গতকাল, বড়দিনে কেন্দ্রীয় সরকার মাদার টেরিজার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতে সংস্থার সমস্ত অ্যাকাউন্ট তো বন্ধ করেইছে, হাতে থাকা নগদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সংস্থার রোগী এবং কর্মী মিলিয়ে সংস্থার ২২ হাজার মানুষ খাদ্য এবং পথ্যহীন হয়ে পড়েছেন।’
মাদার টেরিজার সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট 'ফ্রিজ', কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, সরব মমতা -সূর্যকান্ত - শশী থারুর
অস্বস্তি বাড়তে চলেছে মোদী সরকারের। মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়ার অভিযোগ। সমস্ত অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এহেন নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের তরফে। আর তা সামনে আসার পরেই কার্যত হুলস্থুল কাণ্ড। এমনকি শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা।
এমনকি এই ঘটনায় স্তম্ভিত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইতিমধ্যে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়াতে বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
যদিও কেন অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেন্দ্রের তরফেও এই বিষয়ে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। এমনকি বিষয়টি মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ শুনলেও এখনও পর্যন্ত তাঁরা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ফলে খবরের সত্যতা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে।
কিন্তু বড়দিনের পরেই কেন্দ্রের এই নির্দেশের ফলে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ধর্মান্তরিত করার এক অভিযোগ উঠেছে সংস্থার বিরুদ্ধে। তা নিয়ে এফআইআরও হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত কিনা তা স্পষ্ট নয়।
মাদার টেরিজা হাত ধরে তৈরি হয় মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ। দুঃস্থ, দরিদ্র মানুষের সেবায় কাজ করে এই সংস্থা। মানবতাই ধর্ম। আর মানুষকের সেবা করার মধ্যে দিয়েই পাওয়া যায় ঈশ্বর। এই বিশ্বাসকে পাথেও করে নিরন্তর কাজ করে চলে মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ। একেবারে বিনামূল্যে মানুষকে চিকিৎসা থেকে শুরু করে শিশুদের পড়াশুনা, খাওয়া দাওয়া সবটাই হয়। আর সেখানে দাঁড়িয়ে এই নির্দেশ ঘিরেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় বিতর্ক।
জানা যাচ্ছে, সংস্থার সমস্ত অ্যাকাউন্ট আপাতত ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়। সমস্ত অ্যাকাউন্টে যাবতীয় লেনদেনও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্যার মধ্যে পড়েছে মাদার টেরিজার তৈরি এই সংগঠনটি। প্রায় ২২ হাজার রোগীর চিকিৎসার ভার এই সংস্থার উপরে।
শুধু তাই নয়, অনেকেই এই চ্যারিটিজের অধিনে কাজ করে। ফলে আটকে যেতে পারে তাঁদের বেতন। এমনকি বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার সরবরাহে বিঘ্ন হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আর এই খবর সামনে আসার পরেই টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নির্দেশে তিনি স্তম্ভিত বলে দাবি করেছেন। সমস্ত কর্মচারী এবং রোগিদের কীভাবে চলবে তা নিয়েও ওই টুইটের মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংস্থার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেনি। বিদেশি অনুদান আইনে অনুমোদনের পুনর্বীকরণ হয়নি। তা নিয়ে এসবিআই-এর সঙ্গে চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে সংস্থার।
মাদার টেরিজা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অফ চ্যারিটির (Missionaries of Charity) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের। বড়দিনের আবহে কেন্দ্রীয় এমন সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি স্তম্ভিত বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর কথায়, এতে মাদার টেরিজাকে অসম্মান করা হল।
বড়দিনের আবহে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সমস্ত অ্যাকাউন্ট কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর সামনে আসে। জানা যায়, তদন্তে স্বার্থে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। এ নিয়ে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তারা। তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায় না।
যদিও সন্ধ্যা গড়াতে পিআইবি-র তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের কোনও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেনি। বিবৃতিতে বলা হয়, 'মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। অ্যাকাউন্ট বন্ধের জন্য এসবিআই-কে চিঠি পাঠায় এমওসি-ই। বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে অনুমোদন বাতিল হয়ে যায়। তার আবেদনে অসঙ্গতি ছিল। বাতিল হওয়ার পর নতুন করে আবেদন জানানো হয়নি'। তবে দিন ভর এই নিয়ে টানাপড়েনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান রাজনীতিকরা।
সোমবার বিষয়টি চাউর হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন। টুইটারে লেখেন, ‘বড়দিনে কেন্দ্রীয় সরকার মাদার টেরিজার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে জেনে স্তম্ভিত আমি। ২২ হাজার রোগী এবং কর্মী খাদ্য এবং পথ্যহীন হলেন। আইন অবশ্যই সর্বোপরি, কিন্তু মানবিকতার সঙ্গে এমন আপস চলে না।”
এ দিন বিকেলে মমতার সেই টুইটটিই রিপোস্ট করে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে দেখা যায় তারুরকে। তিনি লেখেন, ‘মাদার টেরিজা নোবেল পুরস্কার জিতলে গোটা দেশ তা উদযাপন করে। কিন্তু দরিদ্র-দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিয়োজিত তাঁর সংস্থারই তহবিল বন্ধ করে দিল কেন্দ্র। অসম্মানজনক।’
সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, ‘খবর দেখে স্তম্ভিত আমি। গতকাল, বড়দিনে কেন্দ্রীয় সরকার মাদার টেরিজার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতে সংস্থার সমস্ত অ্যাকাউন্ট তো বন্ধ করেইছে, হাতে থাকা নগদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সংস্থার রোগী এবং কর্মী মিলিয়ে সংস্থার ২২ হাজার মানুষ খাদ্য এবং পথ্যহীন হয়ে পড়েছেন।’
এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্চডায়োসিজ অফ কলকাতা বলেন, "বড়দিনে গরিবদের জন্য সরকারি সংস্থার নিষ্ঠুর উপহার। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক এই আঘাত নিন্দনীয়। দেশে জুড়ে ২২ হাজারেরও বেশি মিশনারিজ অব চ্যারিটির উপর নির্ভরশীল।"
মানবিকতার নজির রাখার আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
We hate spam as much as you do