Tranding

03:14 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ২২শে এপ্রিল-১৫১ লেনিন এই মহামারী সময়ে প্রাসঙ্গিকতা 

২২শে এপ্রিল-১৫১ লেনিন এই মহামারী সময়ে প্রাসঙ্গিকতা 

পৃথিবীর বড় অংশজুড়ে, বিশেষ করে আমাদের দেশে সময়টা আজ অনেকটাই অন্যরকম । এই  সময়ে আবেগাহিত না হয়ে বলা যায় , লেনিনের প্রাসঙ্গিকতা বোধকরি অতীতের তুলনায় বেড়ে গেছে । 

২২শে এপ্রিল-১৫১ লেনিন এই মহামারী সময়ে প্রাসঙ্গিকতা 

২২শে এপ্রিল-১৫১ লেনিন এই মহামারী সময়ে প্রাসঙ্গিকতা 

দেড়শত বছর বা একশ বছর ( সোভিয়েত বিপ্লব)  সময়টা কম নয়। সেই সময়ের ঘটনাবলীর প্রাসঙ্গিকতা আজকের সময় বিচার করতে গেলে অনেকগুলো বাধা আসতে পারে। 

পৃথিবীর বড় অংশজুড়ে, বিশেষ করে আমাদের দেশে সময়টা আজ অনেকটাই অন্যরকম । এই  সময়ে আবেগাহিত না হয়ে বলা যায় , লেনিনের প্রাসঙ্গিকতা বোধকরি অতীতের তুলনায় বেড়ে গেছে । 
সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর থেকে বামপন্থি মহলেও রুশ বিপ্লবের ইতিহাস চর্চা বেশ স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ৭০ বছরে রুশ বিপ্লবের সমাজতন্ত্র কেন ভেঙে পড়ল সে ব্যাপারে অবশ্যই অধ্যয়ন ও গবেষণা চলতে থাকবে; কিন্তু সেজন্য নিশ্চয়ই লেনিন দায়ী নন (যার মৃত্যু ১৯২৪) বা সেই অর্থে নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যক্তি দায়ী নন ।
লেনিন ও তার সহযোদ্ধারা যখন রাশিয়ার মাটিতে জারতন্ত্রের জোয়াল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড শুরু করেন, তখন তাদের কাছে পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রায় ছিল না বললেও চলে ।
কমিউনিস্ট ইশতেহার ও পুঁজি থেকে শুরু করে মার্কস-অ্যাঙ্গেলসের অনেক রচনাই ততদিনে প্রকাশিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু প্রয়োগের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে  ছিল প্যারিস কমিউন, জার্মানির সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সীমিত অভিজ্ঞতা। এখান থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন ও বিপল্গবী কর্মকাণ্ড পরিচালনার এক ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েছেন লেনিন, যে অভিযানে তত্ত্ব ও অনুশীলন হাতে হাত রেখে এগিয়ে গেছে। 
সোভিয়েত বিপ্লবের আগে কমিউনিজম বা তার নিকটতর ও প্রাথমিক পর্যায় সমাজতন্ত্র, ছিল একটি ঘোষণাপত্র বা ইশতেহার। এক স্বপ্নের হাতছানি। এক রঙীন কল্পনা । অনেকে বলতেই পারতেন অলীক অবাস্তব । 
তাছাড়া সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা মার্কস রেখে যাননি।লেনিনের জীবদ্দশায় তার তিন দশকের অনুশীলনে এই স্পষ্ট রূপরেখা স্পষ্ট আকার গ্রহণ করতে শুরু করে। মার্কসের চিন্তাভাবনার সূত্র ধরে এক বিরাট গণউদ্যোগ, গণআলোড়ন দেশে দেশে ইতিহাসের ধারাকে ঘুরিয়ে দিতে থাকে গণতন্ত্রের পক্ষে। তত্ত্ব ও অনুশীলনের এই যুগান্তকারী সংযোগ লেনিনবাদ নামে পরিচিত হয়। যা আসলে সাম্রাজ্যবাদের যুগে মার্কসবাদ ।
শোষণবিহীন সমাজের মুক্তিকামী স্বপ্ন ও সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে নিরলস গতিময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কমিউনিস্ট অনুশীলন-লেনিনকে ফিরে দেখার অর্থ এই দুটি বিষয়ের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হওয়া। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শাসকশ্রেণির স্বার্থরক্ষার যুদ্ধকে জনতার ক্ষমতা দখলের বিপ্লবী যুদ্ধে রূপান্তরিত করার যে নির্দিষ্ট ও সফল উদাহরণ গত শতাব্দীর গোড়ার পর্বে রাশিয়াতে আমরা দেখেছি, তার হয়তো একইভাবে আর কোথাও পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির যে অধ্যয়ন লেনিন করেছিলেন আজ বিশালাকার লগ্নিপুঁজি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে তার অবশ্যই নতুন সংস্করণের প্রয়োজন। কিন্তু রুশ বিপ্লবকে যারা একটা গনতন্ত্রহীন রাষ্ট্র ও শুধুমাত্র একটা অভ্যুত্থান এবং  প্রাক-আধুনিক সমাজ থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের উদাহরণ হিসেবেই শুধু অভ্যস্ত এবং যারা ভেবেছিলেন যে পরবর্তী পর্যায়ে বুর্জোয়া গণতন্ত্র , রুশ বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা ও পরিপ্রেক্ষিতটাই বদলে দিয়েছে আজ তাদেরও নতুন করে ভাবতে হবে। বিশেষ করে শেষ পঁচিশ বছরে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট জর্জরিত বিশ্বে।

লেনিনের সময় থেকে ২০২১-এর বিশ্ব পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। কর্পোরেট এখন একটা বড় ফ্যাক্টর । মতাদর্শগত শূন্যতা, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিপদ; অন্যদিকে ভোগবাদের হাতছানি, অপরদিকে এককালের বৃহৎ
 কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর অবলুপ্তি পরিস্থিতি ও চিন্তা ভাবনার অনেকটাই বদলে দিয়েছে ।

কিন্তু এটাই আবার শেষ কথা নয়। বিশ্বায়ন, দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্ত, নয়া-উদারনীতিবাদের দাক্ষিণ্যে ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের তাড়নায় মানুষ খুঁজছে এক বিকল্প পথের সন্ধান এবং সেখানেই লেনিন আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন নতুন ভাবনায়, নতুন প্রেক্ষিতে। বিশেষ করে লেনিন যে মুমূর্ষু পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা বাজাতে চেয়েছিলেন, তা আজ কোভিড-১৯ নামের এক মহামারির জন্য বিপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। একদিকে এ মহামারি যেমন অন্তঃসারশূন্য ব্যবস্থা হিসেবে পুঁজিবাদকে প্রতিপন্ন করছে, তেমনি চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা আর কেরালার বিকল্প ব্যবস্থাপনা নতুন এক পৃথিবীর স্বপ্ন আবারও বিশ্ববাসীকে দেখাচ্ছে। পুঁজিবাদ পারে না মানুষকে রক্ষা করতে। মার্কিন দেশ থেকে ভারত সর্বত্র চুড়ান্ত ভাবে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে । আবার এদেশে দেখা দিল এই মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ । এ আরও ভয়ানক। অথচ গত পাঁচ মাস সময় পেয়ে সরকার কিছুই করেনি। অথচ সরকারের পরিষেবা ও ব্যবস্থা থাকলে তা সাজিয়ে নেওয়া যেত। সেজন্য চাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ । কোনো কর্পোরেট বা প্রাইভেট উদ্যোগ এসব পারবে না। কারন তাদের মাথায় মুনাফা ছাড়া আর কিছু নেই। তাই সকলের উপলব্ধির মধ্যে আসছে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের ব্যবস্থার কথা।

অনেকেই বলছেন, প্লেগ যেমন মধ্যযুগের পর ইউরোপের আলোকায়নকে এগিয়ে নিতে সাহায্য  করেছিল, তেমনি এ মহামারিও নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব  ঘটাবে। তখন নিশ্চিতভাবে লেনিনের প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধির মধ্যে আসবে। আর কোনো সর্টকাট নেই। 

 

Your Opinion

We hate spam as much as you do