Tranding

02:18 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ১৪ই এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী- আমরা দলিত,হিন্দু নই

১৪ই এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী- আমরা দলিত,হিন্দু নই

ব্রাহ্মন্যবাদী মুখের মুখোশ হল হিন্দুত্ববাদ। হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দলিতরা শুধু একটি পরিসংখ্যান মাত্র, যারা হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই কুণ্ঠিত না হয়ে জোর দিয়ে বলা যায় আমরা হিন্দু নই, আমরা দলিত।

১৪ই এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী- আমরা দলিত,হিন্দু নই

 ১৪ই এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী- আমরা দলিত,হিন্দু নই

১৪ই এপ্রিল সংবিধান প্রণেতা বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের ১৩০তম জন্মদিবস। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে তিনি সংবিধান রচনা করেন। উক্ত সংবিধানে ভারতের সকল মানুষের একটি পরিচয়ই প্রাধান্য পায়, আমরা ভারতীয়। সকল মানুষের মানবাধিকারের কথা বলা হয়, পাশাপাশি সকল মানুষকে দেওয়া হয় ভোটাধিকার। 
হাজার হাজার বছর ধরে শোষিত নিপীড়িত পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য রাখা হয় কিছু সুরক্ষাকবজ যা সংরক্ষণ নামে পরিচিত। ১৯৫২ সালে ২৬ নেভেম্বর ভারত রাষ্ট্র তাঁর সংবিধান গ্রহন করে, তারপর গঙ্গা দিয়ে আনেক জল প্রবাহিত হয়েছে। বাবা ভীমরাও আম্বেদকর ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে পরলোক গমন করেন। 

সংবিধান গ্রহনে ৬৯ বছর পরও ভারতের এক দূর প্রান্ত থেকে খবর আসে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গিয়ে মানুষটিকে খুন হতে হয়েছে, কুয়ো থেকে জল খাওয়ার অপরাধে সর্বসম্মুখে বিবস্ত্র করে বেত্রাঘাত খেতে হয়েছে এক মহিলাকে, রোহিত ভেমুলাকে প্রান দিতে হয়েছে অপমানিত হয়ে, তাঁদের একটাই অপরাধ তারা দলিত। এই সভ্য সমাজে তাঁদের স্থান তথাকথিত উচ্চু জাতিদের পায়ের নিচে, তাঁদের অপরাধ তারা বিশ্বাস করে ভারতের সংবিধান তাঁদের মানবাধিকার দিয়েছে। এই একবিংশ শতকেও ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলি তথাকথিত হিন্দু সমাজের কুৎসিত রূপ তুলে ধরে। 

স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরও হিন্দু সমাজে দলিতদের অবস্থা ও অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে পালাবদল, ৫৬ ইঞ্চ বুকওয়ালা এক কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী দেশে রাশ নিজের হাতে নিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল হঠাৎ সে সময় থেকে পুরো দেশ জুড়ে ‘হিন্দু বিপদে আছে’ হিন্দিতে ‘হিন্দু খতরে মে হে’ শ্লোগান রাজ্যে রাজ্যে আরও জোরদার হল। 

এমনকি হিন্দুত্ববাদী পার্টি বিজেপির কেন্দ্রে দীর্ঘ ৭ বছর শাসনকাল সম্পূর্ণ হতে চলল, কিন্তু তবুও হিন্দু বিপদমুক্ত হয়ে উঠতে পারল না, বরং আরও নতুন নতুন সমস্যায় হিন্দু জর্জরিত হয়ে উঠল, যেমন বাড়ির রান্নাগ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হয়ে গেল, ব্যাংকে ডিপোজিট এ সুদের হার হ্রাস পেল, দ্রব্যমুল্য আকাশছোঁয়া হল, ভগ্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা, বেকারি সমস্যা ৪৫ বছরে রেকর্ড বৃদ্ধি, এ সবই কিন্তু ভারতের আপামর জনগণ যার একটি বৃহৎ অংশ তথাকথিত হিন্দু তাঁদের জীবনকেও স্পর্শ করল, তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলল। 

এরই মধ্যে বাংলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিছু দলিতরাও এই হিন্দুত্ববাদী রাম রাজ্যত্বের সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই রাম রাজ্যত্বে দলিতের ছেলে মেয়েরা সবাই  পড়ার অধিকার পাবে তো? কারন রাম তো শম্বূকের মত দলিতের বেদ পড়াকে জঘন্য অপরাধ বলে মনে করেন । দলিতের বাড়ির মেয়েরা এই রাম রাজ্যত্বে সুরক্ষিত থাকতে পারবে তো? এই রাম রাজ্যত্বে গ্রামের কুয়ো থেকে সকলে জল খেতে পারবে তো? পায়ে জুতো পরার অপরাধে দলিতদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হবে না তো? এই রাম রাজ্যত্বে মন্দিরে আমরা সকলে প্রবেশ করতে পারব তো? আগে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে রাম রাজ্যত্বে স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের। 

কারন সমীক্ষা বলছে ভারতে যে সমস্ত রাজ্যে এই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির রামরাজ্যত্ব আছে সে সমস্ত রাজ্যেই দলিতদের অবস্থা শৌচনীয়। নির্বাচন পর্বে হিন্দু বিপদে আছে, আমরা সকলে হিন্দু, ভারতের হিন্দু এক হও শ্লোগান শুনতে ভালো লাগলেও, ভোটের পর কি আমরা সকলে হিন্দু থাকতে পারি ? 

ভোট শেষে সকলে দলিত, আদিবাসী, অচ্ছুত হয়ে যাচ্ছে। বাবা ভীমরাও আম্বেদকর দলিতদের অধিকার রক্ষার জন্য যে সমস্ত সুরক্ষাকবজ (সংরক্ষণ) সংবিধানে সংযুক্ত করেছেন, তা রামপন্থীরা স্বীকার করবেন তো? বোধ হয় নয়, কারন এই হিন্দুত্ববাদী ধারনায় দলিতদের কোন অবস্থান নেই। 

ব্রাহ্মন্যবাদী মুখের মুখোশ হল হিন্দুত্ববাদ। হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দলিতরা শুধু একটি পরিসংখ্যান মাত্র, যারা হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই কুণ্ঠিত না হয়ে জোর দিয়ে বলা যায় আমরা হিন্দু নই, আমরা দলিত। আমরা রাম নয়, আম্বেদকরের বংশধর, যিনি আমাদের মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। 

ছবি ঋণ - The Indian express

Your Opinion

We hate spam as much as you do