১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে একটি শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই শ্রমিক সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমজীবী মানুষ নিহত হন। শ্রমজীবী মানুষের এই আত্মত্যাগ সারাবিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তোলে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবির এই যৌক্তিক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
মে দিবসঃ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন
১লা মে ২০২৪
আজ মহান মে দিবস। দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। সকল শ্রমিকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। দিনটি সকল শ্রমজীবী মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিন। মে দিবসের রয়েছে একটি বেদনাদায়ক ইতিহাস। এই দিনেই শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। এই বেদনাবহ দিনটির ওপর ভিত্তি করেই শ্রমজীবী মানুষ আদায় করতে পেরেছিল তাদের অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও দৈনিক একটি সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। এই দিনটির মাধ্যমেই শ্রমিকরা পেয়েছিল তাদের অধিকার আদায়ের ভিত্তি ও পুঁজি।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে একটি শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই শ্রমিক সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমজীবী মানুষ নিহত হন। শ্রমজীবী মানুষের এই আত্মত্যাগ সারাবিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তোলে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবির এই যৌক্তিক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৯০ সালে শিকাগোর শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে পালনের প্রস্তাব করা হয়। মূলত সেই সময় থেকেই পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের একটি সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আদায় এবং শ্রমিক-মালিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর মে মাসের ১ তারিখ বাধ্যতামূলক কাজ না করা, ওই দিন সকালে মিছিল, শোভাযাত্রার আয়োজন করার জন্য বিশ্বের সকল শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নকে আহ্বান জানানো হয়।
১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর মে দিবস বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমারোহে পালন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে সরকারিভাবে মে দিবস পালিত হয়। ৮০টি দেশ ব্যতীত বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মে দিবস বেসরকারিভাবে পালিত হয়। অবশ্য যে শিকাগো শহরে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই মে দিবসের সূচনা সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পার্শ্ববর্তী দেশ কানাডায় এখনো মে দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয় না।
মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শ্রমিকরা তাদের উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা পেয়েছে। কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টায় নেমে এসেছে। মে দিবসের মাধ্যমেই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং কমতে শুরু করেছে সামাজিক বৈষম্য।
মে দিবসের সকালে এখনো দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে কাজের সন্ধানে বের হতে। কারণ দৈনিক কাজে না বেরোলে পরিবারের আহার যোগানো সম্ভব হয় না অনেক মানুষের।
এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের বাধ্যবাধকতা মানা হয় না। আমাদের পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে। এসব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষেত্রে আট ঘণ্টার বেশি কাজ হয় প্রতিদিন। এই অতিরিক্ত কাজের মূল্য ঠিকমতো পরিশোধ করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকেই ওভারটাইম করতে রাজি না থাকলেও বাধ্য হয়ে তা করতে হয়। এই অতিরিক্ত সময়ের টাকা দিতেও মালিকপক্ষের নানারকমের ছলচাতুরী করার প্রবণতা দেখা যায়। এই চিত্র শুধু পোশাক খাতে নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সত্য।
অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর পরও অনেক প্রতিষ্ঠান দেয় না শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক ও ওভারটাইম। প্রতিবছর এখনো দেখা যায় ন্যায্য বেতন ও বোনাসের দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় আন্দোলন-বিক্ষোভ করছেন। ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল মার্চ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী কারখানাটির শ্রমিকরা ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে শিল্প পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক ও ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৩০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা হয়।
ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে মামলা খেতে হলো শ্রমিকদের। মালিক কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার যথাযথ পূরণ করা। শ্রমিকদের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। শ্রমিকদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাতে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব, যা সার্বিক অর্থে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নিত হবে।
সমস্যা সমাধানে শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক-মালিককে একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই মে দিবসের সত্যিকারের চেতনা ও গুরুত্ব বাস্তবায়ন হবে। মে দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন হলে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। শ্রমিকরা তাদের যথাযথ পারিশ্রমিক ও মর্যাদাপ্রাপ্ত হবেন। দেশের অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধিশালী।
We hate spam as much as you do