Tranding

05:13 PM - 01 Dec 2025

Home / World / 'ক্রিপ্টো রোম্যান্সে'র ফাঁদে USAতে ভারতীয় মহিলা সর্বস্বান্ত

'ক্রিপ্টো রোম্যান্সে'র ফাঁদে USAতে ভারতীয় মহিলা সর্বস্বান্ত

ক্রিপ্টোকারেন্সির এই নতুন ধরনের 'রোমান্স স্ক্যাম'-এর শিকার হওয়া শ্রেয়া দত্ত শুধু তার সারা জীবনের সঞ্চয়ই হারিয়ে ফেলেননি, তিনি ঋণে ডুবে গিয়েছেন। এই আধুনিক প্রযুক্তি কেলেঙ্কারিতে, শিকারীরা ডিপফেক ভিডিও এবং অন্যান্য পদ্ধতিগুলি এমনভাবে ব্যবহার করছে যে শ্রেয়া বলেছেন, তার মনে হয়েছিল যে কেউ "তার মস্তিষ্ক হ্যাক করেছে।"

'ক্রিপ্টো রোম্যান্সে'র ফাঁদে USAতে ভারতীয় মহিলা সর্বস্বান্ত

'ক্রিপ্টো রোম্যান্সে'র ফাঁদে USAতে ভারতীয় মহিলা সর্বস্বান্ত 

মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪,

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া নিবাসী বছর আটত্রিশের এই আইটি কর্মী ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রেয়া দত্ত ক্রিপ্টো কারেন্সি কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন এবং তার সমস্ত সঞ্চয় হারিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে একজন ওয়াইন ব্যবসায়ী সেজে ইন্টারনেটে শ্রেয়া দত্তের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেন। তারপর একদিন তিনি ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসকারী ৩৭ বছর বয়সী শ্রেয়া দত্তকে রীতিমত প্রতারণার মুখে ফেলেন। এই ধাক্কার মূল্য ছিল ৪.৫ লক্ষ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২.৫ কোটি টাকা।

ক্রিপ্টোকারেন্সির এই নতুন ধরনের 'রোমান্স স্ক্যাম'-এর শিকার হওয়া শ্রেয়া দত্ত শুধু তার সারা জীবনের সঞ্চয়ই হারিয়ে ফেলেননি, তিনি ঋণে ডুবে গিয়েছেন। এই আধুনিক প্রযুক্তি কেলেঙ্কারিতে, শিকারীরা ডিপফেক ভিডিও এবং অন্যান্য পদ্ধতিগুলি এমনভাবে ব্যবহার করছে যে শ্রেয়া বলেছেন, তার মনে হয়েছিল যে কেউ "তার মস্তিষ্ক হ্যাক করেছে।"


অনলাইন ডেটিং অ্যাপে লোকটির ছবি দেখে ‘নিরাপদ’ বলেই মনে হয়েছিল শ্রেয়া দত্তের।  বুঝতেই পারেননি, এক নির্মম প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। যখন বুঝলেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। প্রতারকের পকেটে চলে গিয়েছে তাঁর সারা জীবনের জমানো পুঁজি।  কপর্দকশূণ্য হয়ে এখন এফবিআই ও সিক্রেট সার্ভিসের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে এইধরনের প্রতারণার ঘটনাকে আমেরিকায় ‘পিগ বুচারিং’ নামে ডাকা হয়। বিবাহ বিচ্ছিন্না শ্রেয়ার একাকিত্বে ভরা তাঁর গুমোট জীবনে দমকা হওয়ার মতোই এসেছিল আনসেল। ডেটিং অ্যাপে ওই ব্যক্তি নিজেকে ফরাসি ওয়াইন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়। গতবছর জানুয়ারি থেকে শ্রেয়া-আনসেলের মেসেজ চালাচালি শুরু হয়। আনসেলের সুন্দর হাসি, মার্জিত ভাষা, ইমোজি ভরা মেসেজে তার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয় শ্রেয়ার। কয়েকদিনের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরও আদানপ্রদান হয়ে যায়। তারপর সেলফি পাঠানো, ছোট ছোট ভিডিও কল চলতে থাকে। যদিও পরে শ্রেয়া বুঝতে পারেন, ওই ভিডিও কল ও সেলফি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ঘনিষ্ঠতা আরও একটু বাড়তেই একদিন আসল ‘টোপ’ ফেলে আনসেল। কথায় কথায় সে শ্রেয়াকে জানায়, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করে সে নিজের অবসর জীবনের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে ফেলেছে। শ্রেয়াও যেন তার পথেই এগন।
এরপরের ‘মোডাস অপারেন্ডি’ চেনা ছকেই এগিয়েছে। প্রথমে লিঙ্ক পাঠিয়ে শ্রেয়াকে একটি ক্রিপ্টো অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। তারপর ওই অ্যাপে মার্কিন ক্রিপ্টো সংস্থা কয়েনবেস-এর মাধ্যমে কিছু টাকা ক্রিপ্টোতে বদলে নেন শ্রেয়া। প্রথমদিকে লাভের টাকা ওই অ্যাপ থেকে তুলেওছিলেন তিনি। আত্মবিশ্বাস একটু বাড়তেই শ্রেয়া আরও বেশি টাকা সেখানে লগ্নি করতে শুরু করেন। একসময় আনসেল তাঁকে ঋণ নেওয়ার কথা বলে। প্রেমে বিভোর শ্রেয়া সেটাও করেন। একসময় তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায়। এরই মধ্যে একদিন ‘কয়েনবেস’ থেকে একটি ই-মেল পান শ্রেয়া। সেখানে বলা হয়, তাদের কাছে টাকা ভাঙিয়ে যে ক্রিপ্টো কিনেছিলেন শ্রেয়া, সেগুলি ভুয়ো অ্যাপে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শ্রেয়ার। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আনসেল নামে ওই ব্যক্তির কোনও অস্তিত্বই নেই। যার ছবি তার প্রোফাইলে দেওয়া রয়েছে তা এক জার্মান ইন্টারনেট তারকার। এরপরই মানসিক অসুখ পিটিএসডি গ্রাস করে তাঁকে। আপাতত ঋণ পরিশোধ করতে নিজের বাড়িটি ভাড়ায় দিয়ে তুলনায় ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন শ্রেয়া। আর খোয়া যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের আশায় দিন গুনছেন।

Your Opinion

We hate spam as much as you do