Tranding

07:20 PM - 01 Dec 2025

Home / Opinion / পাহাড় বাঁচাতে অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত গ্রামে 'প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও' মঞ্চের উদ্যোগে হয়ে গেল দুইদিনব্যাপি জনচেতনা র‍্যালি।

পাহাড় বাঁচাতে অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত গ্রামে 'প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও' মঞ্চের উদ্যোগে হয়ে গেল দুইদিনব্যাপি জনচেতনা র‍্যালি।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ঠুড়্গা পাম্পড পাওয়ার স্টোরেজ প্রকল্পের বিরোধীতার মধ্য দিয়ে চিরবঞ্চিত চিরশোষিত জঙ্গলমহলবাসীর যে নবপর্যায়ের অধিকার আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল তা তিনবছর পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড় ও তার বাইরের বিস্তীর্ণ পশ্চিমবঙ্গীয় বনাঞ্চলে বহুমুখী বঞ্চনা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটা ঝোড়ো হাওয়াই তুলে দিয়েছে বলা যায়।

পাহাড় বাঁচাতে অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত গ্রামে 'প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও' মঞ্চের উদ্যোগে হয়ে গেল দুইদিনব্যাপি জনচেতনা র‍্যালি।

পাহাড় বাঁচাতে অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত গ্রামে 'প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও' মঞ্চের উদ্যোগে হয়ে গেল দুইদিনব্যাপি জনচেতনা র‍্যালি।

একমাসের বেশি সময় ধরে অযোধ্যা পাহাড় (আয়োদিয়া বুরু)-এর ৬২টি গ্রামে একনাগাড়ে জনচেতনা বৈঠক চলছিল। ধর্ম কিংবা আদিবাসী জাতিগুলির মধ্যেকার নানারকম বিভাজন ও মতানৈক্য ছাপিয়ে সর্বত্র প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধি সদস্যরা তুলে ধরছিলেন পাহাড়ে সরকার-কোম্পানি ও অন্যান্য মুনাফাখোর ষড়যন্ত্রীদের আগ্রাসন থেকে পাহাড়ের চিরকালীন মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতিকে আগলে রাখার আহ্বান। সেই আহ্বান সাঁওতালি-মুন্ডারি-পাহাড়ি বাংলা ভাষার ভেলায় চেপে তৈরি করছিল আহ্বায়ক ও আহূতদের মধ্যে এক স্বতস্ফুর্ত কথপোকথন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ঠুড়্গা পাম্পড পাওয়ার স্টোরেজ প্রকল্পের বিরোধীতার মধ্য দিয়ে চিরবঞ্চিত চিরশোষিত জঙ্গলমহলবাসীর যে নবপর্যায়ের অধিকার আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল তা তিনবছর পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড় ও তার বাইরের বিস্তীর্ণ পশ্চিমবঙ্গীয় বনাঞ্চলে বহুমুখী বঞ্চনা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটা ঝোড়ো হাওয়াই তুলে দিয়েছে বলা যায়। যে কারণে জনচেতনা বৈঠকগুলিতে ঠুড়্গা প্রকল্পের বিরোধিতা ছাপিয়ে বান্দু, কাঁঠালজলের সম্ভাব্য প্রকল্প, এমনকি, বীরবুরু (পাহাড়-জঙ্গল)কে ধ্বংস করতে পারে এমন যেকোনো ধরণের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আজ পাহাড়বাসী একজোট হবার আশা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি শুধু সরকার-কোম্পানির 'শিল্পোন্নয়ন' বিষয়ক আগ্রাসনেই আটকে নেই; বন-পাহাড়ের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপরিবহনের প্রতি— কী বৃটিশ, কী স্বাধীন ভারতের সরকার— যে চিরাচরিত অবহেলা দেখিয়ে এসেছেন এবং মানুষগুলির যুগলালিত প্রাণ-প্রকৃতি সংবেদী গভীর সংস্কৃতির উপর যথেচ্ছ আগ্রাসন চালিয়ে আসছেন, তা রুখে দেবার দাবীও উঠছে সজোরে, সশব্দে, আত্মবিশ্বাসের সাথে। জঙ্গলবাসী মানুষ শুধু অধিকারের ভাষায় কথা বলেই ক্ষান্ত নন, আওয়াজ উঠছে আবিশ্ব জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষিতে বনানী ও তার সন্তানদের ট্যুরিজম বাণিজ্যের বিষ থেকে রক্ষা করার শপথ। হাইকোর্টে সরকারপক্ষের মোক্তাররা যেখানে আদিবাসী মানুষের কৃষির অধিকার নিয়ে কটূ প্রশ্ন তুলছেন, সেখানে প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ দেশজোড়া কৃষিজীবী মানুষের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

ঠুড়্গা প্রকল্পবিরোধী আন্দোলন প্রকৃতার্থে আয়োদিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন হয়ে উঠছে ভিতর থেকে। এই ভিতর থেকে ফুটে ওঠার সুবাস পাহাড়ের প্রান্তে-উপান্তে পৌঁছে দিতেই গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর পাহাড়ব্যাপি ৬২টি গ্রামে জনসচেতনতা র‍্যালির ডাক দিয়েছিল প্র.বাঁ.আ.বাঁ মঞ্চ। জানা যাচ্ছে, পাহাড়ে করোনার প্রভাব তিলমাত্র না থাকলেও করোনা বিধি মেনে চলার ঘোষণাসহ র‍্যালির বিজ্ঞপ্তি ও যাত্রাপথ যথানিয়মে প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছিল মঞ্চ। তাও র‍্যালির আগেরদিন পুরুলিয়া জেলাপুলিশের অনধিকার তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতন। পুরুলিয়া টাউন ও অন্যান্য ব্লক থেকে যে সমস্ত মঞ্চ-প্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদের অনেককে নানাভাবে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে পুলিশ, ভয় দেখিয়ে হুমকি দিয়ে। র‍্যালি বন্ধ করতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আইন-বিরুদ্ধ পুলিশি চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মঞ্চের পাহাড়-ভিত্তিক সংগঠকরা। র‍্যালি শুরুর প্রাকমূহুর্ত পর্যন্ত এই টানাপোড়েন জারি রাখে বাঘমুন্ডির পুলিশ। কিন্তু সমস্ত দ্বিধা ও ভয় উড়িয়ে দিয়ে বিশাল র‍্যালি বের হয় হিলটপ থেকে। প্রথমদিন ২৭ তারিখ পাহাড়ের পশ্চিমপ্রান্তে খয়রাবেড়ার মুখ পর্যন্ত ৩০টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে র‍্যালি চলতে থাকে। ১৫টি জনবহুল স্থানে পথসভা হয়। তেলিয়াভাসা গ্রামের বাসিন্দারা সকলে মিলে ব্যবস্থা করেন র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের দ্বিপ্রাহরিক আহারাদির৷ রাত সাড়ে নটায় শেষ হয় প্রথমদিনের কর্মসূচী।
পরেরদিন অর্থাৎ ২৮ তারিখও উজ্জীবিত র‍্যালি বের হয় তেলিয়াভাসা গ্রাম থেকে পাহাড়ের পুবদিকের বাকি ৩২টি গ্রামে। সাপারামবেড়ার গ্রামবাসীরা আহারাদির ব্যবস্থা করেন।

দুইদিনই দাবীসম্বলিত ব্যানার পোস্টারে সজ্জিত ট্যাবলো ও মিছিল দেখতে এবং অংশগ্রহণ করতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। তাঁরা মন দিয়ে ২০০৬ সালের বনাধিকার স্বীকার আইনে সংরক্ষিত বন-পাহাড়ের বাসিন্দাদের ব্যক্তি ও সমষ্টিগত অধিকারগুলি সম্বন্ধে বক্তৃতা মনযোগ দিয়ে শোনেন। নিজেদের মতামতও তুলে ধরেন অনেকে। র‍্যালি এগোতে দেরি হলেও কয়েকটি গ্রামের মানুষ রাত পর্যন্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। র‍্যালির সাথেই প্রত্যেক গ্রামে প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের পতাকা উত্তোলন হয়। র‍্যালির আবহ সঙ্গীত ছিল ওড়িশার ভগদান দাস মাঝির আন্দোলনের গান 'গাঁও ছোড়ব নহি, জঙ্গল ছোড়ব নহি…', সঙ্গে ছিল ধামসা মাদলের সুরতালছন্দ।

দ্বিতীয় দিন সরকার-প্রশাসন র‍্যালিকে রাজনৈতিক দলের কোঁচড়ে টানতে নতুন এক চাল দেয়। সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের জনৈক উপদেষ্টা নিজের আদিবাসী পরিচয় কাজে লাগিয়ে, 'ব্যক্তি' হিসেবে উপস্থিত হন র‍্যালিতে। তাঁর চাহিদামতো কমলাবহাল গ্রামে মঞ্চের তরফে তাঁকে বক্তৃতা করতেও দেওয়া হয়৷ কিন্তু কিছু পরে তাঁর সমাজমাধ্যমে করা মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায় অভিসন্ধি। তিনি নাকি আন্দোলনকারী পাহাড়বাসীকে সরকারি বার্তা দিতে এবং সরকারের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিতে এসেছিলেন। সমগ্র পাহাড়বাসী এবং আন্দোলনের সংহতিতে থাকা মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়না, কেন রবাহুত মধ্যস্থতাকারীকে সাঁওতালি, মুন্ডারি ও বাংলা— তিন ভাষাতেই দালাল নামে অভিহিত করা হয়।

প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধিরা জানান,

" তাঁরা পাহাড় তথা জঙ্গলমহলে উঠতে থাকা এই আন্দোলনের তরঙ্গকে কোনো রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে দেবেন না। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ হাইকোর্টে অযোধ্যা মামলার শুনানিতে এই জনচেতনা র‍্যালির ঢেউ এসে লাগুক, অযোদিয়া বুরু বাঁচাও সংহতিমঞ্চ এই আশাই করে। এবং এতবড় ঘটনাতেও বাংলার গণমাধ্যমের 'সচেতন' নীরবতায় আশ্চর্য না হয়ে আপনাদের প্রত্যেককে এই প্রতিবেদনটি দিকে দিকে ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানায়। যেভাবে আন্দোলনের অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আসছেন, সেভাবেই প্রচারে অংশ নিন সাথী "

Your Opinion

We hate spam as much as you do