মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে। পুলিশ জেনেছে ১০ তারিখে। মৃত্যুতে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে ৫ তারিখে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন? দেহটাকে পুড়িয়ে দিলেন। প্রমাণ জোগাড় করবে কোথা থেকে। সত্যিই ধ’র্ষ’ণ হয়েছে না কি প্রেগনেন্ট ছিল। না অন্য কোনও কারণ হয়েছে। না কি কেউ ধরে ২টো চড় মেরেছে। শরীরটা খারাপ হয়েছে”।
‘মেয়েটার অ্যাফেয়ার্স ছিল, সত্যিই ধর্ষণ নাকি প্রেগন্যান্ট ছিল’, হাঁসখালি ধ’র্ষ’ণকাণ্ডে প্রশ্ন মমতার, দোষীকে ঢাকতে মৃতা নাবালিকার চরিত্র নিয়ে কথা
সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে এবং রাজ্যবাসীকে অবাক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁসখালি তে ঘটে যাওয়া জঘন্য ধর্ষণ খুনের চেষ্টা এবং গোপনে মৃতদেহ দাহ করে ফেলা ঘটনার মধ্যে নানান যুক্তি ও ব্যাখ্যা হাজির করলেন যা একজন অত্যন্ত সম্মানীয় পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বাঞ্ছনীয় নয় বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
‘মেয়েটার অ্যাফেয়ার্স ছিল, সত্যিই ধর্ষণ হয়েছে নাকি প্রেগন্যান্ট ছিল’, হাঁসখালি ধ’র্ষ’ণকাণ্ডে অভিযুক্তের দোষ ঢাকতে মৃতা নাবালিকার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা।
হাঁসখালিতে যে ধ’র্ষ’ণকাণ্ড ঘটেছে, তাতে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এবার এই ঘটনায় মুখ খুলে কার্যত মৃতা নাবালিকার পরিবারকেই দোষী সাব্যস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই-ই নয়, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনার জন্য বাংলা সংবাদমাধ্যমকেও তোপ দাগলেন তিনি।
মমতা কথায়, রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে এমন খবর করেছে সংবাদমাধ্যম। এদিন হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, “ঘটনাটা খারাপ। ছেলেটা অ্যারেস্ট হয়েছে। তবে মেয়েটার সঙ্গে ছেলেটার লাভ অ্যাফেয়ার ছিল বলে আমি শুনেছি”।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে। পুলিশ জেনেছে ১০ তারিখে। মৃত্যুতে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে ৫ তারিখে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন? দেহটাকে পুড়িয়ে দিলেন। প্রমাণ জোগাড় করবে কোথা থেকে। সত্যিই ধ’র্ষ’ণ হয়েছে না কি প্রেগনেন্ট ছিল। না অন্য কোনও কারণ হয়েছে। না কি কেউ ধরে ২টো চড় মেরেছে। শরীরটা খারাপ হয়েছে”।
এই ঘটনা নিয়ে মমতা দাবী তুলে বলেন, “লভ অ্যাফেয়ার্স তো ছিলই। বাড়ির লোকেরাও সেটা জানত। পাড়ার লোকেরাও জানত। এখন যদি কোনও ছেলে মেয়ে, কেউ কারও সঙ্গে প্রেম করে সেটা আটকানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ইউপি নয় যে লভ জিহাদ নিয়ে আমি প্রোগ্রাম শুরু করব। এটা তার স্বাধীনতা। তবে যদি কেউ অন্যায় করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। অ্যাকশন হয়েছে। অ্যারেস্ট করা হয়েছে। অ্যারেস্ট করার সময় কোনও কালার দেখা হয়নি”।
এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে, একথা আগেই জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের তরফে। এই কারণে সংবাদমাধ্যমের উপর তোপ দেগে মমতা বলেন, “বাংলা রাজ্যটায় সবাই তৃণমূল। তৃণমূলকে টানার কী দরকার? পার্টি শিখিয়ে দিয়েছে না পার্টি করেছে? তার বাবা যদি তৃণমূল করে, ছেলে কার সাথে কী করেছে, কী অন্যায় করেছে, তৃণমূল দেখিয়ে দিচ্ছেন”।
হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য বেশ কিছু প্রশ্নের উত্থাপন করেছে। হাথরাস ধ’র্ষ’ণকাণ্ডের সময় উত্তরপ্রদেশ সরকার ও বিজেপিকে কোনওভাবে তোপ দাগতে কসুর করেন নি মমতা। এমনকি, তিনি এও বলেছিলেন যে তিনি নিজে হাথরাসে যাবেন। আর সেই একই ধরণের ঘটনা যখন নিজের রাজ্যে ঘটেছে আর তাতে অভিযুক্তও তাঁর নিজের দলেরই এক সদস্যের ছেলে, তখন কেন সেই নির্যাতিতা যে কী না এখন আর এই পৃথিবীতেই নেই, তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় মুখে বলেন তিনি মহিলাদের জন্য অনেক প্রকল্প এনেছেন। মেয়েদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তাহলে আজ যখন এক নাবালিকার সঙ্গে এমন পরিণতি ঘটল, সেই সময় সেই নির্যাতিতা আর তার পরিবারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন মমতা। এমন সব ইস্যু নিয়ে নানান চর্চা শুরু হয়েছে নানান মহলেই।
We hate spam as much as you do