকবে না জেনেই কি সংস্কার না করে তুলে দিলেন! আদালতের ঘাড়ে চাপিয়ে বহাল রাখতে চেয়েছিলেন এই কোটা? বুঝতে হবে কি এই কোটা। কেন এই কোটা। ১৯৭২ সালে শিক্ষা ও চাকরিতে এই কোটা নিয়ে আসা হয়। মোট কোটা ৫৫%। তার মধ্যে ৩০% মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। ১০% মহিলাদের ও বাকিটা পিছিয়ে পড়া জেলা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। গোল বেঁধেছে ঐ ৩০% নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের বেশি অতিক্রান্ত। সেই আবেগও নেই। হয়ত নেই বাস্তবতাও। তাও সেই কোটা তুলে দেওয়ার ব্যপারে তেমন আগ্রহী হননি কেন হাসিনা, শুধু ভোটব্যাংকের জন্য? বোধহয় না। সমস্যা আরও গভীরে। ভারতে যেমন সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদে ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমশ অনুপ্রবেশ ঘটছে আরএসএসের। তারা লোক রিক্রুট করছে। সেভাবেই ওপারে অপারেট করে জামাত-হিফাজত। সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে সেই শক্তির লোক ঠেকানোর জন্যই কি এই কোটার ব্যবস্থাকে বহাল রাখতে চেয়েছিলেন হাসিনা, সে প্রশ্ন থাকতেই পারে!
এইবার ফের যাক, সিচ্যুয়েশনে। ২০১৮ এর পর ফের শুরু হল আন্দোলন। ক্রমশ তীব্র হল। বাড়তে থাকল ভিড়। ফিরেও তাকাল না সরকার। রাস্তায় বসে থাকল ছাত্রছাত্রীরা। নানা মতের নানা রঙের ছাত্রদের ঐক্যমঞ্চ। সক্রিয় হল পুলিশ। শুরু হল টুকটাক বল-প্রয়োগ। এরপর কে জানে কাদের বুদ্ধিতে স্বতস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনকে ভাঙতে নামানো হল ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে। কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেপরোয়া তান্ডব চালাল তারা। প্রথমে মার খেয়ে তারপর লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগঠিত করল ছাত্রছাত্রীরা। পরিস্থিতি পরিণত হল গৃহযুদ্ধে। এরপর নেমে এলো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। পুলিশ-সেনা-লাঠি-গুলি-কাঁদানে গ্যাস-হেলিকপ্টার-ট্যাঙ্ক বাদ গেল না কিছুই। ছাত্র আন্দোলনে নেমে এলো মুহূর্মূহ গুলি! একেকটি লাশ হয়ে উঠল অনুঘটক। ক্লাস নাইন, ইলেভেন, ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ারদের ঝকঝকে নিষ্পাপ মুখের চোখগুলো নিভে গেল, জ্বলে উঠল দেশ। পতাকার কেন্দ্রে থাকা লাল বাড়তে বাড়তে গ্রাস করতে থাকল সবুজকে। সরকার বলছে মৃত শতাধিক। সরকার বলবে না সেই অধিকের শেষ কোথায়! পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ছাত্র আন্দোলনে গুলি চললে হৃদয়ের নরম থেকে যে দুমরানো কান্না উঠে আসে এবারও তাই এলো আমাদের সবার। গোটা বিশ্বেই। ভারতে বেশি। পশ্চিমবাংলায় আরও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই .....
আমাদের ছোটবেলায় ভারতের পরেই ক্রিকেটে যারা জিতলে সবচেয়ে খুশি হতাম তারা হল বাংলাদেশ। কিন্তু টিভি বদলে এলইডি হয়েছে। সময়ও বদলে গেছে অনেক। দেশও। এখন দুপারেই দু-দেশ সম্পর্কে প্রবল বিদ্বেষ। দুই দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে দুই পক্ষেই প্রবল ঘৃণা। বাংলাদেশের খেলা থাকলে ফেসবুকেই তা বোঝা যায়। আড়ালে আছে ধর্ম, রাজনীতি, আরএসএস, জামাত ইত্যাদি ইত্যাদি। সে সময়ে খানিক অপ্রত্যাশিতভাবেই বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে ছাত্র খুনের ঘটনায় আবেগের স্রোত বইল এ বাংলায়। যেটাই স্বাভাবিক, ন্যায্য ও মানবিক। কিন্তু সময়ের চোরাস্রোতে যা আজ বিরল মনে হচ্ছে। কিন্তু এমন সময়েই সরকার বিরোধী গণ আন্দোলনের রাস্তায় যখন স্লোগান ওঠে - 'ভারত যাদের মামাবাড়ি, চেয়ার ছাড়ো তাড়াতাড়ি' - তখন কানে লাগে। কপালে ভাঁজ পড়েই। তাহলে কি আবারও এক অনন্ত সম্ভাবনার অপমৃত্যু হতে চলেছে? কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন গড়ে উঠল, তীব্র আকার ধারণ করল তখন তার সমস্ত সিম্পটম দেখে কখনই মনে হয়নি এর পেছনে জামাত,শিবির,হিফাজত ইত্যাদির মগজ আছে। ছিল না। এ আন্দোলন ছিল স্বতস্ফূর্ত, ঐক্যবদ্ধ জনোচ্ছাস। হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসন, প্রবল দুর্নীতি, বেকারি, অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের মুখ দিয়ে সারা দেশের প্রতিবাদী উচ্চারণ। কিন্তু তা থাকল কী? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয় মীর মুগ্ধ পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আগেরদিন ফেসবুকে লিখল আন্দোলন হাইজ্যাক হওয়ার আশঙ্কার কথা। বলল, যারা এতদিন আমাদের নিয়ে ভাবেনি তাদের দরকার নেই এখন এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্ররা বিবৃতি দিয়ে তাদের মধ্যে মিশে যাওয়া বিএনপি, জামাত, হিফাজতদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিল। যে ভয় পাচ্ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাই কি সত্যি হল? নাহলে ঠিক কি কারণে কারা জেল পুড়িয়ে ৮৮৬ বন্দীকে মুক্ত করা হল, যাদের মধ্যে রয়েছে জেএমবি জঙ্গী সহ বিএনপি জামাত সন্ত্রাসীরা। কারা করল। কারা কেন প্রথমেই আটকে দিল মৈত্রী এক্সপ্রেস? পরে উপড়েই নিল সেই রেললাইন। তারাই কি, যারা কদিন আগেই স্লোগান তুলেছিল, বাংলাদেশের বুক দিয়ে যেতে দেবে না পণ্যবাহী ভারতের ট্রেন? প্রশ্ন আসে। প্রশ্ন থাকে .....
এই একইভাবে কয়েকবছর আগে বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলেছিল স্কুল ছাত্ররা। একটি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে সড়ক সংস্কার আন্দোলন রূপ নিয়েছিল গণআন্দোলনে। 'রাস্তা বন্ধ, রাষ্ট্র মেরামতির কাজ চলছে'র মত বৈপ্লবিক স্লোগান লিখেছিল কিশোর কিশোরীরা! সেই অনন্ত সম্ভাবনারও সলিলসমাধি হয়েছিল রাজনৈতিক লিপ্সা থেকে যারা আন্দোলনের স্টিয়ারিং ধরতে এসেছিল তাদের জন্য! অথচ এই রোগের বিরুদ্ধে লড়েই সফল হয়েছিল শাহবাগ আন্দোলন। কারণ তার কাঠামোয় ছিল সঠিক রাজনীতি। যেকোনও পরিবর্তনই বিপ্লব নয়। বিপ্লব সেটাই যে পরিবর্তন প্রগতির পক্ষে ......
তাহলে কি সকলেই রাজাকার? যেমন প্রশ্ন করলেই দেশদ্রোহী অথবা মাওবাদী? উত্তর হল না। বাংলাদেশ অত সহজ না। অত সরলরেখায় চলে না। প্রথমত, আমার মনে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের -'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগানকে আমরা ভুল বুঝছি। তাদের অভিমানকে পড়তে পারছি না। কারণ এই স্লোগানের পরের লাইনটাই ছিল, 'কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।' শখ করে তারা নিজেদের রাজাকার বলেনি। দুঃখ করে বলেছে, 'চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।' আমাদের এটা জেনে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিৎ, বাংলাদেশের এই প্রজন্মের অধিকাংশ প্রগতিশীল ছেলেমেয়েই 'রাজাকার' শব্দটিকে ঘৃণার চোখেই দেখেন। গালাগাল হিসেবেই মনে করেন। দ্বিতীয়ত, হাসিনার আগ বাড়িয়ে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলার কি দরকার ছিল? এ প্রশ্ন আসছে। সত্যিই কি হাসিনা তাই বলেছেন? আমি মন দিয়ে হাসিনার সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনটি অনেকবার শুনলাম। দুটো বাক্য বলেছেন মুজিবকন্যা। 'রাজাকারদের নাতিপুতিরদেরই শুধু মেধা আছে না? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের নাই?' এবং 'মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের কোটা থাকবে না তো কি রাজাকারদের বাচ*.... মানে নাতিপুতিদের থাকবে?' - এই বাক্যদুটির আভিধানিক অর্থ এটা নয় যে আন্দোলনকারীরা সবাই রাজাকার। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তাই বুঝলেন। আঘাত পেলেন। হাসিনা প্রথমেই রাজাকার প্রসঙ্গ এনে ছাত্র আবেগ না বুঝে এই আন্দোলনকে বিএনপি জামাতের আন্দোলন বলে দাগিয়ে দেওয়ার নরম চেষ্টা করে যে ভুল করলেন তার খেসারত দিতে হচ্ছে, নাকি এই যে বললেন এক, সবাই বুঝল আরেক এর মধ্যে কাজ করল কোনও কোনও শক্তির নিঁখুত ন্যারেটিভ বিল্ডিং সিস্টেম! অতঃপর যা হওয়ার তাই হল। পদ্মাপাড়ের রূপসীর চোখের জলে ভরে উঠল নদী-নালা। লাল হল আকাশ। চুলের বদলে ভুলের অন্ধকারে ঢাকল নাটোরের সরলতার দেশ .....
নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ল নানা দেশ। সুযোগ খুঁজছে পাকিস্তান। তারা বদলা চায় ৭১ এর স্বাধীনতার। বাংলাদেশে পাকিস্থানপন্থীদের শাসন মানে ভারতকে আরও প্যাঁচে ফেলা। এই গোটা নেক্সাসের মাথা মোদীর বেস্টফ্রেন্ড ট্রাম্প এবং বাইডেনের আমেরিকা। ১৯৭১ এর মতই বঙ্গোপসাগরে কড়া নাড়ছে নানা দেশ আর তাদের ইন্টারেস্ট। সেবার পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকার ভারত আক্রমণের চক্রান্ত সফল হতে দেয়নি সোভিয়েতের চাপ। এখন নেই সেই সোভিয়েতও। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যাতায়াত করছেন জামাত, হিফাজতের নেতারা। সেই হিফাজত, যাদের ইশতেহারে প্রকাশ্য ঘোষণা, হাসিনা সরকার পতনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুন করা হবে আওয়ামি লিগের নেতা, শাহবাগ আন্দোলনের কারিগর এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের। যে মৌলবাদের হাতে খুন হতে হয়েছিল, মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়দের। নাস্তিকতা যাদের কাছে অপরাধ। দুর্গাপুজোর সময়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করে এরাই। হাসিনার বড় অপরাধ, তিনি খালেদা ও তারেক জিয়াদের একঘরে করার জন্য একটা বড় সময় নীরবে প্রশ্রয় দিয়েছেন জামাতকেও। যার ফলশ্রুতি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামি লিগের বিভিন্ন উচ্চপদে এখন পুরোনো জামাতিরা। শোনা যায়, হাসিনার পরিবারের অনেকে নাকি পরে নিকাহও করেছেন এমন অনেককে। ৭৫ এ মুজিবকে সপরিবার খুনের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন রাজাকার, পাকিস্থানপন্থী শাহ আজিজকে। তার নির্দেশেই প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় নিষিদ্ধ সংগঠন গোলাম আজমের জামাত-ই ইসলাম। সংক্ষেপে জামাত। যাদের উদ্যোগে এবং তৃণমূল নেতাদের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে চলছিল বোমা বাঁধার কাজ। যাদের সিস্টার কনসার্ন 'সিমি'র নেতাকে রাজ্যসভার সাংসদ বানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা লতায়পাতায় নানা নামে হাজির ছিল সিঙুর নন্দীগ্রাম পর্বে বামফ্রন্ট সরকার ফেলার ব্লু-প্রিন্ট তৈরির জন্য শুভাপ্রসন্নর রায়চকের বাগানবাড়িতে রামধনু জোটের সভায়। যেখানে উপস্থিত ছিল আমেরিকার দূতাবাসের টপ-বসেরাও। চিন্তা আসে। চিন্তা থাকে। বাংলাদেশ নিয়ে সঙ্গত কারণেই ঝড় ওঠে যে নিউজফিডে, প্যালেস্টাইনে গণহত্যার নয়া ইতিহাস গড়া হলে এতটুকু ফিনফিনে হাওয়াও কেন ওঠে না সেখানে। মানুষ তো মানুষই। খুন তো খুনই। চিন্তা আসে। চিন্তা থাকে ......
আজকের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সিংহভাগ দায় হাসিনার। তার দল। তার সরকারের। শাসকের দায় সবচেয়ে বেশি। ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রকৃত আপা'র মত ব্যবহার না করে যিনি পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছেন। খুন করেছেন। ছাত্রলীগকে খুল্লমখুল্লা মস্তানির লাইসেন্স দিয়েছেন। অহমিকা দেখিয়েছেন, মিসডিল করেছেন। কিন্তু কেন? এক রাতে গোটা পরিবার হারানোর ব্যথা যিনি জানেন তিনি কেন এই সহিংস হবেন তাও এতটুকু সব বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের প্রতি এবং যখন মনে যাই থাক সরকারিভাবে এখন আন্দোলনকারী-প্রধানমন্ত্রী-আদালত এই তিন পক্ষই কোটা সংস্কারের পক্ষে? আসলে একনায়ক হয়ে ওঠার পথে সকলেই বদলে যায়। এর আগে এদিক থেকে ওদিক হলেই ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত। বেগড়বাই দেখলেই পথ দেখিয়ে দেওয়া হত। আর এখন আরএসএসের ভারত। কূটনৈতিক জগতে বাংলাদেশের পাশে থেকেও যারা অঙ্ক কষে ওপারে ইসলামি মৌলবাদ বাড়লে এপারে বাড়বে হিন্দুত্ব। সবচেয়ে বেশি লাভ এপার বাংলায়। তাই সে ভারতও নেই আর নেই জ্যোতি বসু। যে কোনও সংকটে অভিভাবকের মত পরামর্শ দিতেন যিনি ......
জানিনা কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলন কতদূর যাবে। জানিনা যারা গুলি চালাল আর যারা সেই সুযোগে জেল পোড়াল তাদের শাস্তি হবে কিনা। কিন্তু জানি আর ফিরবে না মেধাবী তরুণ ঝকঝকে প্রাণগুলো। হয়ত, সড়ক সংস্কার আন্দোলনের পর আরও একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু হবে। এই আন্দোলন বাংলাদেশ ও দুনিয়ার মানুষকে আরও একবার শিক্ষা দিয়ে গেল সঠিক রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শাণিত নতুন এক ঐক্যবদ্ধ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির। যারা শাসককে আয়না দেখাবে। যারা বারবার শাসক সহ গোটা দেশকে মনে করাবে তোমার শেকড় কোথায়, কেন তুমি লড়েছিলে স্বাধীনতার জন্য, কেন আলাদা হয়েছিলে। প্রশ্ন জাগিয়ে রাখবে দেশের কাছে - 'সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে?' নাহলে শাসকের ঘুনধরা পচা ইকোসিস্টেম বারংবার সুযোগ পাবে 'জামাত এসে যাবে' বলে যে কোনও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনকে জনবিচ্ছিন্ন করার, দমিয়ে দেওয়ার। ঠিক যেভাবে এই অমুক এসে যাবে তমুক এসে যাবে বলে এপারেও ভোট জোগার করে নেয় নানা রাজনৈতিক শক্তি। দুই বাংলার সামাজিক প্রেক্ষাপট এখন অনেকখানি আলাদা কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থা যেন মিলেমিশে যাচ্ছে কোথাও। মানুষ মুক্তি চাইছে। আর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে শাসক এবং অন্যান্য ক্ষমতালোভী রাজনীতির কারবারিরা। উঠে দাঁড়াও বাংলাদেশ। নতুন করে ভাবো। ছক ভাঙো। নতুন ছক গড়ো। মুক্তিযুদ্ধের আগুন বুকে নিয়ে, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলার স্বপ্ন চোখে নিয়ে জোট বাঁধো। গণতন্ত্রের জন্য লড়ো। মৌলবাদকে ছুঁড়ে ফেলো। সাজো এমন করে যাতে আর ১৯৫২ থেকে ২০২৪ অবধি যা চলেছে তেমন আর একজন ছাত্রকেও বুকে গুলি নিতে না হয়। যাতে আর একটিও অনন্ত সম্ভাবনাকেও অন্ধকারে রেখে আসতে না হয়, পরাজিত হতে না হয়। বিজয় আসবেই। মুক্তি আসবেই .....
(বক্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব )
We hate spam as much as you do