তবে এই নির্দেশ নিয়ে অনেক প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, স্কুল ছুটির পরে, স্কুলের বাইরে, পড়ুয়ারা কী করবে, কোথায় যাবে, কোন অনুষ্ঠানে থাকবে, তা নিয়ে কী ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে সরকার?
পড়ুয়াদের প্রতিবাদ রুখতে স্কুলে স্কুলে চিঠি, শিক্ষক সংগঠন বলছে, 'বিচার চাই'
23rd August 2024
আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া তরুণী পড়ুয়া-চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা রাজ্য তোলপাড়। এই নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে প্রথম থেকেই চিকিৎসকদের পাশাপাশি সামিল হয়েছেন সমস্ত স্তরের সাধারণ মানুষ। প্রতিটি পেশার লোকজন পথে নেমেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এমনকি বাদ যায়নি স্কুলের পড়ুয়ারাও। শহর কলকাতায় এবং কলকাতার বাইরেও, একাধিক জায়গায় দেখা গেছে, স্কুলের ইউনিফর্ম পরে দল বেঁধে পথে নেমেছে পড়ুয়ারা। গলা তুলে স্লোগান দিয়েছে, বিচার চেয়েছে আরজি কর কাণ্ডের।
এই নিয়েই এবার ক্ষুব্ধ নবান্ন। আরজি কর হোক বা অন্য কোনও ঘটনার প্রতিবাদ, মিছিল, রাস্তা অবরোধ-সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্কুল পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ নিয়ে এবার মুখ্যসচিবের কড়া নির্দেশ পৌঁছল জেলাশাসকদের দফতরে। তাতে লেখা রয়েছে, স্কুল পড়ুয়াদের এসব কর্মসূচি কোনওমতেই অনুমোদনযোগ্য নয়।
মুখ্যসচিব নির্দেশে আরও বলেন, ‘স্কুল পড়ুয়াদের রাস্তা অবরোধ-সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটা আমাদের নজরে এসেছে। এই কাজ কোনও ভাবেই করা যাবে না।'
এই নির্দেশিকার পরে জেলাশাসকের তরফে ডিস্ট্রিক্ট ইনস্পেক্টরদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলিতে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এবং সেই মোতাবেক বেশ কিছু স্কুলে ডিআই-এর চিঠিও পৌঁছেছে প্রতিবাদ-মিছিলে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করার কথা বলে।
তবে এই নির্দেশ নিয়ে অনেক প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, স্কুল ছুটির পরে, স্কুলের বাইরে, পড়ুয়ারা কী করবে, কোথায় যাবে, কোন অনুষ্ঠানে থাকবে, তা নিয়ে কী ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে সরকার?
এই কথাই বলছেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতিও। তিনি এই নির্দেশের প্রতিবাদ করে বলেন, 'আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মত্যুতে সারা রাজ্য, দেশ তথা বিশ্বে একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনডিউটি অবস্থায় মর্মান্তিক ধর্ষণ এবং খুন, এক জঘন্যতম কাজ হয়েছে। এই জন্য আমাদের রাজ্যের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও একটা আবেগ তৈরি হয়েছে। এই জন্য কোথাও কোথাও তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই পথে নেমে প্রতিবাদ করছে।'
এর সঙ্গে রাজ্যের স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকরা বা অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেভাবে জড়িত হচ্ছেন না বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'আমরা বরং বারবার বুঝিয়েছি ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু তারাও নাছোড়বান্দা। এবং স্কুল ছুটির পরে কে কোথায় কী করবে, কোন আন্দোলনে নামবে, তার দায় বিদ্যালয়ের উপর বর্তায় না বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর পড়ে না। এই দায় বর্তায় রাজ্যের আইনশঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের উপর। অভিভাবকদেরও দায়িত্ব এটা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা স্কুলের ভিতরে এমন কিছু ঘটলে তাদের নিবত্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তবু অনেক সময়েই তারা শিক্ষকদের কথা শোনে না। তারা অবাধ্য হয়ে বাইরে বেরিয়ে প্রতিবাদ করে, আন্দোলন করে। এতে বিদ্যালয়ের কী করার থাকতে পারে? অনেক সময় দেখতে পাচ্ছি অভিভাবকদের প্রচ্ছন্ন সম্মতি রয়েছে। এই আবেগের বশবর্তী হয়ে ছাত্রছাত্রীরা কিছু করলে তার দায় প্রধান শিক্ষক নেবেন-- এমন নির্দেশ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে লেখা ঠিক হচ্ছে না।'
তাঁর কথায়, 'আমরা ডিআই সাহেবকে অনুরোধ করছি এই নির্দেশ প্রত্যাহারের। স্কুল চলাকালীন তারা যাতে না যেতে পারে, সে জন্য আমরা তো আর পুলিশও ডাকতে পারি না। সেটা আপনারা বোঝান, উপর থেকে বার্তা দিন, একটা প্ল্যান তৈরি করুন, সঠিক বিচার দিন। তাহলে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন সেভাবে দানা বাঁধবে না। কিন্তু যখন বাঁধ ভাঙে তখন কোনওরকমে বালির বাঁধ দিলে ঘরবাড়ি, গাছপালা রক্ষা পায় না।'
সব শেষে তিনি বলেন, 'আমরা রাজ্য সরকার, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে অনুরোধ করব, যাতে দ্রুত ওই মর্মান্তিক ঘটনা, যা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, তার যাতে সঠিক বিচার হয়। আমরা, শিক্ষক সমাজও সেই বিচারের দাবিতে অপেক্ষা করে আছি। উই ডিমান্ড জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।'
We hate spam as much as you do