Tranding

01:16 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / রাজ্যের বিদ্বজ্জনেরা কি ভাবছেন?

রাজ্যের বিদ্বজ্জনেরা কি ভাবছেন?

বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও এই পরিবর্তনের আঁচ পাই যখন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ নেওয়া 'সবজান্তা' আলোচককে প্রশ্ন করেন - আপনি কোন সময়ে চাকরি পেয়েছিলেন, কাকে কত টাকা দিয়েছিলেন ইত্যাদি। সার্বিক এই অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে কি ভাবছেন রাজ্যের সম্পদ, আমাদের অস্মিতা প্রকৃত বিদ্বজ্জনেরা?

রাজ্যের বিদ্বজ্জনেরা কি ভাবছেন?

রাজ্যের বিদ্বজ্জনেরা কি ভাবছেন?


নিলয়কুমার সাহা ২২ জুন ২০২৩


যাঁদের কথা শুনে, লেখা পড়ে জীবন এগিয়েছে, সমাজ যাঁদের অনুসরণ এবং অনুকরণের চেষ্টা করে, ২০১১ সালের পর থেকে তাঁদের অনেকেই কেমন বেসুরো কথা  বলতে শুরু করেন। সময় যত এগিয়েছে তাঁদের অনেকেই আস্তিনে দীর্ঘ সময় সযত্মে লুকিয়ে রাখা রকমারি বাণ প্রয়োগে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রথম প্রথম হতচকিত হলেও পরবর্তী সময়ে তা সাধারণের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।


রাজ্যের বহুল প্রচারিত প্রায় সব সংবাদপত্রের উত্তর সম্পাদকীয়তে এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন 'ঘন্টাখানেক সঙ্গে ...' ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের প্রর্দশনীতে তাঁরা কেউ কেউ সামিলও হয়েছেন। প্রধানত বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন এই 'বিনোদনমূলক' অনুষ্ঠানের কল্যাণে সৃষ্ট এক 'সবজান্তার' দল হঠাৎই ওই সব বিদ্বজ্জনের বাজার দখল করে। রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশাসন, পরিবহন সহ মানব সভ্যতায় এমন কোনও বিষয় আবিষ্কৃত হয়নি, যে বিষয়ে এই নব্য সর্বজ্ঞেরা বিশেষজ্ঞের মত প্রকাশে অসমর্থ হয়েছেন। মজার কথা  রাজ্যে ঘটে চলা যে কোনও ধরণের বিপর্যয়কে আদি এবং নব্য সর্বজ্ঞেরা বাম শাসনে কতো খারাপ ছিল রাজ্যের অবস্থা সেই উদাহরণ টেনে এনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রাণপাত করতেন। ধারাবাহিক এই কাজে কেউ কেউ পুরস্কারও পেয়েছেন, কেউ কেউ এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনা সভায আমন্ত্রিত বাম প্রতিনিধিরা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিফল হতেন। অনুষ্ঠানের সর্বজ্ঞ সঞ্চালক মহোদয়ও প্রকারন্তে আনুগত্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন ক্ষমতাসীন পক্ষের দিকেই। মুদ্রণ মাধ্যম তুলনামূলক অনেক পরিশীলিত হলেও রাজ্যের অধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোতে উত্তর  সম্পাদকীয় কলমে প্রকাশিত বহু প্রবন্ধে অনেক স্বনামধন্য মানুষ সময়োপযোগী কিছু কিছু বিষয় উত্থাপন করলেও তার অধিকাংশই ছিল বৈদ্যুতিন মাধ্যমের দোষে দুষ্ট। ওই সব প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে প্রেরিত এক আধটা প্রতিবাদী চিঠি কখনও সখনও ঠাঁই পেত 'সম্পাদকীয় সমীপেষু' কলমে।


করোনা মহামারি প্রতিরোধে রাজ্য ও কেন্দ্রর সার্বিক ব্যর্থতা, প্রাণ বাজি রেখে কোভিড মহামারিতে রেড  ভলেন্টিয়ারদের নিরলস পরিশ্রম, ২০১১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কদর্য রাজনৈতিক আঁকচা আঁকচি, গণমাধ্যমের বাইনারি তৈরির খেলা, রাজ্যে অকল্পনীয় নিয়োগ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস, নবান্ন এবং রাজভবনের লুকোচুরি খেলার আবহে রাজ্যে বামপন্থার প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান জনসমর্থনের প্রেক্ষাপটে গণ মাধ্যমগুলোও একটু একটু করে অবস্থান বদল করতে শুরু করেছে। এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয় বিভিন্ন প্রথম সারির দৈনিকে 'সম্পাদকীয়' কলমে রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রশাসনিক বিষয়ে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনায়, যা ছিল কল্পনাতীত। বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও এই পরিবর্তনের আঁচ পাই যখন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ নেওয়া 'সবজান্তা' আলোচককে প্রশ্ন করেন - আপনি কোন সময়ে চাকরি পেয়েছিলেন, কাকে কত টাকা দিয়েছিলেন ইত্যাদি। সার্বিক এই অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে কি ভাবছেন রাজ্যের সম্পদ, আমাদের অস্মিতা প্রকৃত বিদ্বজ্জনেরা?

Your Opinion

We hate spam as much as you do