রবিবার পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। রক্তক্ষয় এড়াতেই পদত্যাগ বলে দাবি করেছেন তিনি। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান থেকে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান,
গত কুড়ি বছরের ইতিহাস নিয়ে এত কথা হচ্ছে। কিন্তু গত চল্লিশ বছরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হতে হবে। আফগানিস্তান ছিল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক।
স্বাধীনতার পর সীমান্ত গান্ধী বলেছিলেন তিনি পাকিস্তান নয় আফগানিস্তানে থাকতে চান। আফগানিস্তানের মেয়েদের ফুটবল টিম ছিল। সমাজতান্ত্রিক চিন্তায় প্রভাবিত। ছিল সোভিয়েত সমর্থন। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারন সম্পাদক নাজিবুল্লা দেশের সরকারে।
সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সরাসরি আফগানিস্তানে মৌলবাদকে মদত,বিপুল অর্থ সাহায্য করতে থাকে। গোপনে তৈরি হয় আল কায়দা, তালিবান। ওসামা বিন লাদেনকে সরসরি অর্থ সাহায্য করা হয়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার জোরের সাথে এঁটে ওঠেনি। নব্বই এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকে না। এবং সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার করলে তালিবান দখল নেয়। রাস্তায় মেরে লাশ ঝুলিয়ে দেয় গনতান্ত্রিক
নাজিবুল্লার। আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদতে তালিবান দখল নিয়েছিল আফগানিস্তানের।
তারপর অনেক জল গড়াল। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস হল 9/11. সমাজতন্ত্রের পিছু হটার ঠিক পরপর বিশ্বজোড়া সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। আমেরিকা এবার সন্ত্রাস দমন করতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠায়। ফ্রাঙ্কেস্টাইন হয়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদিদের দমনের নামে পুতুল সরকার বসায়। তবুও এই দীর্ঘ কুড়ি বছরে মার্কিন সেনাদের দাপটের সামনেই বিপুল শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে তালিবান জঙ্গীরা। অথচ কেউ তাদের বাধা দিল না। আশ্চর্যের বিষয়। আমেরিকা চুপ করে দেখল দেশের সরকার শক্তিহীন আর তালিবানিরা শক্তি বাড়িয়ে ফেলল। এখন দেশ দখল করে
তালিবানদের ঘোষণা, এবার থেকে দেশের নাম হবে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান
রবিবার পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। রক্তক্ষয় এড়াতেই পদত্যাগ বলে দাবি করেছেন তিনি। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও।
রবিবারই রাষ্ট্রপতি ভবনের দখল নেওয়ার পরেই কাবুলে বিস্ফোরণ হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় অসামরিক উড়ান চলাচল। তালিবানরা কাবুল কবজা করার পরেই দেশ ছাড়েন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। দূতাবাসের কর্মীদের ফেরানোর কাজ শুরু করেছে আমেরিকা, সুইৎজারল্যান্ড-সহ একাধিক দেশ। কাবুলে জারি হয়েছে কার্ফু।
কাবুলের রাস্তায় ফের তালিবানি আতঙ্ক!রবিবার সকালে দক্ষিণের জালালাবাদ দখল নেওয়ার পর, দুপুরের মধ্যে বিনা যুদ্ধে কাবুল দখল করে নেয় তালিবান।আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনীর সেনা সরতেই, গত দেড়মাসে গোটা আফগানিস্তান তালিবানের কব্জায়। গত ১৪ এপ্রিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর কথা ঘোষণা করেন।১মে থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ঠিক ৩ দিনের মাথায় সক্রিয় হয়ে ওঠে তালিবান। ৪ মে, হেলমন্দ প্রদেশ-সহ ৬ জায়গায় আফগান সেনার ওপর হামলা হয়।এরপর ধীরে ধীরে দক্ষিণ আফগানিস্তানের ট্র্যাডিশনাল স্ট্রংহোল্ড থেকে ক্রমশআফগানিস্তানের উত্তরাংশের জেলাগুলির দিকে এগোতে থাকে তালিবান যোদ্ধারা।২ জুলাই, আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি থেকে সেনা সরায় আমেরিকা। কাবুল থেকে যা মাত্র ১ ঘণ্টা দূরে।এরপর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী ক্ষমতা দখলের লড়াই।
৪ জুলাই তালিবানের তাড়া খেয়ে প্রায় কয়েক হাজার সেনা ঢুকে পড়ে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে।জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ৬৫ শতাংশই তালিবানের দখলে চলে যায়। ২৬টি প্রদেশের রাজধানী তালিবানের দখলে।১০ অগাস্ট পশ্চিম আফগানিস্তানের রাজধানী ফারাহ্, মধ্য আফগানিস্তানের বাঘলানের পুল এ কুমরি চলে যায় তালিবান কব্জায়।এর ঠিক ৩ দিনের মধ্যেই গজনি, হেরাত, কুন্দুজ এবং কন্দহরও দখল করে নেয় তালিবান। কাবুল দখলের পর তালিবানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়,তারা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চায়। কাবুলের বাগরাম বায়ুসেনা ঘাঁটির জেল থেকে হাজারখানেক তালিবান বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তবে রবিবার দিনভরই কাবুলের বিভিন্ন জায়গা থেকে গুলির শব্দ মিলেছে।
এখন দেখার কি পদ্ধতিতে সরকার চালায় তালিবানিরা। মার্কিনদেশ, রাশিয়া, চীন স্থিতিশীলতার জন্য সমঝোতা চেয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে।
We hate spam as much as you do