সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল রোববার ভোর থেকে সারা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ চালায়। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণাঞ্চলে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া। তবে স্থানীয়রা বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহে বের হওয়া মানুষের ওপর হামলায় অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু গাজার মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতাকে প্রকাশ করেছে।
খাবার নিতে এসে গাজায় ৩২ জন সহ আরও ৭৮ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে মারল ইজরায়েল সেনা
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান আরও জোরদার করেছে। অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত সংঘটিত এই হামলায় শিশু ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩২ জন ছিলেন খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ। এই হামলায় গাজার মানবিক সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল রোববার ভোর থেকে সারা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ চালায়। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণাঞ্চলে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া। তবে স্থানীয়রা বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহে বের হওয়া মানুষের ওপর হামলায় অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু গাজার মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতাকে প্রকাশ করেছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে রোববার আল-কুদস হাসপাতালের নিকটে থাকা তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনারা আবাসিক এলাকায় “বিস্ফোরক রোবট” ব্যবহার করছে এবং মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আল-থাওয়াবতা এই কৌশলকে “ভূমি পোড়াও নীতি” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ গৃহত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। হামলার ভয়াবহতা বোঝাতে আল জাজিরা ইনস্টাগ্রামে সাংবাদিক ফায়েজ ওসামা প্রকাশিত একটি ভিডিওর উল্লেখ করেছে, যেখানে সাবরা এলাকায় বিমান হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় আহত শিশুদের কান্না শোনা যায় এবং আশপাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজা সিটিতে টানা গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে। গত শুক্রবার শহরটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করে নতুন আক্রমণ শুরুর ঘোষণা দেয়। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, বুলডোজার দিয়ে আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে দিয়ে শহরটিকে “ধ্বংসস্তূপের মাঠে” পরিণত করা হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “সেখানে কোনো প্রকৃত যুদ্ধ নেই, কেবল ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। মানুষ পালাতে পারছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।”
হামলায় সাংবাদিকদের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। রোববার আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সাংবাদিক ইসলাম আবেদ নিহত হন। গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২৪৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য সূত্রে এই সংখ্যা ২৭০ জনের বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনও ছিলেন সাংবাদিক।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অপরদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান আইয়াল জামির রোববার শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে আরও হামলা চালানোর নির্দেশ দেন এবং লড়াই জোরদার করতে বহু রিজার্ভ সেনাকে ডাকার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড দাবি করেছে, তারা শনিবার গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনাদের দুটি যানবাহনে আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি মার্কাভা ট্যাংকে ইয়াসিন-১০৫ রকেট নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি ডি-৯ বুলডোজারকে বিস্ফোরক দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
We hate spam as much as you do