প্রাথমিক ভাবে কমিউনিস্ট দেশগুলিতেই কেবল আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলেও ক্রমে আবিশ্ব নারীদের সমানাধিকার, সমকাজে সমবেতনের অধিকার, জননগত অধিকার ইত্যাদি নানা অধিকারের দাবিতে দেশে দেশে নারীবাদী আন্দোলনগুলি জোরালো হতে শুরু করে এবং বহুক্ষেত্রেই এই আন্দোলনগুলির সঙ্গে কমিউনিস্টরা যুক্ত হয়। ফলে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে ৮ মার্চ তারিখটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করা শুরু হয়।
ছবি- পেট্রোগার্ডের রাস্তায় মহিলা টেক্সটাইল শ্রমিকদের রুটি ও শান্তির দাবিতে অভূতপূর্ব মিছিলের
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস
বাসব বসাক
৮ই মার্চ ২০২৩
প্রথমবার নারী দিবস পালিত হয়েছিল আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে বিশিষ্ট সমাজকর্মী থেরেজা ম্যালকিয়েলের প্রস্তাবে সে দেশের সোসালিস্ট পার্টির উদ্যোগে ১৯০৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটিতে।
১৯১০ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক সমাজবাদী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কোপেনহেগেনে।সেখানে ১৭ টি দেশের শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন এবং জার্মান প্রতিনিধি ক্লারা জেটকিন ও আরও কয়েকজন নারীর ভোটাধিকার সহ অন্যান্য অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট দিনকে নারী দিবস হিসাবে উদযাপনের প্রস্তাব রাখেন। অব্যবহিত পরের বছর, ১৯১১ র ১৯ মার্চ দিনটি ইউরোপের একাধিক দেশে নারী দিবস হিসাবে পালিত হয় এবং দশ লক্ষাধিক মহিলা তাদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হন। কেবল অস্ট্রিয়া আর হাঙ্গেরিতেই অন্তত ৩০০ বিক্ষোভ সভা হতে দেখা যায়। ভিয়েনার প্রাণকেন্দ্রে সুবিখ্যাত রিংরোডে মহিলারা প্যারি কমিউনের শহিদদের সম্মান জানিয়ে ব্যানার হাতে মিছিল করেন। ১৯১৪ সালে প্রথমবার ৮ মার্চ (সম্ভবত রবিবার হওয়ায়) জার্মানিতে মহিলাদের ভোটাধিকারের দাবিতে দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই লড়াইয়ের ফলশ্রুতি জার্মান মহিলারা ভোটাধিকার পান ১৯১৮ সালে। ইংল্যান্ডেও সে সময় ভোটাধিকার ও সমানাধিকারের দাবিতে মহিলারা একটি মহামিছিলের আয়োজন করেন। স্ট্যাফালগার স্কোয়ারে বক্তৃতা দিতে যাওয়ার পথে চারিংক্রস স্টেশনে গ্রেপ্তার হন প্রখ্যাত সমাজবাদী নেত্রী সিলভিয়া প্যানখ্রুস্ট।
অন্যদিকে ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ (পুরানো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার পেট্রোগার্ড শহরে বয়ন শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নারী শ্রমিকরা সকলের জন্য রুটি ও শান্তির দাবিতে এবং জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব আন্দোলনের সূচনা করে যা ক্রমশঃ আগুনের মত গোটা রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পুরুষ শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে শামিল হয়। পেট্রোগার্ডের মহিলা টেক্সটাইল শ্রমিকদের এই ঐতিহাসিক আন্দোলনই ক্রমে রাশিয়া জুড়ে জ্বালে বিপ্লবের অগ্নিশিখা। পতন ঘটায় জারতন্ত্রের।
পরবর্তীকালে রাশিয়ায় নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন স্থাপিত হলে লেনিনের নির্দেশে ৮ মার্চ দিনটিকে মহাসমারোহে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস হিসাবে পালন করা শুরু হয়।
প্রাথমিক ভাবে কমিউনিস্ট দেশগুলিতেই কেবল আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলেও ক্রমে আবিশ্ব নারীদের সমানাধিকার, সমকাজে সমবেতনের অধিকার, জননগত অধিকার ইত্যাদি নানা অধিকারের দাবিতে দেশে দেশে নারীবাদী আন্দোলনগুলি জোরালো হতে শুরু করে এবং বহুক্ষেত্রেই এই আন্দোলনগুলির সঙ্গে কমিউনিস্টরা যুক্ত হয়। ফলে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে ৮ মার্চ তারিখটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করা শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে আছে দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম ও রক্তক্ষরণের ইতিহাস। তাই অনুগ্রহ করে Happy Women's Day জাতীয় লেখা লিখবেন না। লড়াই শেষ হয় নি। বরং আরও কঠিন হয়েছে। আসুন এমন একটা পৃথিবী নির্মান করার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করি যেখানে নারীরা থাকবে জুড়ে পৃথিবীর অর্ধেক আকাশ।
We hate spam as much as you do