Tranding

02:15 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / HMPV নতুন ভাইরাস নয়। সতর্ক থাকুন ,আতঙ্কিত নয়, গুজবে কান দেবেন না

HMPV নতুন ভাইরাস নয়। সতর্ক থাকুন ,আতঙ্কিত নয়, গুজবে কান দেবেন না

HMVP সংক্রমণের লক্ষণগুলি কি কি? ফি বছরের পাত্তা না পাওয়া অতি সাধারণ ফ্লু-এর মতই কার্যত HMVP র রোগ লক্ষণ - ১) নাক দিয়ে জল পড়া, ২) গলা বসে যাওয়া, ৩) কাশি, ৪) হ্রস্ব শ্বাস, ৫) জ্বর, এবং ৬) গা-ময় আমবাত ইত্যাদি। মনে রাখা ভাল সাধারণ ভাবে ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং শরীরে একবার এই ভাইরাসের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দিন তিনেক, খুব বেশি হলে হপ্তা খানেক পার হতে না হতেই নিজে থেকেই এরা কেটে পড়ে; পরিভাষায় যে ঘটনার গালভরা নাম শেডিং। তবে সমস্যা হয় তাদের নিয়েই বেশি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা - বিভিন্ন অটো-ইমিউনড্ ডিজিজ, হাঁপানি, সিওপিডি বা এতদৃশ নানা রোগের কারনে সাধারণের তুলনায় অনেক খানি কম। এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর ওপরের অংশের (Upper Respiratory Tract) থেকে খুব দ্রুত নিচের অংশে ফুসফুসের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। একমাত্র সেক্ষেত্রেই নিউমোনিয়া জাতীয় লক্ষণ রোগীকে বেশ কাবু করে ফেলতে পারে। তবে এ রোগে মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

HMPV নতুন ভাইরাস নয়। সতর্ক থাকুন ,আতঙ্কিত নয়, গুজবে কান দেবেন না

HMPV নতুন ভাইরাস নয়। সতর্ক থাকুন ,আতঙ্কিত নয়, গুজবে কান দেবেন না

বাসব বসাক
৬/০১/২০২৫
 

ইদানিং নিউজ চ্যানেল গুলো তাদের মিইয়ে যাওয়া সংবাদ-ব্যবসাকে চাঙ্গা রাখতে হঠাৎই কোভিডের পর আবার এক নয়া চিনা ভাইরাসের আগমন নিয়ে আসর গরম করা শুরু করেছে। সে ভাইরাসের নাম নাকি HMPV (Human Meta Pneumo Virus)।  এও শোনা যাচ্ছে ২০২৪ এর শেষ লগ্নে আবির্ভূত এই নব্য ভাইরাসটির দাপটে দিশেহারা চিন নাকি নতুন ক'রে লাল সতর্কতা জারি করতে বাধ্য হয়েছে। একরাশ আতঙ্ক ছড়িয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে চিল চিৎকার চলছে এহেন 'রাক্ষুসে' নয়া ভাইরাস ভারতে এই বুঝি ঢুকে পড়লো! কিন্তু আদতে কি ঘটনা তাই? আসুন আমাদের মত করেই খানিক বুঝে নেওয়া যাক HMPV র আদ্যোপান্ত।

HMPV কি আদৌ হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া আনকোরা নতুন কোনো ভাইরাস?

তা কিন্তু মোটেই নয়। অনেকটা পাখিদের Avian Meta Pneumo Virus গোত্রীয় RNA র একক তন্তু বিশিষ্ট এই রাইবোভাইরাসটি আজ থেকে ২৪ বছর আগে, হল্যান্ডের মাটিতে সেই ২০০১ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ২০১৬ সালে রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের (RSV) পরেই শিশুদের শ্বাসনালীর সংক্রমনের জন্য দুনিয়া জুড়ে সব থেকে বেশি দায়ী কিন্তু এই  HMPV ভাইরাসটিই। 

এটা অবশ্য ঠিকই যে চিনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ দপ্তর প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম তথ্য বলছে গত ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়কালে সে দেশে শ্বাসতন্ত্র জনিত অসুখ বিসুখ লাফিয়ে বেড়েছে। শ্বাসতন্ত্রের অসুখে আক্রান্তদের মধ্যে অন্ততঃ ৬.২ শতাংশের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে HMVP র সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগসাজশ। ও দেশের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেল্থের নির্দেশক কান বিয়াও জানিয়েছেন ১৪ বছরের কম বয়সীরাই এই ভাইরাসের মূল টার্গেট। সব থেকে বেশি আক্রান্ত এক বছরেরও কম বয়সী শিশুরা।  তিনি আরো জানাচ্ছেন এই নেহাতই কম বয়সী আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা সে দেশে ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে।

HMVP সংক্রমণের লক্ষণগুলি কি কি?

ফি বছরের পাত্তা না পাওয়া অতি সাধারণ ফ্লু-এর মতই কার্যত HMVP র রোগ লক্ষণ - ১) নাক দিয়ে জল পড়া, ২) গলা বসে যাওয়া, ৩) কাশি, ৪) হ্রস্ব শ্বাস, ৫) জ্বর, এবং ৬)  গা-ময় আমবাত ইত্যাদি। মনে রাখা ভাল সাধারণ ভাবে ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং শরীরে একবার এই ভাইরাসের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দিন তিনেক, খুব বেশি হলে হপ্তা খানেক পার হতে না হতেই নিজে থেকেই এরা কেটে পড়ে; পরিভাষায় যে ঘটনার গালভরা নাম শেডিং। তবে সমস্যা হয় তাদের নিয়েই বেশি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা - বিভিন্ন অটো-ইমিউনড্ ডিজিজ, হাঁপানি, সিওপিডি বা এতদৃশ নানা রোগের কারনে সাধারণের তুলনায় অনেক খানি কম। এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর ওপরের অংশের (Upper Respiratory Tract) থেকে খুব দ্রুত নিচের অংশে ফুসফুসের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। একমাত্র সেক্ষেত্রেই নিউমোনিয়া জাতীয় লক্ষণ রোগীকে বেশ কাবু করে ফেলতে পারে। তবে এ রোগে মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

HMPV ছড়ায় কোভিড বা ফ্লু জাতীয় আর পাঁচটা ভাইরাসের মতই মূলতঃ আক্রান্তের হাঁচি কাশি বা তার ব্যবহৃত পোশাক আশাক, থালা বাটি এসব থেকেই। ফলে খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আর মাস্ক পরার অভ্যাসই এ রোগের সংক্রমণ অনেকাংশে রুখে দিতে পারে। আর তাছাড়া এখন কলকাতার বাতাসের গুণগত মানের যে রকম বেহাল দশা, তাতে ঘরের বাইরে মাস্ক পরে বেরোনোটা এমনিতেই খুব দরকারি একটা অভ্যাস।

HMPV র চিকিৎসার তত্বতালাশ

HMPV যেহেতু ভাইরাস ঘটিত অসুখ এবং এই ধরনের ভাইরাস নাশক কোনো ওষুধের অথবা এ রোগের কোনো টিকার বড় একটা খোঁজ খবর যেহেতু এখনও আমাদের জানা নেই, তাই অকারণ এ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও বিশেষ লাভ নেই। বরং তার থেকে অনেক জরুরি পর্যাপ্ত জল খাওয়া। প্রয়োজনে জ্বর বা ব্যথার জন্য চলতে পারে প্যারাসেটামল গোত্রের কিছু ওষুধ। অনেকে মজা করে ব'লে থাকেন ওষুধ না খেলে এ রোগ সারতে সাত সাতটা দিন লেগে যেতে পারে, তবে কিনা ওষুধ খেলে মাত্র এক হপ্তাতেই এ অসুখ ভ্যানিশ। সেই কারনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অসুখকে এখনই তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ।

তাই, বাজারি সংবাদমাধ্যমগুলির হলুদ সাংবাদিকতায় অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না। তবে কারো ফ্লু জাতীয় লক্ষণ দেখা দিলে, এবং সে যদি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু বা ৬৫ বছরের বেশী বয়সী বৃদ্ধ হয়ে থাকে অথবা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি তার দুর্বল থেকে থাকে তবে তেমন আক্রান্তদের অবশ্যই কড়া নজরদারিতে রাখুন।  কিন্তু দয়া করে মিথ্যা আতঙ্ক ছড়াবেন না। নতুন বছরে সকলে সুস্থ থাকুন। সব্বাইকে নিয়ে ভালো থাকুন আপনারা।

Your Opinion

We hate spam as much as you do