পরিবার এক অপরিহার্য ব্যবস্থা। যদিও এই ধারনা বদলাচ্ছে । সামন্ততান্ত্রিক যুগে কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিবার ছিল বিরাট। আর এই ধনতান্ত্রিক সমাজে ক্রমশ তা ভাঙতে ভাঙতে হয়েছে ছোট পরিবার সুখী পরিবার । যদিও তা ঠিক কিনা প্রশ্ন আছে । যে পরিবারের একজনের ওপর নির্ভরতা , তা নষ্ট হলে যখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তখন এই ধরনের মাইক্রো ফ্যামিলির ধারনা একেবারেই বেঠিক মনে হয় ।
১৫ মে - মহামারী কালে" বিশ্ব পরিবার দিবস"
১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল।
পরিবার এক অপরিহার্য ব্যবস্থা। যদিও এই ধারনা বদলাচ্ছে । সামন্ততান্ত্রিক যুগে কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিবার ছিল বিরাট। আর এই ধনতান্ত্রিক সমাজে ক্রমশ তা ভাঙতে ভাঙতে হয়েছে ছোট পরিবার সুখী পরিবার । যদিও তা ঠিক কিনা প্রশ্ন আছে । যে পরিবারের একজনের ওপর নির্ভরতা , তা নষ্ট হলে যখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে
তখন এই ধরনের মাইক্রো ফ্যামিলির ধারনা একেবারেই বেঠিক মনে হয় ।
যাই হোক আজ পরিবার দিবসে মনে হয় যে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই সময়ে পরিবারের অবস্থা ।
পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। তাঁদের দেখাশোনা করতে পারেন না। করোনা সেই অভিযোগের পরিসর খানিকটা মিটিয়ে দিয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু একহাত দিয়ে যেমন দিচ্ছে, অন্য হাত দিয়ে তেমন কেড়েও নিচ্ছে। সংবাদপত্র, টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই খালি স্বজনহারানো বেদনা। এই সময়ে যদি পরিবারকে আরও বেশি করে আঁকড়ে না ধরেন, তবে আর কবে?
নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের স্বাক্ষরবহ।
তবে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিলক্ষিত হয়। শিল্প বিপ্লবের পরে পরিবারের ধরন ও ভূমিকা পাল্টাতে থাকে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থা থেকে ক্রমশ ব্যক্তিকেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবার বা যৌথ পরিবার ব্যবস্থা থেকে একক বা নিউক্লিয়ার পরিবার। সমাজবিজ্ঞানী ফলসমের মতে ‘একক’ পরিবারের অন্যতম তিনটি কারণ যেমন স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা, অলাভজনক শিশুশ্রম এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক অনটন, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ।
পরিবারের অপরিহার্যতার তুলনা নেই। মুলত সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে শিশুকে মানিয়ে চলার অভ্যাস তৈরি হয় পরিবার থেকে । কার কোন পরিবারে জন্ম হল তার থেকেও বড় কথা কোথায় শিশুটি বড় হচ্ছে । কোন সংস্কৃতি সে আয়ত্ত করছে। তার শিক্ষাদান অর্থনৈতিক অবস্থান তার ভবিষ্যত নির্মাণ করে দেয়। যে শিশুটি ভবিষ্যতের নাগরিক, তার মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে।
মুসলমানের সন্তান হিন্দু বাড়িতে বড় হলে তার অভ্যেস জন্ম অনুসারে হয় না ঐ পরিবার অনুসারে হয়। ঠিক তেমনি হিন্দুর ছেলে মুসলিম বাড়িতে সেখানকার মুল্যবোধেই গড়ে উঠবে। রবীন্দ্রনাথের "গোরা" উপন্যাসের কথা মনে করা যেতে পারে। দেশ পরিচালনার জন্য যেমন সংবিধান বা নিয়ম থাকে পরিবার পরিচালনার নিয়ম থাকা উচিত কি ? তা লিখিত না হলেও খানিকটা অলিখিত আছে।
শেষমেশ বলা যায় বিশ্ব পরিবার দিবসে এটাই বরং আবেদন থাক , গোটা সমাজকেই পরিবার হিসেবে দেখার জন্য উপযুক্ত শিক্ষার আয়োজন থাক প্রতিটি পরিবারে। যেখানে বৃদ্ধদের বৃদ্ধাশ্রমের বাধ্যতা বা শিশুদের যান্ত্রিকতা থাকবে না।
এই সময় করোনা মহামারীর আতঙ্কের থেকেও সবচেয়ে বড় সংকট রোজগারের সংকট । পরিবারের শিক্ষা হোক অবশ্যই শারীরিক দুরত্ব মেনে সামাজিক বন্ধন অটুট রেখে বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংস্কৃতি আয়ত্ত করা ।
ছবি- আনন্দ আলো
We hate spam as much as you do