বাঙালির আর্থ- সামাজিক বনিয়াদ তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে বিধানচন্দ্র রায় কতোখানি যত্নবান ছিলেন তা তাঁর জীবন থেকে বোঝা যায়।দেশভাগ জনিত অর্থনৈতিক অস্থিরতির জেরে কর্মমুখীনতা ঘিরে বাঙালির যে অতীতের অহংকার নিয়ে থাকলে চলবে না- এটা বিধান রায় উপলব্ধি করেছিলেন।
বিধানচন্দ্র রায়: এক বর্ণময় রাজনীতিক
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় যে সময়টায় পশ্চিবঙ্গের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন , সেই সময়ের বাংলা তে সবথেকে বড় সমস্যা ছিল দেশভাগ জনিত পরিস্থিতি।বিধানবাবু উচ্চবর্ণের হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় দেশভাগ কে সমর্থন করেছিলেন।বাংলা অবিভক্ত থাকলে বাঙালি হিন্দুর বাংলার উপর একচ্ছত্র শাসন কায়েম করবার অধিকার বজায় থাকত কি না- সেই বিতর্কে প্রবেশ না করেই বলতে হয়, পূর্ববঙ্গে বাঙালি হিন্দু সমাজের জমিদারদের অনেককেই নিজের প্রথম মন্ত্রীসভাতে নিয়ে ডাঃ রায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কাদের প্রতিনিধি।প্রফুল্লচন্দ্র সেনের মতো নিবেদিতপ্রাণ কংগ্রেস কর্মীর প্রতি বিধানবাবুর আস্থা ছিল।প্রথম সাধারণ নির্বাচনে(১৯৫২) প্রফুল্লচন্দ্র হেরে যান।তা স্বত্ত্বেও বিধান পরিষদ থেকে জিতিয়ে প্রফুল্লবাবুকে মন্ত্রীসভায় ফিরিয়ে আনতে বিধানবাবু উদ্যোগী হয়েছিলেন।
এই উদ্যোগের প্রধান কারণ ছিল; দীর্ঘকালের নিবেদিত প্রাণ কংগ্রেস কর্মী হলেও উচ্চ অভিজাত সমাজ থেকে উঠে আসা বিধানবাবুর কিন্তু কংগ্রেস দলের ভিতরে তেমন একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল না।তাই কংগ্রেস যাতে কোনো অবস্থায় তাঁকে ক্যাবিনেটে সমস্যায় না ফেলে তার জন্যেই তিনি নির্বাচিত সরকার তৈরির সময়ে কংগ্রেস কর্মীদের প্রত্যেকেই প্রায় নাম ধরে চেনা প্রফুল্লচন্দ্র সেন কে যেকোনো মূল্যেই মন্ত্রীসভায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন।
প্রফুল্লচন্দ্র সেন কিন্তু কখনোই পিছনের দরজা দিয়ে আবার মন্ত্রীসভায় ঢুকতে রাজি ছিলেন না।অপরপক্ষে অতুল্য ঘোষের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস কোনোটাই সেভাবে দৃঢ় ছিল না ডাঃ রায়ের।প্রফুল্লচন্দ্রের ধারণা ছিল; ডাঃ রায় হয়তো এটাই ভেবেছিলেন যে, প্রফুল্লচন্দ্র থেকে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে হারানোর পিছনে অতুল্য ঘোষের অদৃশ্য হাত থাকলেও থাকতে পারে।তা ছাড়া আর ও একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল; পন্ডিত জওহরলাল নেহরু কোনো অবস্থাতেই পছন্দ করতেন না অতুল্য ঘোষকে। ডাঃ রায়ের এই অতুল্য ঘোষের প্রতি অপছন্দের পিছনে পন্ডিত নেহরুর প্রভাব একটা বড়ো ভূমিকা পালন করে থাকবে-- এমনটাই অনুমান করা যায়।
নিজের প্রবল আপত্তি স্বত্ত্বেও ডাঃ রায়ের একান্ত অনুরোধ রাখতেই বিধান পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নির্বাচিত মন্ত্রীসভাতে আসতে হয়েছিল প্রফুল্লচন্দ্র সেন কে।অর্থ- স্বরাষ্ট্রের থেকেও দেশভাগের ক্ষতে দীর্ণ পশ্চিমবঙ্গে খাদ্যের সমস্যাটা অনেক বেশি দগদগে-- এটা '৪৯ সালের ২৭ শে এপ্রিলের নারী শহিদদের রক্তের দাগ ধরে বুঝতে বাধ্য হয়েছিলেন বিধানবাবু।তাই কালীপদ মুখোপাধ্যায়, কিরণশঙ্কর রায় থেকেও তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন।আর সেই কারণেই সিভিল সাপ্লাইয়ের মতো( সেই সময়ে খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর কে এই নামেই সম্বোধিত করা হতো) দপ্তরের দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্র সেনের হাতেই অর্পণ করেছিলেন।
সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে ব্রাহ্ম বিধানবাবু অভিজাত, উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের স্বার্থের উর্ধে কখনো উঠতে পারেন নি এটাও যেমন ঠিক , তেমনিই যখন নিজে প্রশাসক হয়েছেন , তখন সাম্প্রদায়িক মানুষদের কি ক্যাবিনেটে , কি প্রশাসনে বেশি মাথা তুলতে দেন নি।'৪৬ সালের দাঙ্গার সময়কালে পরিকল্পিত ভাবে মুসলমান হত্যাকারী হিন্দু মহাসভার গোপাল মুখার্জীর সঙ্গে বিধানবাবুর সম্পর্ক সুবিদিত।পরবর্তীতে বৌবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ডাঃ রায়কে জেতাতে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে এই গোপাল মুখার্জী বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।এমন কি বিধানবাবুর জীবনের শেষ নির্বাচনে (১৯৬২) পোস্টাল ব্যালটের সাহায্যে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির মহঃ ইসমাইলের হাতে নিশ্চিত পরাজয় ঠেকাতে এই গোপাল মুখার্জীর হাত যশের কথা এখন গোপন সত্য।
এই বিধানচন্দ্র রায়ই কিন্তু কালীপদ মুখোপাধ্যায়, কিরণশঙ্কর রায়দের মুসলমান বিদ্বেষী মানসিকতাকে তেমন ভাবে কখনো প্রশ্রয় দেন নি। বিধানচন্দ্রের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কিত হলেও নিজের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টিকে তিনি রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন- একথাও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না।হিন্দু স্বার্থে দেশভাগ তিনি চেয়েছিলেন।বাংলা অখন্ড থাকলে মুসলমান সমাজের কাছে বর্ণহিন্দু- অভিজাতদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে না- এটা তিনি বিশ্বাস করতেন।আর সেই বিশ্বাস থেকেই অতুল্য ঘোষ যেমন দেশভাগ চেয়ে পুস্তিকা লিখেছিলেন, বিধানবাবু ততোখানি উগ্রতার প্রকাশ প্রকাশ্যে করেন নি।তবে মুসলমান সমাজ সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মানসিকতাই যে প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরুর বিদেশ সফরের সুযোগ নিয়ে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে পুলিশমন্ত্রী কালিপদ মুখোপাধ্যায় এবং কিরণশঙ্কর রায়ের মুসলমানদের নদীর চর থেকে মেরে ধরে তাড়ানো মৌখিক আদেশের পিছনে একটা বড়ো ভূমিকা পালন করেছিল - তা বলার অপেক্ষা রাখে না।কালীপদ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘজীবী হলে দেশভাগ জনিত কারণে যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সেই সময়ের বাংলায় তৈরি হয়েছিল, তা কতোখানি রাষ্ট্রীয় মদত পেত - সেই হাইপথিটিকাল আলোচনায় না গিয়েও বলতে হয়, বিধানবাবুর নিজের পছন্দ অপছন্দের বিষয় যাই হোক না কেন, পুলিশ- প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ করবার যে প্রয়াস তাঁর পুলিশ মন্ত্রী কালিপদবাবু ধীরে ধীরে নিতে শুরু করেছিলেন, সেখানে অচিরেই বিধান রায়ের সঙ্গে পুলিশমন্ত্রীর সংঘাত তৈরি হতো।বিষয়টা অনেকটাই পন্ডিত নেহরুর সঙ্গে তাঁর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের হিন্দু- মুসলমান সম্পর্ক ঘিরে সর্দাল প্যাটেলের উগ্র হিন্দুত্বের প্রতি সহানুভূতিজনিত সংঘাত পর্যায়ের মতো। সোমনাথ মন্দির পুনর্নিমাণ ঘিরে নেহরু - প্যাটেল সংঘাত একটা বল্গাহীন যখন করে তুলছে- সেইরকম একটা সময়েই কিছুটা হঠাৎ ই সর্দার প্যাটেল প্রয়াত হন।তিনি জীবিত থাকলে নেহরু- প্যাটেল সংঘাত একটা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি করত বলে অনুমান করা যায়।
অনেকটা একই রকম পরিস্থিতি ঘটেছিল কালীপদ মুখোপাধ্যায়, কিরণশঙ্কর রায়ের পর পর মৃত্যুকে ঘিরেও।বিধান রায়ের সম্প্রদায়গত অবস্থান কোনো অংশেই পন্ডিত নেহরুর আত্মনিবেদিত ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে তুলনীয় নয়।তা স্বত্ত্বেও বলতে ই হয় ডাঃ রায় প্রশাসক হিশেবে আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক অবস্থান কখনো ই নেন নি।বলা যেতে পারে মুসলমান সমাজ সম্পর্কে কিছুটা কৌশলী মানসিকতা নিয়েই তিনি চলেছিলেন।জীবনের শেষ নির্বাচনে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী মহঃ ইসমাইলের কাছে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝে যে মুসলমান সমাজের থেকে একটু দূরে দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন বিধান রায়, সেই মানুষটিই কলকাতার ধর্মতলাতে টিপু সুলতানের মসজিদে ঈদের নামাজে ফেজ টুপি পড়ে ও উপস্থিত হয়েছিলেন।কারণ, তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র বৌবাজারে একটা বড় অংশের মুসলমান ভোটার ছিলেন।
মহঃ ইসমাইলকে যেভাবে তাঁর পেশা নিয়ে কংগ্রেস দল বিধানবাবুর জীবনের শেষ নির্বাচনে কার্যত খেউড় করেছিল উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মেট্রপলিটন মানসিকতার অন্যতম সেরা প্রতিনিধি হিশেবে সেদিন কিন্তু কোনো প্রতিবাদ বিধান রায় তাঁর দলীয় স্তরে করেন নি। সাতগাছিয়াতে একটা সময়ে জ্যোতি বসুর মতো জাঁদরেল নেতার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন কংগ্রেসের দীনবন্ধু বৈরাগী।তাঁর পেশা বা সামাজিক অবস্থান ঘিরে কখনো বামপন্থীরা কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে নি।অথচ মহঃ ইসমাইল যেহেতু পেশায় ট্রাম শ্রমিক ছিলেন, তাই ট্রাম কনট্রাকটারের সঙ্গে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের ভোটের লড়াই ঘিরে যে ব্যক্তি আক্রমণের রাজনেতিক আবহ তৈরি হয়েছিল তা সরোজ চক্রবর্তী নগেন্দ্রকুমার গুহরায়ের মতো বিধানবাবুর জীবনীকারেরাও এড়িয়ে যেতে পারেন নি।
বিধানবাবু সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে মন্ত্রী করেছিলেন নিজের মন্ত্রীসভায় , নাকি নিজের রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের প্রতি একধরণের দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছিলেন দেশবন্ধু কন্যা অপর্ণা দেবীর পুত্র কে মন্ত্রী করে- এ নিয়ে সম্যক চর্চা কখনোই হয় নি। স্নেহের মানুকে মন্ত্রী করে যে বিপাকে বিধান রায়কে পড়তে হয়েছিল, তেমনটা বোধহয় তাঁকে তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো পড়তে হয় নি।
বিধানবাবুর মন্ত্রীসভাতে সিদ্ধার্থশঙ্কর কি বিধানচন্দ্রের মৃত্যুর পর তিনি ( সিদ্ধার্থশঙ্কর) যাতে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন- তার সব হালহকিৎ তৈরি করতেই শামিল হয়েছিলেন? মন্ত্রী হয়েই সিদ্ধার্থশঙ্কর বিবাদ তৈরি করলেন বিধানচন্দ্রের সবথেকে আস্থাভাজন মন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সঙ্গে। খবরদারি শুরু করেদিলেন প্রফুল্লচন্দ্রের সিভিল সাপ্লাই দপ্তরের উপরে।বিরক্ত হতে শুরু করলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন।সেই বিরক্তিকে পাত্তা দিলেন না মানু রায়।তাঁর ধারণা , যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী বিধানবাবু স্বয়ং তাঁকে( মানু বাবু) দেশবন্ধুর নাতি হিশেবে বিশেষ স্নেহ করে থাকেন, তাই প্রফুল্লবাবুর উপরেই রুষ্ট হবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রফুল্লবাবুর সততা ঘিরে সিদ্ধার্থশঙ্কর তখন যে বিধান রায়ের কান ভাঙাতে শুরু করেছিলেন, অনুমান হয় এই কাজে সিদ্ধার্থশঙ্কর কে অনেকখানি আড়াল থেকে সাহায্য করছিলেন অতুল্য ঘোষ।কারণ, আভা মাইতি এবং নির্মলেন্দু দে( বদুবাবু) কে ঘিরে প্রফুল্লচন্দ্রের সঙ্গে ধীরে ধীরে একটা ঠান্ডা সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করতে অতুল্য ঘোষ ও কোমর বেঁধেনেমে পড়েছিলেন। তাঁর ( অতুল্য) প্রতি পন্ডিত নেহরুর চরম বিরক্তির জেরে বিধানচন্দ্রের অপছন্দের জেরে কংগ্রেস দলের ভিতরে নানা সমীকরণ তৈরি করাতে অতুল্য ঘোষ তখন ধীরে ধীরে গোপনে তৎপরতা বাড়াতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
সিদ্ধার্থশঙ্কর বিধান রায়ের মন্ত্রীসভার ভিতরে ধীরে ধীরে মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার জেরে প্রফুল্লচন্দ্রের গুরুত্ববৃদ্ধিকে নিজের উন্নতির পথে কাঁটা বলে মনে করতে থাকলেন।তাই সুপার চিফ মিনিস্টার হিশেবে নিজেকে মেলে ধরতে উৎসাহী হলেন।বিধানবাবুর কাছে সব দপ্তরের ভিতরে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশে একজন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী নিয়োগের পরামর্শ দিলেন।বলাবাহুল্য , সেইপদে নিজের জন্যে সুপারিশ করতেও ভুললেন না।
বিষয়টি ক্রমশঃ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করতে চলেছে বুঝেই প্রফুল্লচন্দ্র সেন পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানবাবুকে; মানুর পরামর্শ একদম অগ্রাহ্য করুন।সেই পরামর্শ মানলেন ডাঃ রায়।পরিণতিতে নিজেকে 'বিপ্লবী' প্রমাণ করতে মন্ত্রীত্ব এবং বিধায়ক পদ ছাড়লেন মানু বাবু।সেই সিদ্ধার্থশঙ্কর ই বিধান রায়ের মৃত্যুর পর কার্যত রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে লন্ডনে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে শুরু করলেন।প্রফুল্লচন্দ্রের মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে , সেই প্রফুল্লচন্দ্রের কাছেই লোক মারফত পলিটিকাল রেজারেকশন চাইলেন। প্রফুল্লচন্দ্র সেদিন বলেছিলেন; রাজনীতিতে ফিরতে হলে মানুকে আগে বলো লন্ডনের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরতে।লন্ডনে বসে তো আর বাংলার রাজনীতি করা যাবে না!
বাঙালির আর্থ- সামাজিক বনিয়াদ তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে বিধানচন্দ্র রায় কতোখানি যত্নবান ছিলেন তা তাঁর জীবন থেকে বোঝা যায়।দেশভাগ জনিত অর্থনৈতিক অস্থিরতির জেরে কর্মমুখীনতা ঘিরে বাঙালির যে অতীতের অহংকার নিয়ে থাকলে চলবে না- এটা বিধান রায় উপলব্ধি করেছিলেন।সেই উপলব্ধির স্থিতি তৈরিতে কলকাতা শহরের পানের দোকানগুলি পর্যন্ত নিজে সার্ভে করে দেখেছিলেন বাঙালির অবস্থিতির কারণে।ট্যাঙ্কি ড্রাইভারি থেকে পানের দোকান দেওয়া- এইসব কাজে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া বাঙালি যুবকদের ভিতরে তখন একটা উন্নাসিক মানসিকতা ছিল। সেই মানসিকতার বদল ঘটাতে নিজের যাবতীয় ভ্যানিটিকে অস্বীকার করে পানের দোকানগুলিতে ক্ষেত্র সমীক্ষা চালিয়ে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ পায় নি বাঙালি সমাজের যে অংশ, সেই অংশ কে কর্মমুখী করে তুলেছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়।তাঁর জীবনের প্রায় অনালোচিত এই অধ্যায় টি বর্তমান নিবন্ধকার জেনেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেনের কাছ থেকেই।
লেখকের মতামত তার নিজস্ব ও ব্যাক্তিগত
ছবির সংগ্রহ লেখকের নিজস্ব
We hate spam as much as you do