Tranding

04:40 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / ৯/১১ : টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ২১ বছর 

৯/১১ : টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ২১ বছর 

বহুদিন আগে থেকেই আফগানিস্তানের প্রগতিশীল শাসক নাজিব্বুল্লা সোভিয়েত সহযোগিতায় উন্নত দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তাই চরম মৌলবাদী শক্তি ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আল কায়দা  গড়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত‍্যক্ষভাবে এই গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করতে থাকে। শেষে সোভিয়েতের ক্ষমতাহীন হয়ে যাওয়ার ফলে আফগানিস্তানে নাজিব সরকার দূর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগেই তালিবানরা ক্ষমতা দখল করে। এবং নৃশংসভাবে গাছে ফাঁসি দিয়ে নাজিবুল্লাকে হত‍্যা করে। এই সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের পক্ষেই ছিল। কিন্তু ক্রমশ মার্কিন সাম্রাজ‍্যবাদের কথা না শোনার প্রবনতা লক্ষ করা যায়। সন্ত্রাসী মৌলবাদ গোটা পৃথিবীতেই সভ‍্যতার বিপদ হিসেবে দেখা যায় এবং ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়। 

৯/১১ : টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ২১ বছর 

৯/১১ : টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ২১ বছর 


১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২


আজ ২১ বছর পূর্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্টের চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে। এ ঘটনায় নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এটি ছিল শতাব্দীর অন্যতম  ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু মার্কিনিদেরই নয়, গোটা বিশ্বকে চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতা। ৯/১১-এর ভয়াবহ স্মৃতিকে সামনে রেখে এবং মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রতি জানিয়ে বছরের মতো এবারও অর্ধনমিত রাখা হয়েছে মার্কিন পতাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শোক অনুষ্ঠানের
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পৃথিবীতে সমাজতান্ত্রিক প্রভাব অনেক কমে যায়। 

 

তার ফলে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদ বা তার এক আগ্রাসী রূপ সাম্রাজ‍্যবাদ শক্তিমান হয়ে ওঠে। সেই সাম্রাজ‍্যবাদের সর্বোচ্চ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা চায় গোটা দুনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শেষ প্রভাবটাও শেষ করে দিতে। বহুদিন আগে থেকেই আফগানিস্তানের প্রগতিশীল শাসক নাজিব্বুল্লা সোভিয়েত সহযোগিতায় উন্নত দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তাই চরম মৌলবাদী শক্তি ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আল কায়দা  গড়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত‍্যক্ষভাবে এই গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করতে থাকে। শেষে সোভিয়েতের ক্ষমতাহীন হয়ে যাওয়ার ফলে আফগানিস্তানে নাজিব সরকার দূর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগেই তালিবানরা ক্ষমতা দখল করে। এবং নৃশংসভাবে গাছে ফাঁসি দিয়ে নাজিবুল্লাকে হত‍্যা করে। এই সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের পক্ষেই ছিল। কিন্তু ক্রমশ মার্কিন সাম্রাজ‍্যবাদের কথা না শোনার প্রবনতা লক্ষ করা যায়। সন্ত্রাসী মৌলবাদ গোটা পৃথিবীতেই সভ‍্যতার বিপদ হিসেবে দেখা যায় এবং ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়। 

 


৯/১১-এ ছিনতাইকারীরা ছোট ছোট দলে পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথ দিয়ে ওড়া চারটি বিমান একইসাথে ছিনতাই করে। তারপর বিমানগুলো তারা ব্যবহার করে নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আঘাত হানার জন্য বিশাল ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে। দুটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে। দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির ওপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১শ’ ১০ তলা। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে।

 

এরপর, চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার এক মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনের ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিল। হামলাগুলোতে সব মিলিয়ে মারা গিয়েছিল ২ হাজার ৯শ’ ৭৭ জন (১৯ জন ছিনতাইকারী ব্যতীত)। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের লোক। চারটি বিমানের ২শ’ ৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুরা প্রত্যেকে মারা যান। টুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে তাৎক্ষণিক ও পরে আঘাত থেকে মারা যান ২ হাজার ৬শ’ ৬ জন। পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন।


প্রথম বিমানটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭,৪০০’ লোক ছিল। নর্থ টাওয়ারের যে অংশে বিমান আঘাত করে, তার উপরের কোন তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি। তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে বিমান আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বেরুতে পেরেছিল। হতাহতের মধ্যে ৭৭টি দেশের মানুষ ছিলেন। নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় দৌড়ে যান, তাদের মধ্যে মারা যান ৪৪১ জন। হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যারা পরে নানাধরনের অসুস্থতার শিকার হন। যেমন দমকলকর্মীদের অনেকে বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।


উগ্র মতাদর্শের সংগঠন আল-কায়দা আফগানিস্তান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোকে। ওই হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আফগানিস্তান আক্রমণ করেন আল-কায়দাকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন এ অভিযানে যোগ দেয় আন্তর্জাতিক মিত্র জোট। যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর পর ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যরা অবশেষে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এবং তাকে হত্যা করে। নাইন ইলেভেন হামলার অভিযুক্ত পরিকল্পনাকারী, খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানে ২০০৩ সালে। এর পর থেকে তাকে গুয়ান্তানামো বে’র বন্দীশিবিরে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে আটক করে রাখা হয়। এখনও এই বিচার সম্পন্ন হয়নি। 
যদিও এর পর থেকে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে ইরাক সহ বহু দেশে মার্কিন আগ্রাসন বাড়লে সন্ত্রাসবাদের কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। 
গতবছর দীর্ঘ কুড়ি বছর পর আচমকা জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত‍্যাহার করলে আবার তালিবানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। নিঃসন্দেহে সভ‍্যতার ক্ষেত্রে এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত এক গুরুতর সমস‍্যার সৃষ্টি করে। 

Your Opinion

We hate spam as much as you do