কিছু নেই তোমাকে দেবার --- কোনো নীল জামা, কাঁসার বাসন, আখরোট কাঠের বাটি--- উত্তর প্রজন্ম --- শুধু ছাপার অক্ষরে কয়েকটি কবিতা রইল |
কবি শরৎ কুমার মুখোপাধ্যায় স্মরণে কল্লোল যুগের শেষ প্রতিনিধি বাংলার সাহিত্য জগতের শূণ্যতা
"‘আমি কিছু রেখে যাচ্ছি’, একথা বলব না, কত লোকে
পুরনো আসবাব, গ্রন্থ, ভাঙাবাড়ি, নানা আবর্জনা রেখে যায়
উত্তরাধিকার,
অকাতর আত্মকথা মিথ্যায় সাজানো |
কিছু নেই
তোমাকে দেবার --- কোনো নীল জামা, কাঁসার বাসন, আখরোট কাঠের
বাটি--- উত্তর প্রজন্ম --- শুধু ছাপার অক্ষরে
কয়েকটি কবিতা রইল |
বইপড়া মানুষের জন্য লেখা বইপড়া মানুষের কথা |
জানি না, দেখেছি কিনা তেমন অভ্রান্ত কোনো সুন্দরের ছবি
যা তোমার ঐতিহ্য চেনাবে,
অন্যদের পাশাপাশি একজীবন ক্ষুব্ধ হতাশায়
কিছু তীব্র অনুরাগ লেখা আছে, চোখে দেখা ব্যর্থতার
উদ্ধত গৌরব,
অবিমৃশ্যকারী অভিমান |
এই সব তোমাদের কাছে খুব কুন্ঠিত শোনাবে "
প্রয়াত হলেন , কল্লোল যুগের কবি
সাহিত্যিক শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ২১শে ডিসেম্বর ভোর ৩টে ৩৫ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
গত ১৫ অগস্ট ছিল কবির জন্মদিন। উত্তর-আধুনিক যুগের কবি শরৎ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সমসাময়িক। মঙ্গলবার ভোররাতে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে।
‘ত্রিশঙ্কু’ ছন্দনামে লিখতেন শরৎ। তাঁর কবিতাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘টু গড’, ‘বিরাজমোহন’। স্ত্রী ও বিখ্যাত কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় আগেই প্রয়াত হয়েছেন। কবিতায় নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছিলেন শরৎ। পালটেছিলেন বাংলা কবিতার ধরন ও উপস্থাপনা। তাঁর কবিতা থেকে পাওয়া যেত বিদ্রোহের আগুন।
কৃত্তিবাস’ পত্রিকার অন্যতম শরিক শরৎকুমারের জন্ম ১৯৩১-এ। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শরৎকুমার তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সোনার হরিণ’-এই তাঁর স্বকীয়তা দিয়ে নজর কাড়েন পাঠকদের। পরে ‘র্যাঁবো, ভের্লেন এবং নিজস্ব’ বা ‘সোনার পিত্তলমূর্তি ওই’-এর মতো কাব্যগ্রন্থে উঠে আসে নাগরিক গন্ধমাখা বিশিষ্ট উচ্চারণ। ‘কৃত্তিবাস’-কিংবদন্তির মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করা চার যুবকের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
শুধু কবিতা নয়, উপন্যাস বা ছোটগল্পেও শরৎকুমার ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সহবাস’ প্রকাশিত হয় শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। স্ত্রী-বদল নিয়ে লেখা সেই আখ্যান নিয়ে সে সময় প্রবল বিতর্ক হয় পাঠক মহলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘আশ্রয়’, ‘কথা ছিল’ বা ‘নাশপাতির গন্ধ’। পাশাপাশি ছোটগল্পও লিখেছেন শরৎকুমার। ২০০৯-এ ‘ঘুমের বড়ির মতো চাঁদ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য শরৎকুমার সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
কবি শরৎ কুমার ছিলেন কৃতি ছাত্র। গ্লাসগোতে লেখাপড়া করতে গিয়েছিলেন কবি। ছিলেন সফল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টও। তারপর একদিন সব ছেড়ে কবিতা-সাহিত্যকেই পাথেয় করে এগিয়ে নিয়ে যান। কাব্য রচনার মহাসাগরে ডুব দেন কবি। কৃত্তিবাস পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ভীষণরকম। ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের দারুণ বন্ধু। এছাড়াও বুদ্ধদেব গুহ, দিব্যেন্দু পালিতের সখা ছিলেন শরৎ।
তাঁর প্রয়াণে শোকাহত বাংলার সাহিত্য জগৎ। এক নক্ষত্রের পতন হল। (২১.১২.২০২১) এক যুগের অবসান ঘটল ।।
‘
We hate spam as much as you do